মড়ারের কাছে ডুবে উচ্ছে খেত । ছবি: শুভ্র মিত্র
বর্ষাতেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা নেই। বাধ্য হয়েই ভূগর্ভস্থ জল কিনে ধান রুয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের কৃষকেরা। সেচের জন্য পাওয়া ক্যানালের জলে, সেই জমিই গেল ভেসে।
ক্যানালের মাটির পাড় ভেঙে প্রায় ৩০০ বিঘে চাষজমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এই বিপত্তি ঘটে বিষ্ণুপুর মহকুমার মড়ার পঞ্চায়েতের লাউবাগান গ্রাম লাগোয়া কংসাবতী ক্যানালের বামুন পোলের কাছে।
বিষ্ণুপুরের বিডিও শতদল দত্ত বলেন, ‘‘স্থানীয়ভাবে খবরটা পেয়েছি। কংসাবতী কর্তৃপক্ষ কাজ করছেন। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে কংসাবতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ বিষ্ণুপুর মহকুমায় সেচ দফতরের আধিকারিক অঙ্কুর মিশ্রের আশ্বাস, ‘‘প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। শুক্রবার রাতের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে ২৮ জুলাই জল ছাড়া হলেও তা পুরো মাত্রায় বিষ্ণুপুর লাগোয়া এলাকায় এসে পৌঁছয় বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ। কংসাবতী সেচ ক্যানালের ঘুঘুমোড়া এবং বাসুদেবপুর সেকশনের মধ্যে ১৫৪৫ নম্বর গেট পেরনোর পরে দাগাশোল জঙ্গলের কাছে ঘটনাটি ঘটে। জানা যাচ্ছে, ১২০০ কিউসেক জল এই ক্যানাল পথে অহরহই যায়। তবে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জলের চাপ প্রচুর বেড়ে যায়। ৯৫০ কিউসেক জল বয়ে যাচ্ছিল ক্যানাল দিয়ে। হঠাৎই ক্যানালের মাটির পাড় ভেঙে জল ঢুকে পড়ে কৃষিজমিতে। জলের তলায় চলে যায় ধান থেকে আনাজ।
স্থানীয় চাষি গণেশ লোহার, জালাল মল্লিক, জিতেন সর্দাররা জানালেন, জমিতে এখন মাচা ভর্তি কুঁদরি, পটল, ঝিঙে, করলা। সেই জমিই এই মুহূর্তে প্রায় ১০ ফুট জলের তলায়। ফসল তো গেলই, জমা জলে গোড়া পচে রোগও হবে। তখন বিঘের পর বিঘে জমির চাষ নষ্ট হবে। স্থানীয় কৃষক কুরবান মল্লিক, বাদল টুডু, কমল লোহাররা আবার জানালেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই। তাই কেউ ঘন্টায় ১২০ টাকা, কেউ বা বিঘা প্রতি আড়াই হাজার টাকা চুক্তিতে চায়না বোরো ধান রুয়েছিলেন সবে। জলাভাব মেটাতে সেচের প্রয়োজন ছিল। ক্যানালে জল আসায় চিন্তা দূর হয়েছিল। কিন্তু ক্যানালের পাড় ভেঙে সেই জলই সব ভাসিয়ে দিল। তাঁদের আশঙ্কা, ‘‘সময় কমে আসছে। সঞ্চয়ও তলানিতে। আর ধান চাষ করব কী ভাবে?’’
কৃষকদের অভিযোগ, দায়সারা ভাবে ক্যানাল পরিষ্কার করার জন্যই এই বিপত্তি। আগাছায় ভর্তি ক্যানাল জলের স্রোত ঠিকঠাক বইতে না পারার জন্যই মাটির পাড়ে স্রোত আছড়ে পড়েছে। তার ধাক্কায় মাটি ধসেছে। তাঁদের দাবি, ভবিষ্যতে যাতে এ রকম না হয় সে দিকে নজর দেয়া উচিত সেচ দফতরের। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্যের দাবিও উঠেছে। সেচ দফতরে বিষ্ণুপুর মহকুমার আধিকারিক মানছেন, গত দশ বছর এই সেচ খালের কোনও সংস্কার হয়নি। তবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এ প্রসঙ্গে বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দেবনাথ বাউরি বলেন, ‘‘কৃষকরা আমাদের কাছে এসেছিলেন। বিষয়টি প্রশাসনের সব স্তরে জানানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে কৃষকরা সরকারি সহায়তা পাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy