Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
Death

অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত মা ও দুই শিশুকন্যা

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পর পর দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ায় চক্ষুশূল হয়ে পড়েছিলেন স্ত্রী। তাই নিয়ে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে অশান্তি লেগেই ছিল।

(বাঁ দিকে) এক মেয়েকে নিয়ে আহ্লাদি, (ডান দিকে) দুই মেয়ে। নিজস্ব িচত্র

(বাঁ দিকে) এক মেয়েকে নিয়ে আহ্লাদি, (ডান দিকে) দুই মেয়ে। নিজস্ব িচত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাভপুর শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৩৬
Share: Save:

বড় মেয়ের জন্মদিনেই দুই মেয়ে-সহ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন মা। শনিবার রাতে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে, লাভপুরের বিষয়পুর গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যু হয়েছে আহ্লাদি ধীবর (২৩) এবং তাঁর দুই মেয়ে ৬ বছরের পিউ, সাড়ে তিন বছরের মৌসুমির। এই ঘটনায় পুলিশ আহ্লাদীর স্বামী সুকুমার এবং শ্বশুর হরিচরণ ধীবরকে আটক করেছে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পর পর দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ায় চক্ষুশূল হয়ে পড়েছিলেন স্ত্রী। তাই নিয়ে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে অশান্তি লেগেই ছিল। দুই শিশুকন্যা সহ স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ হয়েছে স্বামীর বিরুদ্ধে। বছর আটেক আগে মুর্শিদাবাদের দুর্গী গ্রামের আহ্লাদীর সঙ্গে লাভপুরের বিষয়পুরের সুকুমার ধীবরের বিয়ে হয়। সুকুমার অস্থায়ী ভাবে বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি চালান। প্রতিবেশীরা জানান, শনিবার বড় মেয়ে পিউয়ের জন্মদিন ছিল। লুচি, পায়েস করেছিলেন আহ্লাদি। ফোনে স্বামীকে মেয়ের জন্য কিছু উপহার আনতে বলেন। তাই নিয়ে দু’জনের মধ্যে বচসা হয় বলে অভিযোগ।

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাত ৮টা নাগাদ একটি ঘরের মধ্যে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। গ্রামবাসীরা গিয়ে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তিন জনকে উদ্ধার করলেও ঘটনাস্থলেই আহ্লাদির মৃত্যু হয়। মৌসুমিকে সাঁইথিয়া থেকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়। পিউকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রবিবার সকালে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। রবিবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘরটিতে তালা ঝুলছে। ভেন্টিলেটরের ফাঁকগুলি কালো হয়ে আছে। গ্রামবাসীরা বাড়ির আশেপাশে ইতস্তত জটলা করে আছেন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা তথা তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট হাতিয়া অঞ্চল কমিটির যুব সভাপতি শুভাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিৎকার, চেঁচামেচি শুনে দেখি প্রতিবেশীরা বড় মেয়েটিকে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। স্টিলের খাটের উপরে পড়ে রয়েছে মায়ের পোড়া দেহ। ছোট মেয়েটি আধপোড়া অবস্থায় ধুঁকছে। গোটা ঘর ধোঁয়াময়। তীব্র কেরোসিনের গন্ধ। খাটের নীচে পড়ে রয়েছে কেরোসিনের জ্যারিকেন। কী করে কী হল বলতে পারব না।’’

আহ্লাদির বাবা আশিস ধীবর বলেন, ‘‘রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ সুকুমার ফোন করে জানায় মেয়ে এবং দুই নাতনির শর্ট-সার্কিটে মৃত্যু হয়েছে। এসে দেখি কেউ কোথাও নেই। ঘরের মধ্য পড়ে রয়েছে মেয়ের পোড়া দেহ। গ্রামবাসীদের কাছে জানতে পারি বাচ্চা দুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আসলে খুন করে শর্টসার্কিট বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছিল।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘পর পর দুটি মেয়ে হওয়ার পর থেকে আহ্লাদিকে ওর স্বামী দেখতে পারত না। মেয়ে দুটির ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমরা মানিয়ে নিতে বলতাম। কিন্তু তার পরিণিতি যে এমন হবে তা ভাবতে পারিনি।’’

উল্টোদিকের বাড়িতে আলাদা থাকেন সুকুমারের বাবা হরিচরণ এবং মা পার্বতী ধীবর। পার্বতী বলেন, ‘‘আমরা এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy