ভেটু বাউরি।
একই ঘরের মধ্যে শুয়ে ছিলেন আট-দশ জন শ্রমিক। অনেকেই ছিলেন জেগে। তারই মধ্যে ঘরের ভিতরে কী ভাবে গলার নলি কেটে মৃত্যু হল ভেটু বাউরির (২৬)— বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁর পরিজনেরা। তামিলনাড়ুর পুলিয়ামপট্টি থানার ভিন্নাপল্লিতে সুতোকলে কাজ করতে যাওয়া পুরুলিয়ার রাঘবপুরের ভেটুর মৃত্যু ঘিরে ঘনিয়েছে রহস্য। ধোঁয়াশায় পুলিয়ামপট্টি থানাও।
২২ নভেম্বর পুরুলিয়া থেকে কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার দিনেই (২৪ নভেম্বর) ভেটুর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এক রাশ প্রশ্ন মনে সেখান থেকে ভাইয়ের দেহ নিয়ে শুক্রবার ফেরেন ভেটুর দাদা দিলদার। তিনি অবশ্য সেখানে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করেছেন ‘পশ্চিমবঙ্গ বাউরি সমাজ উন্নয়ন সমিতি’র রাজ্য সভাপতি বাবলু বাউরি।
ওই এলাকা ইরোড জেলার অন্তর্গত। ইরোডের পুলিশ সুপার এস সক্থি গণেশন বলেন, ‘‘একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ পুলিয়ামপট্টি থানার দাবি, ঘটনাটি খুন কি না সে ব্যাপারে এখনও তাঁরা নিশ্চিত নয়। শনিবার পুলিয়ামপট্টি থানার আইসি প্রভাকরন এস বলেন, ‘‘গলা কাটার কারণেই ভেটুর মৃত্যু হয়েছে। তবে ঘটনাটি খুন না আত্মহত্যা তা স্পষ্ট নয়। ঘটনাস্থল থেকে ধারাল কোনও অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি।’’
ওই থানা সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভেটুর সঙ্গে ওই ঘরে অন্য শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। পুলিশের কাছে তাঁরা দাবি করেছেন, জেগে থাকলেও কেউ ভেটুর দিকে নজর রাখেননি। হঠাৎ ভেটুর চিৎকার শুনে তাঁরা বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দেখেন, তাঁর গলার কিছুটা কাটা।
মৃতের দাদা দিলদারের প্রশ্ন, ‘‘ভাই খামোখা আত্মহত্যা করবে কেন? ঘটনার পিছনে রহস্য আছে। আমরা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই।’’ দাবিটি তাঁরা সংগঠনগত ভাবে জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর কাছে তুলবেন বলে জানিয়েছেন বাউরি সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি।
এ দিন রাঘবপুরে গিয়ে দেখা যায়, ভেটুর বাড়িতে শোকের ছায়া। শুক্রবার রাতেই তাঁর অন্ত্যেষ্টি হয়েছে। সকালে ভিড় করেছেন পড়শিরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনেক বছর আগে ভেটুর বাবা-মা মারা গিয়েছেন। কাজের খোঁজে বছর ছয়েক আগে তিনি বাড়ি ছাড়েন। তামিলনাড়ুর ওই সুতোকলে জেলারই কয়েকজনের সঙ্গে তিনি কাজ করছিলেন। রাঘবপুরে একা থাকেন তাঁর দাদা। শুধুমাত্র পুজোর সময়ে এক-দেড় মাসের জন্য ভেটু বাড়ি ফিরতেন।
এ বার পুজোর সময়ে বাড়ি ফিরেছিলেন ভেটু। জেলার বাসিন্দা আর এক শ্রমিক বিবেক বাউরির সঙ্গে ২২ নভেম্বর তামিলনাড়ুর উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। ২৪ নভেম্বর সেখানে পৌঁছন। সেই রাতেই সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়।
কী হয়েছিল সেই রাতে? মৃতের দাদা জানাচ্ছেন, অন্য শ্রমিকেরা তাঁর কাছে দাবি করেছেন, রাত আটটা নাগাদ তাঁরা সবাই খাবার খেতে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু ভেটু যাননি। এক জন তাঁর খাবার এনে দিয়েছিলেন। তারপরে সবাই শুয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা ঘুমাননি। কেউ ফোনে বাড়িতে কথা বলছিলেন, কেউ মোবাইলে সিনেমা দেখছিলেন, গান শুনছিলেন। হঠাৎ তাঁরা ভেটুর আর্তনাদ শুনে উঠে দেখেন, তাঁর গলা কাটা। ফিনকি দিয়ে বেরোচ্ছে রক্ত। দিলদার বলেন, ‘‘ভাইয়ের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ঘটনার আকস্মিকতায় সকলেই হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন। পরে খবর দেন সুতোকলের মালিককে। তিনি আসার আগেই মৃত্যু হয় ভাইয়ের। এর পরে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।’’
কেন অভিযোগ জানাননি তিনি? দিলদার জানান, সেখানে ভাষাগত সমস্যা হচ্ছিল। পুলিশের কথাট এটুকু বুঝেছিলাম, ওরা তদন্ত করছে। তাই নতুন করে আর অভিযোগ করিনি। ভেটুর দেহ আনতে পাশে দাঁড়ায় বাউরি সমাজ উন্নয়ন সমিতি। সমিতির সভাপতি বলেন, ‘‘ভেটুর আত্মহত্যা করার কোনও কারণ নেই। তাই তামিলনাড়ু পুলিশ যাতে যথাযথ তদন্ত করে সে জন্য জেলার মন্ত্রী শান্তিরামবাবুর কাছে আমরা যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy