Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Lightning

Lightning strike: নৌকায় বাজ পড়ে মৃত এক, জখম পাঁচ

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই দিন রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ বিষ্ণুপুরের দমদমা ঘাটে আসার জন্য বাগড়া ঘাটে অপেক্ষা করছিল নৌকাটি।

শূন্যতা: শোকে কাতর অভিজিৎ দে-র (ইনসেটে) মা লক্ষ্মী দে। নিজস্ব চিত্র

শূন্যতা: শোকে কাতর অভিজিৎ দে-র (ইনসেটে) মা লক্ষ্মী দে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
 বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৩
Share: Save:

দিনের শেষ খেয়ায় তখন বসে দুই চালক-সহ চার যাত্রী। আচমকা শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টি। মাথা বাঁচাতে সকলে নৌকার ত্রিপলের নীচে আশ্রয় নিলেও শেষরক্ষা হয়নি। নৌকায় বাজ পড়ে মৃত্যু হয় এক যুবকের। রবিবার রাতে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের দ্বারকেশ্বর নদের বাগড়া ফেরিঘাটের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃত অভিজিৎ দে (৩০) বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা-গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতের দমদমার বাসিন্দা। আহত পাঁচ জনের চিকিৎসা চলছে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঘটনার জেরে, সোমবার দমদমা ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই দিন রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ বিষ্ণুপুরের দমদমা ঘাটে আসার জন্য বাগড়া ঘাটে অপেক্ষা করছিল নৌকাটি। আচমকা ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে নৌকোর উপরে ত্রিপল চাপা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট আটকানোর চেষ্টা করতে থাকেন নৌকার চালক বাগড়ার বাসিন্দা বাসুদেব বাগদি ও কাটনার মীর আজিজুল। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে মোটরবাইক নৌকায় রেখে ত্রিপলের ভেতরে ঢুকে পড়েন অভিজিৎ। তিনি পাত্রসায়রের পায়রাশোল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। আর এক যাত্রী রাজু ওরফে বাপি লোহার বন্ধু অভিজিতের কাছ ঘেঁষেই বসেছিলেন, লোহার তৈরি নৌকার হালে ঠেস দিয়ে। হাত দুই তিন দূরে ত্রিপলের ভেতরে বসেছিলেন উলিয়াড়ার অরূপ বাগ। আর বর্ষাতি পরে, নৌকার এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা কমল তপাদার। আচমকা নৌকার উপরে বাজ পড়লে জ্ঞান হারান ত্রিপলে থাকা পাঁচ জন।

হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সোমবার রীতিমতো শিউরে উঠছিলেন কমল। তিনি বলেন, “ত্রিপলের ভেতরে জায়গা না হওয়ায় বাইরে নৌকায় দাঁড়িয়েছিলাম। আচমকা কানফাটা আওয়াজের সঙ্গে প্রচণ্ড একটা ঝাঁকুনি লাগে। গিয়ে পড়লাম নৌকার উপরে থাকা একটি যন্ত্রের উপরে। কানে কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না। মাথার পিছনে একটা চাপা যন্ত্রণা হচ্ছিল। কষ্ট করে এগিয়ে গিয়ে ত্রিপল টেনে দেখি, সকলে পড়ে রয়েছে। রাজুর বুকের একটা দিক ঝলসে গিয়েছে। সে দৃশ্য
ভোলার নয়।”

এর পরে, স্থানীয়েরা তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষার পরে, চিকিৎসকেরা অভিজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন।

অভিজিতের অকালমৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। এ দিন দমদমায় তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর মা বার বার ছেলের নাম নিয়ে জ্ঞান হারাচ্ছেন। মেঝেতে প্রায় নিথর অবস্থায় পড়ে স্ত্রী। চার বছরের শিশুটি পড়শির কোলে। কথা বলার অবস্থায় নেই তাঁর বাবা সুনীল দে-ও। এক কথাই আউড়ে চলেছেন, “এক সঙ্গে আনাজ বিক্রি করতে যেতাম। এর পরে, একা একা কী করে যাব? নাতিটাকেই বা কে মানুষ করবে? তোকে বেরোতে না দিলে এটা হত না!”

অভিজিতের বন্ধু ভৈরব বাউড়ি, বাপি লোহার, বিজয় বাউড়িদেরও আক্ষেপ, “রাতে এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার কথা ছিল। মনকে বোঝাতে পারছি না। দ্বারকেশ্বরে একটা ভাসাপুল থাকলে এ ঘটনা দেখতে হত না।” দুপুরে মৃতের বাড়িতে যান তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলোক মুখোপাধ্যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Lightning Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy