Advertisement
২৩ জানুয়ারি ২০২৫

দাদাকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার ভাই

রাতেই ঝালদা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ঝাড়খণ্ডের রাঁচীর একটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কৃত্তিবাসকে। পরের দিন ভোরে মারা যান ওই যুবক।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

দাদাকে কোপানোর পরে বাইরে থেকে আততায়ীরা এসে খুন করেছিল বলে গল্প সাজিয়েছিল ভাই। ঝালদার পাটঝালদা গ্রামের কৃত্তিবাস কুইরি (২৯) খুনের ঘটনায় তাঁরই ভাইকে গ্রেফতারের পরে এমন দাবি করল পুলিশ।

বছর চোদ্দোর ওই কিশোর তাঁদের কাছে জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। ওই কিশোর ও তার দাদা যে ঘরে শুয়েছিল, সেই তক্তপোশের তলা থেকে ধারাল অস্ত্রটিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই শুক্রবার সন্ধ্যায় অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ওই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার ধৃতকে পুরুলিয়ার জুভেনাইল আদালতে তোলা হলে তাকে হোমে পাঠানোর নির্দেশ

দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার রাতে খুনের ঘটনাটি ঘটে। এক তলার পাকা ঘরে ভাইয়ের সঙ্গে শুয়েছিলেন কৃষিজীবী কৃত্তিবাস। ওই ঘরের সামনে মাটির বাড়িতে শুয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা। রাত প্রায় পৌনে দশটা নাগাদ কৃত্তিবাসের ভাই চিৎকার করে লোক ডাকে। সে দাবি করেছিল, ছাদের খোলা দরজা দিয়ে এক বা একাধিক আততায়ী ঘরে ঢুকে অন্ধকারের মধ্যে তার দাদাকে এলোপাথাড়ি কোপায়।

রাতেই ঝালদা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ঝাড়খণ্ডের রাঁচীর একটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কৃত্তিবাসকে। পরের দিন ভোরে মারা যান ওই যুবক। সৎকার সেরে মঙ্গলবার রাতে নিহতের বাবা রাধাগোবিন্দ কুইরি ছেলের খুনের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে একটা খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

এই ঘটনায় অনেকেই তাজ্জব। কিন্তু নৃশংস ভাবে কেন দাদাকে খুন করল সে? তদন্তকারীদের দাবি, ধৃত কিশোর জেরার সময়ে তাঁদের কাছে দাবি করেছে, কৃত্তিবাস প্রতিদিন রাত জেগে এক মহিলার সঙ্গে ফোনে গল্প করতেন। তা নিয়ে তাদের বাড়িতে প্রায় দিন অশান্তি লেগে থাকত। ওই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে দাদাকে অনেকবার সে বারণ করেছিল বলে দাবি করেছে ওই কিশোর। কিন্তু কৃত্তিবাস তা কানে নেননি। সোমবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় সেই মেয়েটির সঙ্গে তার দাদার পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা তার কানে এলে ওই কিশোর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ বচসা চলে। সেই সময় সে রাগের মাথায় ঘরের এক কোণায় রাখা একটি কাটারি নিয়ে দাদাকে কোপাতে শুরু করে বলে পুলিশের দাবি। কৃত্তিবাস মারা গিয়েছেন, বুঝে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ওই কিশোর চিৎকার করে লোকজন ডেকে খুনের গল্প সাজায় বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘এক মহিলার সঙ্গে কথা বলায় ওই দিন দাদা-ভাইয়ের মধ্যে বচসা শুরু হয়। সেই সময়েই ওই কিশোর তার দাদাকে কোপায় বলে সে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।’’

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, তদন্তের গোড়াতেই তাঁদের খটকা লেগেছিল। প্রথমত অন্ধকার ঘরে দু’জন ঘুমাচ্ছিল। বাইরে থেকে আততায়ী যদি আসে, তাহলে কোন জন কৃত্তিবাস, সে জানল কী করে? মুখে যদি আলো ফেলে, তাহলে ওদের জেগে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। তার উপরে, নিহতের দেহে একাধিক কোপানোর চিহ্ন দেখা গেলেও, প্রথম কোপের পরেই চিৎকারে পাশে থাকা ভাইয়ের জেগে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু সে দাবি করেছিল, বেশ কয়েকবার কোপানোর পরে তার ঘুম ভেঙেছিল। এরই মধ্যে পুলিশের কাছে আরও কিছু তথ্য আসে। তারপরে জেরায় চেপে ধরতেই সে কান্নায় ভেঙে পড়ে সব স্বীকার করে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

শনিবার নিহতের বাবা রাধাগোবিন্দ কুইরি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘বড় ছেলেটা অকালে চলে গেল। ছোট ছেলেকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেল। সংসারটাই তছনছ হয়ে গেল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest Crime Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy