চিহ্ন: রাস্তায় বারুদের ছাপ। কুখুডিহি গ্রামে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
সাতসকালে সিউড়ি লাগোয়া গ্রামে ঘুম ভাঙল পরপর বোমা ফাটার শব্দে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘর থেকে উঁকি দিয়ে অনেকে দেখলেন, রাস্তায় বোমা হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে মুখঢাকা দুষ্কৃতীরা। গণ্ডগোল বেঁধেছে তাদেরই দু’দলের মধ্যে।
বুধবার তাতে তুমুল আতঙ্ক ছড়ায় সিউড়ি থানা এলাকার কুখুডিহি গ্রামে। অশান্তির জেরে কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল সিউড়ি-সাঁইথিয়া সড়কে যানচলাচল। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এলাকাবাসী জানান, বোমার আঘাতে দু’পক্ষেরই কয়েক জন আহত হয়েছে।
এ দিন সকালে কুখুডিহি গ্রামে দেখা যায়, রাস্তায় ও বাড়ির দেওয়ালে পোড়া বারুদের দাগ। রাস্তায় পড়ে তাজা বোমা। ফের সংঘর্ষ এড়াতে গ্রাম জুড়ে চলছে পুলিশের টহলদারি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন মানাই মির্ধা গোষ্ঠীর সঙ্গে শেখ আমিরচাঁদ ওরফে সাহেব গোষ্ঠীর লোকেদের সংঘর্ষ বাঁধে। মানাই মির্ধার গোষ্ঠীর লোকদের অভিযোগ, দিনদুয়েক আগে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এলাকায় একটি মোটরবাইক মিছিল করা হয়। শেখ আমিরচাঁদ সহ কয়েক জন সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ওই মিছিল দেখে তাঁরা আশঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। এলাকায় নিজেদের রাশ ধরে রাখতেই আমিরচাঁদ ও তাঁর শাগরেদরা এ দিন বোমাবাজি করে। অভিযোগ, মানাই মির্ধা ও তাঁর অনুগামীদের বাড়ির দিকেও বোমা ছোঁড়া হয়।
মানাই মির্ধার অভিযোগ, ‘‘বোমার আঘাতে আমাদের দলের কয়েক জন আহত হয়েছেন। দুষ্কৃতীরা আমার বাড়ি সামনে এসে বলছিল— মানাইকে বের কর, ওকে মারব। প্রাণভয়ে বাইরে বেরতে পারছিলাম না।
আমাদের দলের এক কর্মীর মেয়ে টিউশন পড়তে যাচ্ছিল, ওর দিকেও বোমা ছোঁড়া হয়।’’
অভিযোগ অস্বীকার করে শেখ আমিরচাঁদের সমর্থকদের বক্তব্য, ‘‘মানাই মির্ধা, মিলন শেখের শাগরেদরা এলাকায় মাদক বিক্রি করে। আমরা প্রতিবাদ করায় বোমাবাজি করেছে।’’ তাঁদের আরও দাবি, ‘‘আমরাই তৃণমূল করি। ওরা এলাকায় দুষ্কৃতী বলেই পরিচিত। ওরা কোন রাজনৈতিক দল করে না।’’
দু’পক্ষের লোকেরা একে অপরের উপর দোষারোপ করলেও, গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, বেআইনি বালিঘাটের দখলকে কেন্দ্র করে মানাই মির্ধা, মিলন শেখের সঙ্গে শেখ আমিরচাঁদ গোষ্ঠীর দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। বছর দুয়েক আগেও বালিঘাটের দখল ঘিরে ওই দুই গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। সে বারও এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজি হয়।
বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘বীরভূম বোমা-বারুদ-পিস্তলের স্তূপে পরিঁত হয়েছে। এ সব তৃণমূলের লোকেরাই করছেন। আমরা প্রশাসনকে বলব, জেলায় মজুত বোমা-বারুদ উদ্ধার করা হোক।’’
তৃণমূলের সিউড়ি ১ ব্লক সভাপতি স্বর্ণশঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘ওই এলাকায় সাহেব নামে এক জন রয়েছে। এলাকায় সমাজবিরোধী হিসেবে পরিচিত। কিছু দিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এখন এলাকা অশান্ত করার চেষ্টা করছেন।’’
কুখুডিহি-কাণ্ড নিয়ে জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দু’পক্ষের কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। ওই ঘটনায়
পুলিশ এখনও পর্যন্ত এক জনকে আটক করেছে।’’
কয়েক দিন আগেই মল্লারপুর, লাভপুর কেঁপেছে বিস্ফোরণে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশি অভিযানে হদিস মিলছে বিস্ফোরক, বোমা, আগ্নেয়াস্ত্রের। গ্রেফতার করা হয়েছে অনেক দুষ্কৃতীকে। কিন্তু তাতেও যে পরিস্থিতি খুব বেশি বদলায়নি, তা ফের স্পষ্ট হল কুখুডিহি গ্রামের ঘটনায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy