মুরারইয়ের গোড়শা গ্রামের রায় পরিবারের সাবেক লক্ষ্মীপুজো এ বার কোভিডের জন্য সিউড়ির অরবিন্দপল্লিতে হচ্ছে। মধ্যে লক্ষ্মী, দুই ধারে জয়া ও বিজয়া। এমন প্রতিমা চিরাচরিত নিয়মে পুজো হয়ে আসছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। শুক্রবার সকালে চলছে দেবীবরণ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
গ্রামে কোনও দুর্গাপুজো নেই। তাই বলে খুব একটা মনখারাপ হয় না সিউড়ি ১ ব্লকের পাশাপাশি দুটি গ্রাম ঝড়ো ও করমশাল-এর বাসিন্দাদের। কারণ লক্ষ্মীপুজো।
কৃষি প্রধান দুটি গ্রামের সকল পরিবারের মিলিত উদ্যোগে বছরের পর বছর পূজিতা হয়ে আসছেন শস্য সমৃদ্ধির দেবী। দুটি গ্রামের ঠিক মাঝে গড়ে উঠেছে দেবীর স্থায়ী মন্দির। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোই সিউড়ির ওই দুই গ্রামের সেরা উৎসব। ফি বছর লক্ষ্মীপুজো ঘিরে মেতে উঠেন ঝড়ো ও করমশালের বাসিন্দারা। কলেবরে দিন দিন বাড়ছে সে উৎসব। কীর্তন, কবিগান থেকে নাটকের মতো সাংস্কৃতির অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। তবে এ বার সেই সব আয়োজনে কাটছাঁট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুই গ্রামের বাসিন্দারা।
শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পনেরো মিনিটে পূর্ণিমা লেগেছে। থাকার কথা আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত। তবে কোজাগরী পূর্ণিমা যেহেতু শুক্রবার রাতেই পুজো হয়েছে দুই গ্রামেই। প্রস্ততি ছিল শুক্রবার সকাল থেকেই। করমাশাল সন্ধ্যার আগে প্রতিমার সাজ পরানো শেষ না হলেও ঝড়ো গ্রামে প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। দুই গ্রামেই লক্ষ্মী মন্দিরে কচি কাঁচাদের ভিড়। চোখে পড়ার মতো ব্যস্ততা ছিল বড়দের মধ্যেও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, করমাশাল গ্রামে ত্রিশটি পরিবারের বাস। অন্য দিকে, ঝড়ো গ্রামে বসবাস ৫৫-৬০টি পরিবার। করমশাল গ্রামের আদিত্য মাজি, মনোজ দাস, সন্তোষ মণ্ডল বা ঝড়ো গ্রামের প্রদীপ পাতর, আনন্দ পাতরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল কী ভাবে লক্ষ্মীপুজোই দুই গ্রামের সেরা উৎসব হয়ে উঠল তার কাহিনী। তাঁরা জানাচ্ছেন, গ্রামের বাসিন্দাদের মূল জীবিকা হল কৃষিকাজ। এত ছোট গ্রামে দুর্গাপুজো করার সামর্থ ছিল না। তা ছাড়া কৃষিজীবী গ্রামে লক্ষ্মীই আদর্শ। এই ভাবনা থেকে পূর্বপূরুষরাই লক্ষ্মী আরাধনা শুরু করেন। গড়ে ওঠে মন্দির। কিন্তু, পুজোর চল কত দিন আগে থেকে সেটা জানাতে পারেননি আদিত্যবাবু বা প্রদীপবাবুরা।
দুটি গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সকলেই সামর্থ অনুযায়ী এগিয়ে আসেন। তবে দুটি গ্রামেই চাঁদা নয়, জমির পরিমাণ অনুযায়ী জমির ফসল বা ধান দেওয়াই দস্তুর। জমা ধান বিক্রি করেই উঠে লক্ষ্মী পুজোর খরচ। পুজো ও পুজোর পর দিন, এই দু’দিন থাকে প্রতিমা। দুটি গ্রামের বাসিন্দাদের বিশ্বাস, দেবীর আরাধনার জন্যই উন্নতির পথে এগোচ্ছে গ্রাম। তাই আন্তরিকতায় ঘাটতি নেই।
করমশাল গ্রামের নিয়তি মাজি, গীতা মাজি, দুর্গা মণ্ডল বা ঝড়ো গ্রামের সীমা পাতররা বলছেন, ‘‘দারুণ আনন্দ হয় এই সময়। দুর্গাপুজো গেলে অন্য গ্রামের মন খারাপ হলেও আমাদের উল্টো ছবি। বাচ্চারা সবচেয়ে বেশি আনন্দ করে। অনেক পরিবারে নতুন জামাকাপড় ভাঙা হয় লক্ষ্মীপুজোতেই। বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়েরা আসেন।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy