দুর্গা প্রতিমার চক্ষুদানের ছবি। —নিজস্ব চিত্র।
লক্ষ্মীর ঝাঁপি প্রচলিত, কিন্তু দুর্গার ঝাঁপি?
সর্বজনীন দুর্গাপুজোর রজতজয়ন্তী বর্ষের খরচ সামাল দিতে কিছুটা লক্ষ্মীর ঝাঁপির ধাঁচেই ‘দুর্গার ঝাঁপির’-র উপরে অনেকখানি ভরসা করছে দুবরাজপুরের নায়কপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি। সে রকমই একটি প্লাস্টিকের কৌটো। যার মধ্যে ওই পুজোর সঙ্গে জুড়ে থাকা প্রতিটি পরিবারের বধূরা সযত্নে টাকা জমিয়ে রেখেছেন। টাকা জমানোর হার প্রতিদিন কমপক্ষে এক টাকা। জানা গিয়েছে, গত এক বছর ধরে দেড়শোরও বেশি ‘দুর্গার ঝাঁপি’তে জমানো মোটা অঙ্কের টাকা মহিলাদের থেকে পেতে চলেছে ওই দুর্গাপুজো কমিটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বছর ধরে ঘটেপটে দুর্গাপুজো হত দুবরাজপুর শহরের নায়কপাড়ায়। ওই পুজোর সঙ্গে জুড়ে নায়কপাড়া ও সংলগ্ন প্রায় ২০০টি পরিবার। আন্তরিকতা থেকেই ১৯৯৯ সালে নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠার পরই শুরু হয় মূর্তি পুজো। পুজো কমিটির সদস্যেরা জানিয়েছেন, খরচ চালাতে বাইরে থেকে চাঁদা তোলা হয় না। ওই পুজোর সঙ্গে জুড়ে থাকা পরিবারগুলির যত জন সদস্য আয় করেন, তাঁদের প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুয়ায়ী চাঁদা নিয়ে পুজো হত। গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য সরকারের অনুদান মিলছে। পাশাপাশি এলাকার কেউ প্রতিষ্ঠিত হলে বা চাকরি পেলে তিনি প্রতিমা বা খাওয়াদাওয়া সহ নানা খরচ জুগিয়ে থাকেন। এ বারও তাই হবে।
কিন্তু, এ বার পুজোর রজত জয়ন্তী বর্ষের খরচ অনেকটাই বেশি। সঙ্গে রয়েছে প্রতিদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেদার খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি। ফলে ওই খরচের একটা অংশের জোগান পেতে ‘নারী শক্তি’র উপরে ভরসা করতে হয়েছে বলেই জানাচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তাদের কয়েক জন। তাঁদের অন্যতম অশেষ নায়ক, রাজা মাহাতা, রামতনু নায়করা বলছেন, ‘‘গত বার দুর্গাপুজোর বিসর্জনের পরেই ঠিক হয়, প্রত্যেক পরিবারের বধূকে একটি করে কৌটো দেওয়া হবে। তাঁরা টাকা জমাবেন। বছর ভর প্রতিদিন এক টাকা করে জমানো কঠিন কাজ নয়। বাড়বে মহিলাদের অংশগ্রহণও।’
জানা গেল, ভাবনাটা মাথায় এসেছিল অঞ্জলি নায়কের। যেমন ভাবা তেমন কাজ। কিন্তু লক্ষ্মী নয়, ঝাঁপির নাম দেওয়া হল দুর্গার নামেই। বছর ভর দুর্গাপুজোর জন্য টাকা জমিয়েছেন দুর্গা উপাধ্যায়, বন্দিতা নায়ক, লাবনী কবিরাজ, দেবযানী তিওয়ারি, সাধনা মেটে, নমিতা মিশ্র, কবিতা চক্রবর্তীর মতো বধূরা। তাঁদের কথায়, ‘‘অত্যন্ত ভাল ভাবনা। কারণ পুজো সকলেরই। সকলেই সমান ভাবে আনন্দ ভাগ করে নিই। তা হলে এই সামান্য কাজটাই বা করতে পারব না কেন!’’
মহালয়ার দিন ভাঙা হবে শতাধিক দুর্গার ঝাঁপি। উদ্যোক্তাদের আশা, পুজোর খরচ তুলতে বেশ বড় সহায় হবে ‘দুর্গা বাহিনী’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy