পাকবিড়রায় অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র
মানভূমের মাতৃভাষা বাংলা রাখার দাবিতে ৬৭ বছর আগে, ১৯৫৬ সালের ২০ এপ্রিল পুঞ্চার পাকবিড়রা গ্রাম থেকে এক হাজারের বেশি সত্যাগ্রহী কলকাতা পর্যন্ত পদযাত্রা করেছিলেন। যা কলকাতায় পৌঁছেছিল ৭ মে। বৃহস্পতিবার পাকবিড়রায় লোকসেবক সঙ্ঘ ৬৭টি মোমবাতি জ্বেলে সেই ঐতিহাসিক পদযাত্রার স্মরণ অনুষ্ঠানের সূচনা করল। লোকসেবক সঙ্ঘের সচিব সুশীল মাহাতোজানান, এ দিন পাকবিড়রায় আলোচনাসভা ও গানে সত্যাগ্রহ অভিযানের ৬৭তম বর্ষ উদ্যাপিত হয়।
জেলার ইতিহাস গবেষক তথা মানবাজারের মানভূম কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক প্রদীপ মণ্ডলের কথায়, ‘‘বিহার রাজ্যের অন্তর্গত মানভূম জেলার বাসিন্দারা বাংলাভাষি ছিলেন। তাই মানভূম জেলাকে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলন চলেছিল। ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর মানভূম জেলার খণ্ডিত অংশ পুরুলিয়া জেলা নাম নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়।’’
তিনি জানান, লোকসেবক সঙ্ঘের পরিচালনায় পুঞ্চার পাকবিড়রা থেকে সত্যাগ্রহীদের পদযাত্রা আন্দোলনের শেষ পর্যায় ছিল। লাগাতার দীর্ঘ আন্দোলনের চাপে তার আগেই রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানভূম জেলার ১৬টি থানা নিয়ে পুরুলিয়া জেলা পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে খসড়া তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সত্যাগ্রহীরা অখণ্ড মানভূম জেলার পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে অনড় ছিলেন। তবে তাঁদের দাবি পূরণ হয়নি। আন্দোলনে রাশ টানতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু বাংলা-বিহার সংযুক্তিকরণ চেয়েছিলেন। সত্যাগ্রহীরা বাংলা-বিহার সংযুক্তিকরণ সিদ্ধান্ত বাতিল, মানভূমে মাতৃভাষা বাংলা রক্ষা কার্যকর করা ও ভাষা ভিত্তিক প্রদেশ গঠনের দাবি কার্যকরী করা— পদযাত্রার মাধ্যমে এই দাবিগুলি তুলেছিলেন।
এ দিন সকালে পুঞ্চা থানা মোড়ে পথসভায় আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। ভজহরি মাহাতো, জনকল্যাণ সমিতির তরফে দেবরাজ মাহাতো, বংশীধর সিংহ বলেন, ‘‘আলোচনার মাধ্যমে সত্যাগ্রহীদের ঐতিহাসিক পদযাত্রাকে শ্রদ্ধা জানানোর চেষ্টা করেছি।’’ সুশীলবাবু বলেন, ‘‘মানভূমের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এমন কয়েকজন ভাষা সেনানিএখনও রয়েছেন। তবে বয়সের ভারে কাউকে অনুষ্ঠানে হাজির করা সম্ভব হয়নি।’’ ২০০৬ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পাকবিড়রায় এসে সত্যাগ্রহীদের সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন ও সৌধ স্মারকের শিলান্যাস করেছিলেন। সভাধিপতি সুজয় বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পাকবিড়রা একটি ঐতিহাসিক স্থল। পর্যটকদের দর্শনের জন্য জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতের আর্থিক বরাদ্দে ঐতিহাসিক পদযাত্রা স্মরণে সৌধের পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy