কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ফের গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের বিপুল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। গরু পাচার মামলায় দু’বছরের বেশি সময় জেলে কাটানোর পরে জামিনে মুক্ত তৃণমূলের জেলা সভাপতি যখন ধীরে ধীরে ‘স্বমহিমায়’ ময়দানে ফিরছেন, সেই সময়ে ইডি-র এই পদক্ষেপ ঘিরে ফের সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এমনকি, দলের একাংশেও অনুব্রত-বিরোধী স্বর ফের মাথাচাড়া দিতে পারে বলে আশঙ্কা জেলা তৃণমূলের কোনও কোনও নেতার।
তৃণমূল নেতাদের একাংশ বলছেন, জেল থেকে ফেরা ইস্তক অনুব্রতের ‘গুরুত্ব’ ক্রমেই বাড়ছে। ডেউচা পাঁচামি প্রস্তাবিত কয়লা খনির সমস্যা মেটাতেও তৎপর হয়েছেন তিনি। এসআরডিএ-র চেয়ারম্যান পদ ‘ফিরে’ পেয়েছেন। ঠিক সেই সময় গরু পাচার মামলা ফের সামনে এল। ইডি-র তরফে তাঁর বিপুল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দলে প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতা।
ইডি-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অনুব্রত এবং তাঁর পরিবার ও সহযোগী সংস্থার নামে থাকা ২৫ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও রয়েছে। ওই মামলায় এখনও পর্যন্ত ৫১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর। শনিবার সিউড়িতে প্রাথমিকের জেলা স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে এলেও এই বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে কিছু বলতে চাননি অনুব্রত। শনিবার লাভপুরে মহিলা তৃণমূলের সম্মেলনে এসে অনুব্রতের সম্পত্তি বাজেযাপ্ত করার প্রশ্নে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘আমি মহিলা সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছি। তাই ওই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।’’
আপাতত জামিনে মুক্ত রয়েছেন অনুব্রত। গরু পাচার মামলায় বিচারপর্ব এখনও শুরু হয়নি। ইডি ফের তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পরে বিরোধীরা বলতে শুরু করেছেন, জেলা তৃণমূলের সভাপতির প্রকৃত সম্পত্তি এখনও সামনে আসেনি। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে কি না, তা নিয়েও জোর চর্চা শুরু হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলছেন, ‘‘শহরাঞ্চলের বাজারে দেখবেন, সকালে বিক্রি না হওয়া আনাজ জল ছিটিয়ে বিকেলে বিক্রি করেন অনেকে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-ও তাই। যে লোক দু’বছর জেলে থাকলেন, তাঁর সম্পত্তি এখন উদ্ধার হল! এটা আসলে জানান দেওয়া, আমরা (ইডি) মরি নাই!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কোথাও বোঝাপড়া হয়ে গেল কি না, কে জানে। বিজেপি নিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের মুখে কোনও কথা শুনতে পাই না।’’
অন্য দিকে, বিজেপি-র বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার বক্তব্য, ‘‘ইডি নিজের কাজ করছে। তিনি একা নন, তিনি সমুদ্রের হিমশৈল মাত্র। তৃণমূল মানেই চোর। তৃণমূলে যাঁকে ধরবে ইডি-সিবিআই, তাঁর কাছেই এমন সম্পত্তি আছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)