Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

মা-মেয়ের মৃত্যু, আগুন

রবিবার সকালে এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে তেতে উঠল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহরের ক্ষুদিরাম পার্কের চৌমাথা। উত্তেজিত জনতা ডাম্পার ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। যান নিয়ন্ত্রণের দাবিতে শুরু হয় অবরোধ।

উত্তপ্ত: রঘুনাথপুর শহরের ক্ষুদিরাম পার্কের চৌমাথায় ডাম্পারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। ছবি: সঙ্গীত নাগ

উত্তপ্ত: রঘুনাথপুর শহরের ক্ষুদিরাম পার্কের চৌমাথায় ডাম্পারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। ছবি: সঙ্গীত নাগ

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫৬
Share: Save:

স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে স্কুটারে বড় মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন এক প্রৌঢ়। পিছন থেকে একটি ডাম্পার তাঁদের স্কুটারে ধাক্কা মারে। তিন জনেই ছিটকে পড়েন। প্রৌঢ় অল্পবিস্তর চোট পেলেও সেই ডাম্পারের চাকা পিষে দেয় তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে। রবিবার সকালে এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে তেতে উঠল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহরের ক্ষুদিরাম পার্কের চৌমাথা। উত্তেজিত জনতা ডাম্পার ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। যান নিয়ন্ত্রণের দাবিতে শুরু হয় অবরোধ। মৃতেরা হলেন পশ্চিম বর্ধমানের কুলটি থানার ঝালবাগানের জোশাইডির বাসিন্দা বনলতা মুখোপাধ্যায় (৪৯) ও তাঁর মেয়ে পিঙ্কি মুখোপাধ্যায় (১৮)।

রঘুনাথপুর শহরের চৌমাথার মোড় ক্ষুদিরাম পার্ক অত্যন্ত জনবহুল এলাকা। সেখান থেকেই রাস্তা চলে গিয়েছে বাঁকুড়া, চেলিয়ামা, পুরুলিয়া ও নিতুড়িয়ার দিকে। ব্যস্ত চৌমাথায় গত বছরেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্র্যাফিক সিগনাল বসানো হয়েছে। তারপরেও এই দুর্ঘটনা ঘটায় যান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শহরের বাসিন্দাদের একাংশ।

স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ নিতুড়িয়ার দিক থেকে এসে চৌমাথা মোড়ে সিগন্যাল না পেয়ে রাস্তার এক পাশে স্কুটার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পেশায় একটি বেসরকারি সংস্থার নৈশপ্রহীর ভগীরথ মুখোপাধ্যায়। স্কুটারের পিছনে বসেছিলেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। তাঁরা যাচ্ছিলেন রঘুনাথপুরেরই নন্দুয়াড়ায় বড় মেয়ের বাড়ি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, সেই সময় একটি ফাঁকা ডাম্পার নিতুড়িয়ার দিক থেকে এসে বাঁকুড়ার দিকে বাঁক নেওয়ার সময়ে সরাসরি ধাক্কা মারে স্কুটারে। ধাক্কার চোটে স্কুটার থেকে রাস্তায় পড়ে যান বনলতাদেবী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পিঙ্কি। ডাম্পারের চাকা তাঁদের উপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের।

ভগীরথবাবুর জামাই পিন্টু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্বশুর মশাই ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দিয়েছিলেন। তখনও বুঝিনি এত বড় বিপর্যয় ঘটেছে। আমি কাশীপুরে ছিলাম বলে বন্ধুদের ঘটনাস্থলে যেতে বলি। তাঁদের কাছেই খবর পাই শাশুড়ি ও শালিকা মারা গিয়েছেন।’’ তিনি জানান, আগেও তাঁরা কুলটি থেকে স্কুটারে নন্দুয়াড়ায় এসেছেন। কিন্তু এমন কাণ্ড ঘটতে পারে ভাবেননি।

ট্র্যাফিক সিগন্যাল থাকলেও তাহলে কি অনেক গাড়ি তা মানছে না? দুর্ঘটনার পরে এই প্রশ্নে সরব হয়েছেন বাসিন্দাদের অনেকে। তাঁদের অভিযোগ, কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক সময়েই তাঁরা মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকেন বলেও অভিযোগ। সে জন্য ওই এলাকায় আরও পুলিশ মোতায়েনের দাবি তুলেছেন তাঁরা।

দুর্ঘটনার পরেই এলাকায় তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ডাম্পার ফেলে চালক পালিয়ে যায়। কিছু লোকজন ডাম্পারে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। শুরু হয়ে যায় অবরোধ। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ গিয়ে ঘণ্টাখানেক পরে অবরোধ তোলে। রঘুনাথপুরের দমকল কেন্দ্র থেকে একটি ইঞ্জনি গিয়ে ডাম্পারটির আগুন নেভায়। পুলিশ জানিয়েছে, ডাম্পারের চালককে আটক করা হয়েছে। মৃতের পরিবারের অভিযোগ পেলেই চালকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে।

রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই জনবহুল মোড়ে ট্র্যাফিক সিগনাল থাকলেও পুলিশের কর্মীরা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করলে হয়তো এমন মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো যেত।” বিষয়টি তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন এসডিপিও। তিনি বলেন, ‘‘কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা বিশদে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, রঘুনাথপুর থানায় পুলিশ কর্মীর ঘাটতি থাকায় ট্র্যাফিক কিয়স্কে সিভিক ভলান্টিয়ারদের রাখতে হয়। চৌমাথার মোড়ে যাতে পুলিশ দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই চেষ্টা চলছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Raghunathpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy