ঝড়ে উড়েছে ছাউনি। বিষ্ণুপুরের দমদমা গ্রামে। (নীচে) ঝড়ে লন্ডভন্ড খামার। পুরুলিয়ার জয়পুরের গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
কালবৈশাখীর দাপটে তাপমাত্রা খানিক কমায় দাবদাহ থেকে সাময়িক রেহাই মিলেছে। তবে শনিবার সন্ধ্যায় ঘণ্টাখানেকের ঝড়-জলে বাঁকুড়া জেলার অনেক এলাকা কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণহানি থেকে শুরু করে বহু ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। ঝড়ের পরে, দু’দিন পার হলেও জেলার কিছু এলাকা এখনও বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন, দাবি।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৬ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। ঝড়ে জেলায় কম-বেশি ১৬টি ব্লক কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী পুর-এলাকার পাশাপাশি, জেলা জুড়ে প্রায় ৯০টি পঞ্চায়েতের ২২৬টি গ্রাম ঝড়-বৃষ্টিতে প্রভাবিত হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৩৫টি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে। এর মধ্যে বিষ্ণুপুর ব্লকে ১৫টি, পাত্রসায়র ব্লকে ১১টি, বাঁকুড়া ১ ব্লকে পাঁচটি এবং জয়পুর, কোতুলপুর, সোনামুখী ও রাইপুর ব্লকে একটি করে বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাড়ির সংখ্যা ৭৯৭টি। ওই দিন সন্ধ্যায় নারকেল গাছ ভেঙে পড়ে সোনামুখী ব্লকের হামিরহাটি পঞ্চায়েতের পার্বতিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুনীল বাউড়ির (৫০) মৃত্যু হয়েছে।
এর পাশাপাশি, জেলা জুড়ে প্রায় ২০০টি বিদ্যুতের খুঁটি ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। তার প্রভাবে সোমবার বিকেল পর্যন্ত জেলার বেশ কিছু এলাকা, বিশেষত ওন্দা, তালড্যাংরা-সহ বিষ্ণুপুর মহকুমার কয়েকটি প্রত্যন্ত এলাকা এখনও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে দাবি। রাজ্য বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতির তরফে এ দিন বিদ্যুৎ দফতরের বিষ্ণুপুর সাবডিভিশনাল অফিসে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের জেলা সম্পাদক স্বপন নাগ বলেন, “ঝড়ের পরে দু’দিন পার হয়ে গেলেও, এখনও বহু গ্রামে বিদ্যুৎ আসেনি। আমাদের দাবি, দ্রুত সব গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা হোক।” বিদ্যুৎ দফতরের বাঁকুড়া রিজিওনাল ম্যানেজার সুমন্ত রায় বলেন, “৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ পরিষেবা পুনরায় চালু করা গিয়েছে। তবে কয়েকটি গ্রাম এখনও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে। সেগুলিতে পুরোদমে কর্মীরা কাজ চালাচ্ছেন। পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক হবে।” এ দিকে, ঝড়ে বিষ্ণুপুরের নতুন মহল এলাকার শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লির চিমনি ভেঙে পড়ায় সেখানে শবদাহ বন্ধ রয়েছে। বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান গৌতম গোস্বামী বলেন, “বিষয়টি পূর্ত দফতরকে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মচারীরা এসে চুল্লি মেরামত করবেন। দিন দু’য়েকের মধ্যে তা চালু হয়ে যাবে বলে আশা করছি।”
বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি হলেও, ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। জেলার সমস্ত ব্লক থেকে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি আমরা।” কালবৈশাখীর পূর্বাভাস থাকায় সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে পুরসভা, মহকুমা ও জেলা স্তরে কন্ট্রোল রুমও (০৩২৪২-২৫৪৭৩৫/ ২৪০৩৫৪) তৈরি করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে। প্রতিটি ব্লককে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
এ দিকে, রবিবার সন্ধ্যায় আচমকা ঝড়ে পুরুলিয়ার জয়পুর ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েতের কিছু এলাকায় কয়েকটি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বড়গ্রাম পঞ্চায়েতের কুসুমটিকরি গ্রামের দু’টি খামারের ছাউনি উড়ে যায়। খামারের কর্মী গিরিধারী মাহাতো, বাবুলাল মাহাতো জানান, খামারে প্রায় দশ হাজার মুরগি ছিল। ঝড়ে ছাউনি চাপা পড়ে বেশ কিছু মুরগি মারা গিয়েছে বলে দাবি। বিডিও (জয়পুর) বিশ্বজিৎ দাস জানান, ঝড়ে মুকুন্দপুর, জয়পুর ও বড়গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির খবর মিলেছে। বিশদ রিপোর্ট নেওয়া হয়েছে। শনিবারের ঝড়ে পাড়া ও কাশীপুরের বেশ কিছু এলাকায় গাছ পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়েছিল। সর্বত্র পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে বলে বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy