n ফরিদের বাড়ি। কোতুলপুরের চোরকোলা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
সবাই মিলে গিয়েছিলেন। ফেরা হয়নি শুধু তাঁর। বৃহস্পতিবার কলকাতায় নবান্ন অভিযান জখম হয়ে সোমবার মৃত্যু হয়েছে ডিওয়াইএফ- কোতুলপুর গোপীনাথপুর ইউনিটের সম্পাদক ফরিদ ওরফে মইদুল ইসলাম মিদ্যার। যার পরে, সিপিএমের যুব সংগঠনের কোতুলপুরের অন্য কর্মীদের তাড়া করছে সেই দিনের স্মৃতি।
কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার? ডিওয়াইএফ-এর কোতুলপুর ব্লকের সদ্য প্রাক্তন সম্পাদক তথা সিপিএমের কোতুলপুর (উত্তর) এরিয়া কমিটির সদস্য সৈয়দ তহিদুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার আরামবাগ থেকে এক সঙ্গে তাঁরা সবাই হাওড়াগামী ট্রেনে উঠেছিলেন। ট্রেন থেকে নেমে মিছিল করে কলেজ স্ট্রিটে যান। তহিদুল বলেন, “মিছিলে ফরিদ ঠিক আমার পিছনেই ছিল। এসএন ব্যানার্জি রোড ধরে হাঁটছিলাম। ডোরিনা ক্রসিং-এর আগে পুলিশ মিছিল আটকায়। আচমকাই জল কামান চলতে থাকে। তার পরে টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটে। চোখে ভাল দেখতে পাচ্ছিলাম না।’’
তহিদুল জানান, এক মহিলা কর্মী ফুটপাতে পড়ে থাকা লোহার ব্যারিকেডে পা জড়িয়ে পড়ে গিয়ে সংজ্ঞা হারিয়েছিলেন। তাঁকেই উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘তার মধ্যেই দেখি, দু’-তিন জন পুলিশ ফরিদকে লাঠিপেটা করছে। মাটিতে পড়ে গিয়ে ও হাত জোড় করে বলছে, ‘আমাকে মারবেন না’। তবুও মারছে। পরে জানতে পারি ফরিদ জখম হয়ে চিকিৎসাধীন।’’
ডিওয়াইএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে ফরিদ সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। গ্রামের অনেকেই অবশ্য তাঁর রাজনৈতিক সক্রিয়তার কথা জানতেন না। স্ত্রী আলিয়া বেগম জানাচ্ছেন, এলাকায় সিপিএমের সংগঠন পোক্ত না হওয়ায় প্রকাশ্যে রাজনীতি এড়িয়ে চলতেন ফরিদ। তবে তহিদুল জানান, গোড়া থেকেই তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা নজর কেড়েছিল নেতৃত্বের। ভাল স্লোগান দিতে পারতেন বলে মিছিলে সামনের সারিতে রাখা হত। পান ইউনিট সম্পাদকের দায়িত্ব।
বৃহস্পতিবারের মিছিলে ছিলেন প্রাক্তন ডিওয়াইএফ নেতা তথা সিপিএমের বড়জোড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুজয় চৌধুরী। তিনি জানান, ফরিদের প্রায় দুশো মিটার পিছনে হাঁটছিলেন। সুজয়বাবু বলেন, “টিয়ার গ্যাস একটু সরার পর দেখলাম, ফরিদ রাস্তায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মিছিলে থাকা দু’জন কলেজছাত্রী ওর মাথা কোলে নিয়ে বসে মুখে জল দিচ্ছিল। তার পরেই অন্যরা স্ট্রেচারে করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলল। মারের চোটে প্যান্ট ফেটে গিয়েছিল ফরিদের।”
সোমবার ফরিদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে তীব্র ক্ষোভ দেখা গিয়েছে বাম কর্মীদের মধ্যে। এ দিন বাঁকুড়া জেলার নানা জায়গায় কর্মসূচি করে সিপিএম। দুপুরে চোরকোলে ফরিদের বাড়িতে যান ডিওয়াইএফের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভয় মুখোপাধ্যায়, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র, সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি প্রমুখ। বিকেলে কোতুলপুরে মিছিল করে থানায় বিক্ষোভসভা করেন তাঁরা।
বড়জোড়াতেও মিছিল ও প্রতীকী পথ অবরোধ করে থানায় বিক্ষোভসভা করে ডিওয়াইএফ ও এসএফআই। অজিতবাবু বলেন, “তৃণমূলের আমলে শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা চাকরি পাচ্ছেন না। সে কারণেই আন্দোলনে গিয়েছিল ফরিদ। ওকে খুন করেছে পুলিশ। রাজ্যে গণতন্ত্রের কঙ্কাল বেরিয়ে এসেছে এই ঘটনায়।”
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তথা কোতুলপুরের বিধায়ক তথা বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরা বলেন, “মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। তবে কী ভাবে মৃত্যু হল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy