খটঙ্গার রাস্তায় ডাঁই করে রাখা বালি অবৈধ কিনা সরেজমিন দেখলেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু ও এসপি শ্যাম সিংহ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী বর্ষাকালে (১৫ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর) নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ। এই সময় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে বালি মজুত করে রাখেন বালি কারবারিরা। অভিযোগ, অনুমতি নিলেও, প্রশাসনিক নির্দেশ অগ্রাহ্য করে বালি পাহাড়প্রমাণ উঁচু করে রাস্তার দু’দিকে জড়ো করে রাখছেন বালি কারবারিরা।
বালি মজুত করার সরকারি নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখেতে বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালালেন বীরভূম জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা।
জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি এবং পুলিশ-প্রশাসনের একগুচ্ছ আধিকারিক এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ প্রথম যান ময়ূরাক্ষী নদীর ধার ঘেঁষা সিউড়ি ১ ব্লকের খটঙ্গা পঞ্চায়েতের কেঁদুলি গ্রামে। প্রশাসন সূত্রে খবর, নদীর শুধু এ পাশেই অন্তত ১৫-২০টি বালিঘাট রয়েছে। সেখান থেকে বর্ষাকালে বিক্রির জন্য সিউড়ি-আমজোড়া রাস্তার দু’ধারে বিভিন্ন জায়গায় বিপুল পরিমাণ বালি মজুত করে রাখা চোখে পড়ে প্রশাসনের কর্তাদের। নদীর তীর বরাবরও মজুত রয়েছে বালি। বেশ কিছু মজুত বালি প্রায় তাল গাছ ছুঁয়েছে। একই ভাবে জেলার বিভিন্ন অংশে কোথাও জাতীয় সড়ক, কোথাও বা রাজ্য সড়ক ঘেঁষে বালির পাহাড়। কেঁদুলির পরে অভিযান হয় ইলামাবাজারে। দুবরাজপুর ব্লক ঘেঁষা অজয় নদ থেকে উত্তোলন করা বালির মজুত খতিয়ে দেখেন প্রশাসনিক কর্তারা।
জেলাশাসক বলেন, ‘‘বর্ষাকালে নদীগর্ভ থেকে বালি উত্তোলন বন্ধ থাকে। সেটা বন্ধই আছে। তবে, বালি মজুত নিয়ম মেনে হয়েছে কিনা দেখতে এসেছিলাম। এসে দেখছি, কিছু কিছু জায়গায় মজুত বালির উচ্চতা অনেক বেশি। এবং রাস্তার ধার ঘেঁষে। যেটা সমস্যার। যাঁরা আইন ভেঙেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক জন বালি কারবারির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হচ্ছে। যে যে এলাকায় বালি মজুত রয়েছে, এবং কোনও লিজপ্রাপ্তের বালির স্টকে বিচ্যুতি রয়েছে, সেখানকার ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের পক্ষ থেকে জেলাশাসককে একটি রিপোর্ট পাঠাতে পাঠাতে বলা হয়েছে এ দিনই। ব্যবস্থা নেওয়া হবে তার পরেই। অভিযান চলবে আরও কিছু দিন। এরই মধ্যে প্রায় ২৫ জন বিলাঘাটের লিজপ্রাপ্তের কাছ থেকে ১ কোটি টাকারও বেশি জরিমানা করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
এই মূহূর্তে ময়ূরাক্ষী, অজয়-সহ বিভিন্ন নদীঘাট থেকে বালি তোলার দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি বা লিজ রয়েছে ১৩২ জনের। প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, তাঁদের সকলেই বর্ষাকালে বিক্রির জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমতি নিয়েই বালি মজুত করেছেন। কিন্তু, মজুত করার জন্য যে শর্ত, সেটাই মানছেন না অনেকে। যদিও স্যান্ড মাইনস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের দাবি, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে, নিয়ম মেনেই বালি মজুত করা হয়েছিল। উচ্চতা কিছু ক্ষেত্রে বেশি ঠিকই। কিন্তু ২১ জুলাই জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং ২৩ তারিখ বিডিও-দের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল সাত দিনের মধ্যে উচ্চতা কমাতে। সেই সময়সীমা শেষের আগেই অভিযান কেন হল, প্রশ্ন বালি কারবারিদের।
অ্যাসোসিয়েশেনের জেলা সভাপতি তহিদ আলম বলছেন, ‘‘প্রত্যেক লেসি বা লিজপ্রাপ্তকেই বহু টাকা খরচ করে লিজ পেতে হয়েছে। যেহেতু এই সময় বালি উঠছে না, তাই কারবার সচল রাখতে হলে বালি মজুত রাখতেই হয়। তার জন্য প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে। স্টকও মাপা হয়েছে। কিন্তু একেবারে নির্দিষ্ট উচ্চতা মেপে হয়তো কিছু জায়গায় বালি মজুত ছিল না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অন্যায় করলে প্রশাসন পদক্ষেপ করুক। তবে যে ভাবে শক্তি প্রয়োগ হচ্ছে, তাতে ভিন্ন পথে হাঁটতে হবে।’’
প্রশাসন অবশ্য অভিযানে অনড়। অতিরিক্ত জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘প্রশ্নটা হচ্ছে, বহুবার বলার পরেও নিয়ম মানা হচ্ছে না কেন। বালির উচ্চতা পাঁচ ফুট বলা থাকলেও কোথাও কোথাও ৩০-৪০ উচ্চতার বালি কেন থাকবে? আইন তো মানতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy