হল উদ্বোধন। —নিজস্ব চিত্র।
খোলা জায়গায় শৌচকর্ম রুখতে ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার পরিষেবা শুরু হল পুরুলিয়া শহরে। শনিবার শহরের রাহেড়গোড়া এলাকায় শৌচাগার দু’টি ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। আপাতত এলাকার মহিলারা সেগুলি ব্যবহার করবেন বলে পুরসভা জানিয়েছে।
পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, “গোটা দেশে পুরুলিয়াই একমাত্র পুরসভা যেটি ‘নির্মল’ তকমা পায়নি। কারণ, শহরের একটি এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ এখনও খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করেন। তা রুখতেই ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার চালু করা হয়েছে।” পুরসভা জানায়, প্রতিটি শৌচাগারে এক সঙ্গে চার জন শৌচকর্ম করতে পারবেন। জলেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এক পুর-আধিকারিক জানান, জল শেষ হলে ট্যাঙ্কার নিয়ে গিয়ে জল ভরা হবে। ভিতরে যে রাসায়নিক রয়েছে, তাতে মল বর্জ্য-জলে রূপান্তরিত হবে।
কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক কিছু দিন আগে জানায়, স্বচ্ছ ভারত মিশনের (শহর) আওতায় দেশের ৪,৩৭২টি পুরসভার মধ্যে পুরুলিয়া ছাড়া বাকি সব ক’টিই ‘প্রকাশ্য শৌচমুক্ত শহর’ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। ১৮৩ বছরের পুরনো পুরুলিয়া শহরে দু’টি ওয়ার্ডের (১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড) বেশ কিছু মানুষের খোলা জায়গায় শৌচের অভ্যাস ঘিরে প্রশ্ন ওঠে তখন। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১২-য় রাজ্যে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তখন সমীক্ষায় দেখা যায়, শহরে প্রায় দু’হাজার পরিবারের শৌচালয় নেই। মূলত বস্তি এলাকায় ওই পরিবারগুলির বাস। সে তথ্যের ভিত্তিতে শৌচালয় তৈরির কাজ শুরু হয়। পরে আরও শতাধিক পরিবারের নাম যুক্ত হয় তালিকায়।
পুরসভার এক আধিকারিক জানান, লক্ষ্য ছিল প্রায় ২,১০০ শৌচালয় তৈরি করা। যাঁদের শৌচালয় তৈরির জমি ছিল, তেমন প্রতিটি পরিবার তা পেয়েছে। কয়েকটি বস্তিতে পরিবার প্রতি শৌচাগার তৈরির জমি না থাকায়, ১৫টি ‘কমিউনিটি টয়লেট’ তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রতিদিন শহরে যাতায়াত করা মানুষজনের জন্যও গোটা দশেক শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু একটি এলাকার বস্তির বাসিন্দাদের একাংশের শৌচাগারের সমস্যা এখনও মেটেনি বলে পুরসভা জানায়।
পুরপ্রধান বলেন, “রাহেড়গোড়া (১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড) এলাকার মানুষজনের একাংশের শৌচাগার সমস্যায় এখনও ‘নির্মল’ তকমা মেলেনি পুরসভার। সেখানে বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের শৌচাগার তৈরির জমি নেই। কিছু মানুষ বাধ্য হয়ে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করেন। ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার সে সমস্যা মেটাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।” এলাকার কাউন্সিলর সমীরণ রায়ও জানান, ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার ব্যবহার শুরু হলে সমস্যা মিটবে। পুরপ্রধান আরও বলেন, “আপাতত মহিলাদের জন্য পরিষেবা চালু হয়েছে। খোলা জায়গায় যাতে আর শৌচ না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রচার চালানো হবে। এলাকার স্বনির্ভর দলগুলিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিষেবা কেমন চলছে, তা দেখে ভবিষ্যতে পুরুষদের জন্যও পরিষেবা চালু হবে।” শৌচাগার ব্যবহার না করলে জরিমানা চালুর ভাবনা-চিন্তাও রয়েছে বলে জানান তিনি।
শৌচাগার দেখভালের দায়িত্ব পাওয়া এলাকার একটি ক্লাবের প্রতিনিধি তানু ধীবর বলেন, “ভোর ৪টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শৌচাগার খোলা রাখা হচ্ছে। এলাকার মহিলারাই দেখভাল করছেন।” দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্তদের পারিশ্রমিকের বিষয়টি ভাবা হোক, উঠছে সে দাবিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy