পুজা সেন।— নিজস্ব চিত্র।
পূজা-অন্তর্ধান রহস্য ক্রমেই জটিল হচ্ছে। বাঁকুড়ার ওই তরুণী বধূ খুন হয়েছেন, না তাঁকে পাচার করে দেওয়া হয়েছে— সে ধোঁয়াশা কাটেনি।
পূজাকে গুম করে দেওয়ার অভিযোগে তাঁর স্বামী মুলুকচাঁদ সেনকে গত রবিবার গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়েছে বাঁকুড়া পুলিশ। পুলিশের কাছে মুলুক দাবি করেছে, সে স্ত্রীকে খুন করেছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জেরায় মুলুকচাঁদ কখনও বলছে, দেহ ভাসিয়ে দিয়েছে ক্যানালের জলে। কখনও বলছে পড়শির ঘরের মেঝেতে পুঁতে দিয়েছে।’’
মুলুকচাঁদের দাবির ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া ও পূর্ব বর্ধমান পুলিশ যায় বর্ধমান ২ ব্লকের বেলনা গ্রামে। সেখানেই বাড়ি মুলুকচাঁদের। ধৃতের দেখানো জায়গায় খোঁড়াখুড়ি করেও কোনও দেহ মেলেনি। পুলিশ জানায়, পরে মুলুক দাবি করে, জায়গা দেখাতে ভুল হয়েছিল। আবার নিয়ে গেলে ঠিক জায়গা দেখিয়ে দেবে।
এই অবস্থায় বাঁকুড়ার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রমপাড়ায় পূজার আত্মীয়দের আশঙ্কা, তাঁকে বাইরে পাচার করে দিয়ে থাকতে পারে মুলুক। স্থানীয় কাউন্সিলর লক্ষ্মী মাল বলেন, ‘‘আমরা শুনেছি, ওই ছেলেটার টাকার লোভ ছিল। স্ত্রীকে পাচার করে দিয়ে থাকতে পারে বলে আমাদের সন্দেহ।’’ শুক্রবার আশ্রমপাড়ার বাড়িতে পূজার বাবা-মা ছিলেন না। আত্মীয়েরা জানান, ২০১৪ সালে সম্বন্ধ করেই মুলুকের সঙ্গে পূজার বিয়ে হয়েছিল। মুলুক খেতমজুরের কাজ করত। পরে লেদ কারখানায় কাজ নেয়। পাত্রপক্ষ নগদ চল্লিশ হাজার টাকা ও এক ভরি সোনার গয়না দাবি করেছিল। বিয়ের সময়ে নগদ টাকা পুরোটা দিলেও গয়না দিতে পারেননি পূজার বাবা-মা। বিয়ের মাস তিনেকের মধ্যেই গুম হয়ে যান পূজা। তাঁর ঠাকুমা পাগলি বাউড়ি বলেন, ‘‘শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন হত জানি। কিন্তু, কেন ওরা অত্যাচার করত, সেটা পূজা কখনও আমাদের কাছে ভেঙে বলেনি।’’
পূজার খোঁজ মিলছে না ২০১৫-র এপ্রিল থেকে। তাঁর বৌদি গৌরী বাউড়ির দাবি, গুম হয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগে শ্বশুরবাড়িতে ঝামেলার খবর পেয়ে পূজার বাবা-মা বর্ধমানে গিয়ে মেয়েকে নিয়ে আসেন। কয়েক দিনের মধ্যেই মুলুকচাঁদ তাঁকে ফেরত নিতে আসে।
গৌরীদেবী ও পাগলিদেবী বলেন, ‘‘তখন বাড়িতে পূজার বাবা-মা ছিল না। কয়েক জন আত্মীয় পূজাকে মুলুকের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে।’’ ওই রাতেই মুলুকচাঁদের এক মামা পূজার মা-কে ফোন করে জানান, বর্ধমানের সেহরাবাজার স্টেশনে মুলুক ও পূজাকে দেখেছেন। এ কথা জেনে পর দিনই পূজার বাবা-মা ছুটে যান বর্ধমানে। মুলুকচাঁদ তাঁদের কাছে দাবি করে, পূজা মাঝ রাস্তায় বাপের বাড়ি যেতে চেয়েছিল বলে তাঁকে ট্রেনে তুলে দিয়েছে।
ফিরে এসে মহিলা থানায় অভিযোগ করেন পূজার মা মঞ্জু বাউড়ি। তদন্তে নেমে পুলিশ পূজার শ্বশুর পিরু সেন ও শাশুড়ি শ্যামলীদেবীকে গ্রেফতার করে। পরে তাঁরা জামিনে মুক্ত হন। কিন্তু সেই সময় থেকেই মুলুকচাঁদের নাগাল পাচ্ছিল না পুলিশ। প্রায় ধামাচাপা পড়ে যাওয়া এই মামলা মুলুকের গ্রেফতারিতে নতুন করে প্রাণ পেয়েছে। বছর বাইশের মুলুক তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছে, পাত্রী তার পছন্দ ছিল না। তার অমতেই জোর করে বাড়ি থেকে বিয়ে দেওয়া হয়। সেই সমস্ত নিয়ে পূজার সঙ্গে প্রায়ই অশান্তি হত।
এ দিন বেলনা গ্রামে মুলুকের পড়শিরা জানান, প্রথম প্রথম পূজার কথা জিজ্ঞাসা করলে মুলুক বলত, সে বাপের বাড়িতে রয়েছে। মুলুকের বাবা বলেন, ‘‘ছেলে এমন কাণ্ড করে বসেছিল, আমরা ভাবতেও পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy