Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Teachers

পরিকাঠামো, শিক্ষক-ঘাটতি নিয়েই উদ্বেগ

শুধু তাই নয়, গ্রামে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠনের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। সেখানেই পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয় গ্রামের পড়ুয়ারা।

রয়েছে পর্যাপ্ত  শিক্ষক- শিক্ষিকার ঘাটতি।

রয়েছে পর্যাপ্ত শিক্ষক- শিক্ষিকার ঘাটতি। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০০
Share: Save:

ছাত্রসংখ্যা ৭২৭। শিক্ষক রয়েছেন ছ’জন। অর্থাৎ প্রতি প্রায় ১২০ জন ছাত্রপিছু এক জন শিক্ষক। ক্লাসরুমও অপ্রতুল। পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি ব্লকের মুরুলিয়া বেঙ্গলী প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন শুরুর নির্দেশিকা জারির পরে চিন্তায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরিকাঠামো ও শিক্ষকের অভাবে ভোগা স্কুলটিতে কোন যুক্তিতে পঞ্চম শ্রেণি শুরু করা হচ্ছে, প্রশ্ন উঠছে।

শুধু তাই নয়, গ্রামে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠনের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। সেখানেই পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয় গ্রামের পড়ুয়ারা। তার পরেও কেন ইতিমধ্যে অনেক পড়ুয়া থাকা প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি শুরু হচ্ছে, অবাক শিক্ষকমহলও।

ঘটনা হল, জেলার যে ২৪টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি শুরুর নির্দেশিকা জারি হয়েছে, তার বেশির ভাগই পরিকাঠামো ও শিক্ষকের অভাবে ভুগছে বলে দাবি। পাশাপাশি, বেশ কিছু স্কুলের অদূরে রয়েছে হাই স্কুল। ওই সব এলাকার অভিভাবকদের একাংশ জানাচ্ছেন, তাঁরা প্রাথমিকের পরিবর্তে হাই স্কুলেই পঞ্চম শ্রেণিতে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাতে বেশি আগ্রহী।

শিক্ষা দফতরের এই সিদ্ধান্তে প্রাথমিক স্কুল থেকে পঞ্চম উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের ষষ্ঠ শ্রেণিতে হাই স্কুলে ভর্তিতে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হবে বলে মত এবিটিএ-র। সংগঠনের জেলা সভাপতি নিলয় মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ”কোনও হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ ছাত্রেরা সেই স্কুলেরই ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হবে। এর পরে, যদি ওই বা অন্য এলাকার প্রাথমিক স্কুল থেকে পঞ্চম উত্তীর্ণ বেশ কিছু পড়ুয়া সেখানে আসে, কী ভাবে ভর্তির সুযোগ দেবে সংশ্লিষ্ট হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ!” তিনি আরও জানান, এর আগেও বহু স্কুলে প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি শুরু হয়েছিল। কিন্তু দেখা গিয়েছে, দিনে দিনে সেখানে পঞ্চমে ছাত্রসংখ্যা কমেছে।

বাস্তবে তা হতেও দেখা গিয়েছে পুরুলিয়া শহরঘেঁষা সোনাইজুড়ি প্রাথমিক স্কুলে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, ”পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্রসংখ্যা ১৮ থেকে ৬ জনে দাঁড়িয়েছে।” তাঁর অভিজ্ঞতা, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা শহরের অন্য ভাল স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চেয়েও সুযোগ পায়নি। তাই প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণিতে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করতে আগ্রহী নন অভিভাবকদের বড় অংশ। তৃণমূলের পুরুলিয়া প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি বিমলকান্ত মাহাতো বলেন, “পরিকাঠামোর অভাব যেখানে রয়েছে, তা মেটানো হবে। শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। পঠনপাঠনে সমস্যা হলেও তা সাময়িক।”

পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালুর তালিকায় রয়েছে বাঁকুড়ার ৪৫টি প্রাথমিক স্কুলও। তেমনই একটি স্কুল, সোনামুখী গার্লস প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বর্ণালি কুণ্ডু জানান, বর্তমানে ছাত্রীর সংখ্যা ১৬৯। মোট ছ'জন শিক্ষিকা রয়েছেন। পর্যাপ্ত ক্লাসরুমও রয়েছে। তবে পঞ্চম শ্রেণির জন্য কিছু বেঞ্চ প্রয়োজন। তবে অভিভাবকদের একাংশের মতে, পরিকাঠামো মানে শুধু ক্লাসঘর বা বেঞ্চ নয়। পর্যাপ্ত শিক্ষক, শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থাও দরকার।

পাত্রসায়রের এক অভিভাবক বলেন, “হাই স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা অনেক বেশি। পরিকাঠামোও মোটের উপরে ভাল। তা ছাড়া, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তো সেখানেই পাঠাতে হবে। এক বছর প্রাথমিকে রেখে লাভ কী! আবার, বড়জোড়ার ঘুটগড়িয়ার কিছু অভিভাবক জানান, এলাকার হাই স্কুলটি বড় রাস্তার ধারে। ছেলেমেয়েরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠলে আরও একটু বড় হয়ে যাবে। তখন যাতায়াত নিয়ে ভয় থাকবে না।

এবিটিপিএ-র বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি চালুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে অল্প কিছু জায়গায় পরিকাঠামোগত সমস্যা আছে। তা মেটানো দরকার।” তবে বছর দুয়েক আগে পঞ্চম শ্রেণি চালু হলেও এখনও অতিরিক্ত ক্লাসরুমের জন্য কোনও বরাদ্দ হয়নি বলে জানান বড়জোড়ার ন’পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজয় চৌধুরী।

অন্য বিষয়গুলি:

Teachers Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy