এই ওঝাকেই ডেকেছিলেন পাড়ার লোকজন। নিজস্ব চিত্র
প্রত্যন্ত গ্রাম নয়, খাস পুর-শহরে এক বৃদ্ধাকে ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে তাঁর পরিবারকে সন্ত্রস্ত করে রাখার অভিযোগ উঠল বীরভূমে। ওই বৃদ্ধার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নাতিকেও মানসিক যন্ত্রণা থেকে রেহাই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
দুবরাজপুরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা। এই ওয়ার্ডেই থাকেন দুবরাজপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা তৃণমূলের শহর সভাপতি পীযূষ পাণ্ডে। ‘ডাইনি’ অপবাদের তত্ত্ব না মানলেও ওই পরিবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে বিরক্ত করার মৌখিক অভিযোগ হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাদের দাবি, কেউ ফের যাতে ওই পরীক্ষার্থীকে বিরক্ত করার সাহস না দেখাতে পারে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, তার বিহিত কী হবে, তা নিয়েই চিন্তিত শহরের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেটেপাড়ার বাসিন্দা যে বৃদ্ধার সঙ্গে ঘটনাটি ঘটছে, তাঁর একমাত্র ছেলে দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন। পিঠে স্পন্ডিলোসিসের অস্ত্রোপচার হয়েছে বছর খানেক আগে। তিনি কোনও ভারী কাজ করতে পারেন না। পরিবারটি খুবই গরিব। বৃদ্ধার দুই নাতি। এক জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। অন্য জন, কলেজে পড়ে। সেই চিন্তায় বৃদ্ধাও মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কিছুটা। মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলেন। যে কারণে মাথার কিছুটা অংশের চুল উঠে গিয়েছে। মাঝেমধ্যেই আপনমনে বিড়বিড় করেন। সকালে ফুল তুলতে বেরিয়ে পড়েন। এরই মধ্যে পাড়ায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে পড়শি এক মহিলাই প্রথমে রটিয়ে দেন ওই বৃদ্ধা ডাইনি। সেই গুজবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান পাড়ার আরও কিছু লোক। অভিযোগ, গত এক বছর ধরে নিয়মিত হেনস্থা ও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে পরিবারটিকে। বৃদ্ধার ছেলে বলেন, ‘‘এমনও হয়েছে মাকে পুড়িয়ে মারারও হুমকি দিয়েছে পাড়ার কিছু লোক। এই অশান্তিতে আমার ছেলে গতবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি। এ বারও পরীক্ষার আগে একই অবস্থা। ছোট ছেলে যখনই পরীক্ষা দিতে বেরোচ্ছে, তখই কিছু লোক ওকে বলছে, ‘তোর ঠাকুরমা ডাইনি’।’’
পরিবারটির দাবি, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় দিন কয়েক আগে। সে দিন দুর্গাপুর থেকে এক মহিলা ওঝাকে নিয়ে এসে ওই বৃদ্ধাকে ডাইনি প্রমাণের চেষ্টা করেন পাড়ার কিছু লোক। সেই ওঝা ওই বৃদ্ধার বাড়ির কাছে মাটি খুঁড়ে কিছু হাড়গোড় বের করেন। তারপর থেকেই গুজব আরও বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পরিবারটির হেনস্থা হওয়ার ঘটনা। বৃদ্ধার পরিবারের সদস্যেরা শুক্রবার বলেন, ‘‘এক সঙ্গে এত লোক যদি আমাদের বিপক্ষে থাকে আমাদের কী-ই বা করতে পারি! আমাদের সেদিন বাড়ি থেকে বেরোতেই দেওয়া হয়নি।’’ স্থানীয় সূত্রে খবর, হাড় বের করার জন্য এলাকার লোকজনের কাছ থেকে নগদ কয়েক হাজার টাকা নিয়ে চলে যায় ওই ওঝা। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের এখনও দাবি, ওই বৃদ্ধা তুকতাক করেন। পাড়ায় অশান্তি লেগে থাকে। মানুষজন অসুস্থ হচ্ছেন। ওই জন্যই ওঝা ডাকা হয়েছিল।
সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মী মধুসূদন মণ্ডল বলছেন, ‘‘এখনও পুর-এলাকায় মানুষ এমন কথা বিশ্বাস করতে পারেন, ভেবে আবাক হচ্ছি। হতেই পারে ওই ওঝা বুজরুকি করে হাড় বের করেছেন। কিন্তু এটার সঙ্গে এক জন মানুষের ডাইনি হওয়ার কী সম্পর্ক, চেষ্টা করেও সেদিন বোঝাতে পারিনি। প্রয়োজনে বিজ্ঞান মঞ্চের একটি অনুষ্ঠান করে ওই পাড়ায় কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করতে হবে।’’ শহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান পীযূষবাবুর বক্তব্য, ‘‘এই সব কুসংস্কার, বুজরুকিতে বিশ্বাস করিনা। যে ঘটনা ঘটছে, সেটা একেবারেই কাম্য নয়।’’
কিন্তু লাখ টাকার প্রশ্নটা হল, ওই পাড়ার অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন মানুষকে বোঝানোর কাজটা কে করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy