অগত্যা: বাস নেই। মোটরভ্যানে চড়ে গন্তব্যে। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে বাঁকুড়ার মিথিলায় সোমবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
বাসমালিক সংগঠনের সঙ্গে পরিবহণ শ্রমিকদের সংগঠনগুলির বৈঠকে স্থির হল, বুধবার থেকে বেসরকারি বাস চলবে বাঁকুড়ায়। তবে ভাড়া কিছুটা বেশি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে যাত্রীদের। এ দিকে, সোমবার পুরুলিয়ার পথে বাস ও যাত্রী বেশ কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু বাড়তি যাত্রী ভাগ হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ বাস বেশ ফাঁকাই ছুটেছে বলে দাবি জেলা বাসমালিক সংগঠনের।
পুরুলিয়ার ৪৭টি রুটে কম-বেশি চারশো বাস চলে। বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে পরিষেবা চালু হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত জেলার পথে একশোর কম বাস ছিল। জেলা বাসমালিক সংগঠনের সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সোমবার ১৮০টির মতো বাস চলেছে। আরও কিছু রুট সচল হয়েছে।’’আসানসোল রুট আগেই স্বাভাবিক হয়েছিল। এ দিন থেকে খাতড়া রুটেও কিছু বাস গিয়েছে। তবে বাস যায়নি বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে। ঝাড়খণ্ড থেকে পুরুলিয়ায় বাস ঢুকেছে। তবে পুরুলিয়া থেকে যায়নি। প্রতিভারঞ্জনবাবুর দাবি, রবিবার পর্যন্ত মালিকেরা লোকসান করে বাস চালিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘হয় ভাড়া বাড়ুক, নয় তেলের দাম কমুক, না হলে আমাদের ভর্তুকি দেওয়া হোক। এ ভাবে বেশি দিন টানা যাবে না।’’
পুরুলিয়া থেকে আসা একটি বাস এ দিন দুপুরে বান্দোয়ান স্ট্যান্ড থেকে খাতড়ার উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময়ে যাত্রী ছিলেন আট জন। বাঘমুণ্ডির সুইসা থেকে পুরুলিয়া যাতায়াত করা একটি বাসের কন্ডাক্টর স্বপনচন্দ্র গড়াই জানান, সকালে পুরুলিয়া ঢুকেছেন ৩০ জন নিয়ে। ফেরার সময় ছিলেন জনা পাঁচেক। তিনি বলেন, ‘‘রুটের এক পিঠ প্রায় ৮২ কিলোমিটার। বাস বন্ধ হওয়ার সময় এক লিটার ডিজ়েলের দর ছিল ৭৮ টাকা। এখন ৯৪ টাকা। কী ভাবে পোষাবে?’’
ওই বাসেই ছিলেন বাঘমুণ্ডির কিশোর মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘এক জনকে ডাক্তার দেখাতে এনেছি। বাস চলায় সুবিধা হল।’’ ঝালদার নতুনডি গ্রামের দীনেশ মাহাতোর কথায়, ‘‘যাত্রী কম হওয়ায় করোনার সময়ে ফাঁকায় ফাঁকায় বাসে যাতায়াত করতে পারছি।’’ ভাড়া কিছুটা বাড়লে তাঁদের বিশেষ সমস্যা হবে না বলে দাবি করেছেন ওই দুই যাত্রী। বাঁকুড়ার ঝিলিমিলি থেকে বান্দোয়ানে দরকারি কেনাকাটা করতে এসেছিলেন নিমাই মাহাতো। ফেরার বাসে উঠে বলেন, ‘‘অন্য গাড়ি করতে হলে অনেক ভাড়া লেগে যেত।’’
সোমবারও বাঁকুড়ার বেসরকারি বাসগুলি পথে নামেনি। এ দিন দুপুরে বাস মালিকদের সঙ্গে পরিবহণ শ্রমিকদের সংগঠনগুলির বৈঠক হয়। বাঁকুড়ার বাসমালিক সংগঠনের সম্পাদক জাফর আলম আনসারি জানান, দু’পক্ষের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে বুধবার থেকে জেলায় বাস চলবে। প্রায় সাড়ে চারশো বাস রয়েছে সংগঠনের আওতায়। জাফর বলেন, ‘‘তেলের দাম অনেকটা বেড়েছে। যাত্রীদের অনুরোধ করা হবে, কিছু বেশি ভাড়া দিতে।’’
বাঁকুড়া জেলা মোটর মজদুর সঙ্ঘের সভাপতি সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া সাড়ে আট টাকা থেকে বাড়িয়ে দশ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী সাত কিলোমিটার থেকে এক টাকা করে বাড়বে। মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া হয়েছে পনেরো টাকা। সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘এতে যাত্রীদের খুব চাপ হবে না। আবার পরিবহণ শ্রমিকেরাও কাজ ফিরে পাবেন।’’ ভাড়ার ব্যাপারে বৈঠকে সবাই একমত হয়েছেন বলে দাবি আইএনটিইউসি-র বাঁকুড়া জেলা বাস শ্রমিক কংগ্রেসের সম্পাদক বিশ্বনাথ মণ্ডল।
আইএনটিটিউসি-র বাঁকুড়া জেলা বাস ওয়ারকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ নঈম বলেন, ‘‘বাঁকুড়া থেকে দুর্গাপুর আগে ভাড়া ছিল ৪০ টাকা। এখন ৫০ টাকা করা হল। এতে মানুষের খুব সমস্যা হবে না।’’ সিটু-র বাঁকুড়া জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক উজ্জ্বল সরকার বলেন, ‘‘তেলের উপরে কর কমানো হচ্ছে না। শুধু মালিকদের দুরাবস্থা নয়, অসহায় পরিবহণ শ্রমিকদের কথা ভেবে মানুষকে এটুকু সাহায্য করতে বলব।’’
বাঁকুড়ার সুদীপ সরকার দুর্গাপুরের বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘রোজ দু’শো টাকার তেল কেনার থেকে একশো টাকা বাস ভাড়া দেওয়া ভাল।’’ বাঁকুড়ার জয়পুর থেকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে এ দিন ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন সুনীল সর্দার। তিনি বলেন, ‘‘বাসের ভাড়া যেখানে দশ টাকা ছিল, দু’শো টাকা টোটো ভাড়া করে ফিরতে হল। এর থেকে ক’টাকা ভাড়া বাড়লেও বাস চলুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy