বোলপুরে রজতপুরে নতুনগীত গ্রামে নিহত আব্দুল আলিমের বড় ছেলে ওয়াসিম আক্তারকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন সম্পর্কে দাদা, ভাই ও পাড়ার বন্ধুরা। সোমবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
বোলপুরের নতুনগীত গ্রামে শিশুপুত্র-সহ দম্পতিকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হাতুড়ে চিকিৎসক সফিকুল ইসলাম ওরফে চন্দন নিজেও আগুনে জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিশ্বস্ত সূত্রে এমনই জানা যাচ্ছে। পুলিশ যদিও প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মুখ খোলেনি।
ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম ওরফে তোতা, তাঁর স্ত্রী কেরিমা ওরফে রূপা বিবি এবং তাঁদের চার বছরের ছেলে আয়ান আক্তারকে পুড়িয়ে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে আলিমের ভ্রাতৃবধূ নাজনি নাহার বিবি ওরফের স্মৃতি এবং তাঁর ‘প্রেমিক’ সফিকুল ওরফে চন্দনকে। নিহতদের পরিবারের প্রশ্ন, এমন ঘটনা ঘটিয়ে সকলের চোখে ধুলো দিয়ে গ্রাম থেকে কী ভাবে পালালেন চন্দন! তাঁকে ঘটনার রাতে পালাতে কেউ কি সাহায্য করেছিলেন?
নিহত ব্যবসায়ীর বড় ছেলে ওয়াসিম ওরফে রাজ সোমবার দাবি করেছে, “ঘটনায় আমার কাকিমা এবং তার প্রেমিক ধরা পড়েছে ঠিকই। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি ঘটনার পর কাকিমা প্রেমিক চন্দনও আগুনে ভালো রকম জখম হয়। আমার প্রশ্ন তাকে ঐ অবস্থায় গ্রাম থেকে কে নিয়ে গেল, এই কাজে কেই বা তাকে সাহায্য করল? তার সংযোজন এই অবস্থায় সেই মুর্শিদাবাদই বা কিভাবে পৌঁছল। আমি চাই এই ঘটনার সঙ্গে যারা যারা যুক্ত তাদের প্রত্যেককে পুলিশ খুঁজে বার করুক।”
পুলিশ সূত্রের খবর, হাতুড়ে চন্দনকে সোমবার বোলপুর আদালতে তোলার কথা থাকলেও তাঁর শারীরিক অবস্থার কারণে আদালতে তোলা হয়নি। বীরভূম জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘চন্দন নিজেও অগ্নিদগ্ধ হয়ে ভাল রকম জখম হয়েছে। কিন্তু, ঘটনার পর থেকে সে বেপাত্তা হয়ে যায়। রবিবার আমরা মুর্শিদাবাদ থেকে তাকে গ্রেফতার করি। আঘাত গুরুতরও থাকায় প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল এবং পরে জেলার বাইরে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’’ বর্তমানে সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
বৃহস্পতিবার রাতে খোলা জানলা থেকে আব্দুল আলিমের ঘরে ক্লোরোফর্ম জাতীয় কিছু স্প্রে করে তাঁদের স্বামী-স্ত্রী-সন্তানকে অচৈতন্য করার পরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাতেই ঝলসে যান তিন জন। পাশের ঘরে শুয়ে থাকায় প্রাণে বেঁচে যায় ওয়াসিম। এই ঘটনার পরেই সে সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করে, এই খুনের পিছনে চেনা লোকের হাত রয়েছে। পুলিশের তদন্তেও উঠে আসে সেই তথ্য। পুলিশের হাতে ধৃত নাজনি নাহার ওরফে স্মৃতির স্বামী এবং নিহত ব্যবসায়ীর ভাই আব্দুল হালিমও এ দিন বলেন, “আমার স্ত্রীর সঙ্গে পাশের গ্রামের চন্দনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। প্রথমে ভাল করে স্ত্রীকে বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু, সে শোনেনি। পরে এ নিয়ে আমাদের মধ্যে অশান্তিও হয়। যা দাদা ও বৌদির কানেও পৌঁছয়।’’
হালিমের দাবি, বৌদি (নিহত রূপা বিবি) নিষেধ করা সত্ত্বেও স্মৃতি চন্দনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই চলছিলেন। কিন্তু, সেই আক্রোশ থেকে তাঁরা যে এমন ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটাবেন, তা তাঁরা স্বপ্নেও ভাবেননি। নিহত দাদার বাড়ির পাশেই থাকেন হালিম। তাঁর দাবি, ‘‘ঘটনার দিন হয়তো আমাকেও কিছু স্প্রে করে অচৈতন্য করে দেওয়া হয়েছিল। দাদার বাড়িতে আগুন লাগার পর প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে গেলও আমার ঘুম ভাঙতে অনেক দেরি হয়। সেখানে পৌঁছে দেখি দাদা বৌদি সকলে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। আমিও চাই দোষীদের চরম শাস্তি হোক । ”
চন্দনের বাড়ি সুপুর এলাকার চাঁদপাড়া গ্রামে। এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর বাড়িতে কেউ নেই। সকলেই বাড়ি ছাড়া বলে জানালেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের আরও দাবি, চন্দনের স্বভাবচরিত্র ভাল ছিল না। এর আগেও মহিলাঘটিত কাণ্ডে তাঁর নাম জড়িয়েছে।
পরিবারের সকলকে হারিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছে বছর সতেরোর ওয়াসিম। আপাতত সে গ্রামেই তাঁর পিসির বাড়িতে রয়েছে। বোলপুরের বাঁধগোড়া হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও এই মুহূর্তে স্কুলে যাওয়ার মতো অবস্থায় সে নেই। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আপাতত সঙ্গ দিচ্ছে গ্রামের বন্ধুরাই। ওয়াসিমের কথায়, “পরিবার বলে আমার আর কিছু রইল না। কী করব, কিছুই জানি না। আমার পাশাপাশি গোটা গ্রাম চায়, দোষীদের চরম সাজা হোক।” এই ঘটনার জেরে এ বার গ্রামে মহরম নিয়মরক্ষার্থে পালিত হবে বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy