Advertisement
E-Paper

খাটের নীচে লুকোনো জবকার্ড, পাসবই বের করে ফেরত পঞ্চায়েত সদস্য দম্পতির

বিক্ষোভের মুখে পড়ে বাড়ি থেকে শ’য়ে শ’য়ে ব্যাঙ্কের পাসবই আর জবকার্ড বের করে দিলেন সেই নেতা।

জনরোষ: খাটের নীচে লুকোনো জবকার্ড, পাসবই বের করছেন পঞ্চায়েত সদস্য আবদুল রাফে মণ্ডল। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

জনরোষ: খাটের নীচে লুকোনো জবকার্ড, পাসবই বের করছেন পঞ্চায়েত সদস্য আবদুল রাফে মণ্ডল। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯ ০০:৩৩
Share
Save

অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন ছিল এলাকাবাসীর একাংশের মনে। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যর শান-বাঁধানো প্রাসাদোপম বাড়ি, গাড়ি, ট্রাক্টর, পাওয়ার-টিলার, জমি আসছে কোথা থেকে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী মিলে চার বারের পঞ্চায়েত সদস্য ওই দম্পতির বিরুদ্ধে এককাট্টা হতে পারেননি গ্রামের কেউ-ই।

রাজ্য জুড়ে কাটমানি-বিক্ষোভের আঁচ সেই গ্রামে পৌঁছতেই সাহস পেলেন তাঁরা। স্থানীয় সূত্রে খবর, কাটমানি ফেরতের দাবিতে মঙ্গলবার পঞ্চায়েতের সেই সদস্যর বাড়ি ঘেরাও করলেন গ্রামবাসীরা। বিক্ষোভের মুখে পড়ে বাড়ি থেকে শ’য়ে শ’য়ে ব্যাঙ্কের পাসবই আর জবকার্ড বের করে দিলেন সেই নেতা।

এ দিন এমনই কাণ্ড ঘটল মাড়গ্রাম থানার শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ এলাকাবাসীর একাংশ হাঁসন ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা আবদুল রাফে মণ্ডলের বাড়ির সামনে ভিড় জমান। গ্রামবাসীদের চাপের মুখে পড়ে তাঁর কাছে রাখা এলাকার অনেকের জবকার্ড ফেরত দেন ওই পঞ্চায়েত সদস্য। পরে এলাকায় পুলিশ পৌঁছলে আবদুল রাফের কাছে থাকা এলাকার কয়েক জনের ডাকঘরের অ্যাকাউন্টের পাসবই ফেরতেরও দাবি তোলেন। সে সবও ফিরিয়ে দেন ওই পঞ্চায়েত সদস্য। ঘটনার খবর পেয়ে রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও সমরকুমার দত্ত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

উপভোক্তাদের নথি ফেরানো হচ্ছে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

কয়েক জন এলাকাবাসী জানান, হাঁসন ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রাম সংসদের সদস্য আবদুল রাফে মণ্ডল। তিনি ও তাঁর স্ত্রী নাসিম বানু চার বার পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছেন। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, ৭-৮ বছর ধরে আবদুল রাফে মণ্ডল গ্রামবাসীদের অনেকের ডাকঘরের পাসবই রেখে দিয়েছিলেন। এলাকার অনেকের জবকার্ড-ও ছিল তাঁর কাছেই। অভিযোগ, এ ভাবে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে উপভোক্তাদের প্রাপ্য টাকা ওই দম্পতি আত্মসাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার নামে অনেক উপভোক্তার কাছ থেকে ৬-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন তাঁরা।

গ্রামবাসীদের অনেকের অভিযোগ, কারও কারও জবকার্ড নবীকরণের কথা বলেও নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন আবদুল। কেউ পাসবই বা জবকার্ড দিতে রাজি না হলে, তাঁদের কাছ থেকে জোর করে সে সব কেড়ে নিতেন ওই পঞ্চায়েত সদস্য। গ্রামবাসীদের অনেকে পঞ্চায়েত সদস্যকে বিশ্বাস করে বা ভয়ে নিজেদের পাসবই, জবকার্ড তাঁর কাছে রাখতে দিয়েছিলেন।

এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্যের এমন শান-বাঁধানো, অট্টালিকার মতো বাড়ি আগে ছিল না। মাটির বাড়িতে থাকতেন। কয়েক দিন আগে তিনি একটি দামী গাড়িও কেনেন। গ্রামে অনেক জায়গায় জমিও কিনেছেন। চাষ করার জন্য কিনেছেন ট্রাক্টর, পাওয়ার-টিলার। তাঁদের অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে অনেককে প্রাপ্য টাকা না দিয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় উপভোক্তাদের কাছ থেকে কাটমানি তুলে ওই সব সম্পত্তি কিনেছেন আবদুল।

অভিযুক্তের বাড়িতে ভিড়। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

মঙ্গলবার সকালে রামপুরহাট-দুনিগ্রাম রাস্তা দিয়ে শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে পঞ্চায়েত সদস্য আবদুল রাফে মণ্ডলের বাড়িতে পৌঁছে দেখা যায়, শ’দুয়েক মানুষ সেখানে ভিড় জমিয়েছেন। রয়েছে পুলিশও। পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ির বারান্দায় বসে গ্রামবাসীদের কারও জবকার্ড, কারও পাসবই নাম ধরে ধরে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। ঘরের ভিতরে গিয়ে খাটের নীচ থেকে প্রচুর পাসবই, জবকার্ড বের করে বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন পঞ্চায়েত সদস্য আবদুল রাফে মণ্ডল।

উপভোক্তাদের কয়েক জন অভিযোগ করলেন, তাঁদের অনেকের পাসবইয়ের পাতা ছেঁড়া বা আঁঠা দিয়ে লাগানো। পাসবইয়ে উল্লেখ করা টাকাও তাঁরা কখনও হাতে পাননি।

উপভোক্তাদের পাসবই আর জবকার্ড কেন বাড়িতে রেখেছেন? ওই পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি, ‘‘জবকার্ড নবীকরণের জন্য উপভোক্তারা নিজেরাই আমার কাছে তা রেখে গিয়েছেন। ব্যাঙ্কে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য রেখেছেন পাসবই।’’ উপভোক্তাদের প্রাপ্য টাকা লোপাট করা বা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তিনি মিথ্যা বলে দাবি করেন।

পঞ্চায়েত সদস্যর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয়ে বীরভূম জেলা পরিষদের সদস্য টোকন সরকার বলেন, ‘‘দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছি। ওই পঞ্চায়েত সদস্যকে সতর্ক করা হচ্ছে।’’

Margram Cut Money Agitation Pass Book Job Card

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।