ভারতমালা প্রকল্পে জুড়ছে রাঁচী থেকে কলকাতা। এই জাতীয় সড়ক প্রকল্প ছুঁয়ে যাচ্ছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার ন’টি ব্লক। এর ফলে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া থেকে কলকাতা ও রাঁচীর যোগাযোগ আরও মসৃণ হতে চলেছে। দু’জেলায় ব্যবসায় গতি আসবে বলেও আশাবাদী বণিকমহল। এলাকার আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়েরা।
বাঁকুড়ার সিমলাপাল, তালড্যাংরা ও ইঁদপুর ব্লক হয়ে প্রস্তাবিত জাতীয় সড়ক পৌঁছবে পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লকে। সেখান থেকে হুড়া, পুরুলিয়া ১ ও ২, জয়পুর, ঝালদা ২ ব্লক হয়ে জাতীয় সড়ক বোকারো হয়ে রাঁচী পৌঁছবে। দুই জেলা মিলিয়ে ১৪৩ কিলোমিটারের বেশি ঝাঁ চকচকে চার লেনের রাস্তা হবে। এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া। সংস্থার পুরুলিয়ার ইনচার্জ দিলীপ পাত্র বলেন, ‘‘জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন জমি হস্তান্তর করলেই কাজ শুরু হবে।”
পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার কিছু প্রত্যন্ত এলাকা ছোঁবে এই রাস্তা। সেখানে জাতীয় সড়ক যেমন নেই, রেলপথও নেই। বাঁকুড়ার ইঁদপুর, তালড্যাংরা, সিমলাপাল, পুরুলিয়ার হুড়া, পুঞ্চা, পুরুলিয়া ২, জয়পুর, ঝালদা ২ প্রভৃতি ব্লকগুলি আর্থিক দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে। ওই এলাকার কিছু অংশে অনুন্নয়নকেই হাতিয়ার করে মাওবাদীরা সংগঠন গড়েছিল। জাতীয় সড়কের মতো বড় প্রকল্প হলে এলাকার আর্থিক উন্নয়ন ঘটবে বলেই মনে করছে ব্যবসায়ী ও শিল্পমহল।
‘পশ্চিমাঞ্চল চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরকার বলেন, ‘‘এতদিন দক্ষিণ বাঁকুড়ার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ উন্নত ছিল না। ভারতমালার মতো বড়মাপের জাতীয় সড়ক হলে দক্ষিণ বাঁকুড়াতেও শিল্প সম্ভাবনা তৈরি হবে। বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ সহজ হবে। যাতায়াতের হয়রানি ও সময় কমবে।’’ ‘পুরুলিয়ার ফেডারেশন অব মিডিয়াম অ্যান্ড স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সম্পাদক মনোজ ফোগলারও মত, ‘‘জাতীয় সড়ক হলে অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে। রাঁচী ও কলকাতার মতো বড়মাপের ব্যবসায়িক কেন্দ্রের সঙ্গে জেলার যোগাযোগ মসৃণ হলে কাঁচামালের জোগান, উৎপাদিত পণ্য পরিবহণে বাড়তি সুবিধা পাবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবয়ারীরা। এর প্রভাব সরাসরি পড়বে জেলার আর্থিক উন্নয়নে।”
প্রায়ই মাকে চিকিৎসা করাতে রাঁচী নিয়ে যান ঝালদার জিৎ আগরওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘এখন রাঁচীগামী রাস্তা সঙ্কীর্ণ ও ব্যস্ত। পাহাড়ি রাস্তায় রাতে বাড়ি ফেরাটাও ঝুঁকির। শুনছি ঝালদার গা ঘেঁষেই চার লেনের জাতীয় সড়ক যাবে রাঁচী পর্যন্ত। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল বদল ঘটবে।’’ সিমলাপালের চিকিৎসক অবনীরঞ্জন সিংহ বলেন, ‘‘ভারতমালা প্রকল্প হলে আমাদের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটবে। কলকাতায় পৌঁছতে এখন ছ’ঘণ্টা লাগে। তা কমে দাঁড়াবে তিন-চার ঘণ্টায়। অনেকে উপকৃত হবেন।” (চলবে)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)