রামপুরহাট স্টেশনে সাফাই। বুধবার। ছবি সব্যসাচী ইসলাম
সকাল ৬টা ১৫ মিনিট। ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনে বর্ধমানগামী প্রথম লোকাল ট্রেন ছাড়তেই আট মাসের আগের সেই পরিচিত দৃশ্য ফিরে এলে রামপুরহাট স্টেশনে। তারাপীঠ ফেরত এক দর্শনার্থী ছুটছিলেন ট্রেন ধরার জন্য। কর্তব্যরত রেলপুলিশ অবশ্য ওই যাত্রীর দৌড় থামিয়ে দেন। ট্রেন ততক্ষণে স্টেশন ছাড়িয়ে ৫০০ মিটার পেরিয়ে গিয়েছে।
আট মাসেরও বেশি সময় লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন বন্ধ থাকার পরে বুধবার থেকে চালু হল ওই পরিষেবা। প্রথম দিনই যাত্রীদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রামপুরহাট স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ধমান যাওয়ার জন্য ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা লোকাল ট্রেনে যাত্রীদের ভালই ভিড়। কামরার ভিতরে রেল কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তি মেনে যাত্রীরা দূরত্ব বিধি মেনে আসনে বসে আছেন। প্ল্যাটফর্মে আরপিএফ কর্মীরা যাত্রীদের মাস্ক পরা এবং দূরত্ব বিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। রেলকর্মীদের মধ্যেও তৎপরতা। এ দিনই সকাল সাড়ে সাতটায় ছাড়ে রামপুরহাট-সাহেবগঞ্জ লোকাল ট্রেন। ওই ট্রেনে অবশ্য যাত্রী কমই ছিল।
তবে, ট্রেনের মধ্যে কোনও হকারকে এ দিন দেখা যায়নি। এত দিন পরে সুলভে ও দ্রুত গন্তব্যে যাওয়ার মূল ভরসা লোকাল ট্রেনে চেপে সফর করার সুযোগ পেয়ে খুশি যাত্রীরা। রামপুরহাট কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের দুই ছাত্রী গার্গী পরভীন ও লক্ষ্মী প্রসাদ জানালেন, আট মাস পরে তাঁরা ট্রেনে চেপে বর্ধমানে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যেতে পারছেন। দীর্ঘ লকডাউন এবং তার পরে আনলক পর্বে মাত্র একবার বাসে চেপে বর্ধমান গিয়েছিলেন দু’জনে। আর যাওয়ার ঝুঁকি নিতে পারেননি। ফলে, পড়াশোনার ক্ষতিও হয়েছে।
নলহাটি, মুরারই, রাজগ্রাম রেললাইনে ট্রেন চালু হওয়ায় খুশি সেখানকার বাসিন্দারা। কারণ, তাঁদের কলকাতা বা বর্ধমান যাতায়াতে মূল ভরসা ট্রেন। এত দিন ট্রেন বন্ধ থাকায় তাঁরা চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। মুরারই থানার হরিশপুরের বাসিন্দা, ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা নার্গিস বিবি দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছেন। বর্ধমানে ডাক্তার দেখান। এত দিন ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে কোনও মতে চিকিৎসা চালিয়ে এসেছেন। ট্রেন চালু হতেই এ দিন সকালে বর্ধমান রওনা দিয়েছেন ডাক্তার দেখাতে। নলহাটি, মুরারই, রাজগ্রাম ব্যবসায়ীরাও খুশি। তাঁরা জানিয়েছেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার ফলে এত দিন ঝাড়খণ্ডের ক্রেতারা বাজারে আসতে পারছিলেন না। ফলে, তাঁদের লোকসান হচ্ছিল। এ দিন থেকে ঝাড়খণ্ডের ক্রেতারা বাজারে আসতেই কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
দীর্ঘ আট মাস পরে রামপুরহাট বর্ধমান লোকাল চালু হলেও ট্রেনের ভিতরে পরিচ্ছনতা যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন। রামপুরহাট স্টেশনে সকালে স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা ছিল না বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
সাঁইথিয়া, আমোদপুর, বোলপুর সব স্টেশনেই নিত্যযাত্রী থেকে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে ট্রেনে উঠে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য উন্মাদনা লক্ষ্য করা গিয়েছে। দীর্ঘদিন পরে ট্রেনে চেপে বোলপুর থেকে রামপুরহাটে আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে পেরে যেমন খুশি সুস্মিতা কর্মকার নামে এক বধূ, তেমনই খুশি বেসরকারি অফিসের কর্মী দেবাশিস ভট্টাচার্য।
সাঁইথিয়া-অণ্ডাল, রামপুরহাট-আজিমগঞ্জ এবং রামপুরহাট-জসিডি শাখাতেও এ দিন ট্রেন চালু হয়। তবে অণ্ডাল-সাঁইথিয়া লাইনে সকালের দিকে কোনও ট্রেন না-দেওয়ায় সাঁইথিয়া, সিউড়ি, দুবরাজপুরের নিত্যযাত্রীরা অসুবিধায় পড়েছেন। আবার অণ্ডাল থেকে সাঁইথিয়া ফেরার ক্ষেত্রেও দীর্ঘক্ষণ ট্রেন না-থাকার ফলে অসুবিধার কথা জানিয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। তবে, সব ছাপিয়ে লোকাল চালু হয়েছে, তাতেই খুশি নিত্যযাত্রীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy