তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন পুরভোটে প্রার্থী হতে চেয়ে কোনও ‘ধরাধরি’ বরদাস্ত করা হবে না। তার পরেও তৃণমূলের অন্দরের টানাপড়েন বারবারই প্রকাশ্যে এসে পড়ছে সিউড়িতে। বুধবারই শহরের এক তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ‘ভুতুড়ে’ পোস্টার ছড়ানো হয়। বৃহস্পতিবার একটি ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের এক কাউন্সিলরকে পুনরায় প্রার্থী করার দাবি তোলেন দলেরই নেতা-কর্মীরা। আরেকটি ওয়ার্ড থেকে দাবি ওঠে প্রাক্তন কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ কাউকে পুনরায় তৃণমূলের প্রার্থী করা যাবে না।
এ দিন বিকেলে সিউড়ি পুর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রায় শ’দেড়েক মহিলা পুরুষ তৃণমূল কর্মী দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে উপস্থিত হন। তাঁরা দাবি করেন যে, ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মণিদীপা মুখোপাধ্যায়কে পুনরায় প্রার্থী করতে হবে। ওই তৃণমূল কর্মীরা স্লোগান তোলেন, ‘‘মণিদীপা মুখোপাধ্যায়কে অন্য কোনও ওয়ার্ডে প্রার্থী করা যাবে না।’’ ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা তনুশ্রী দাস বৈষ্ণব, সুকু মাল, পার্থ মাহাতো বলেন, ‘‘দিদি আমাদের সঙ্গে সব সময় থাকেন। একই সঙ্গে উনি এলাকায় উন্নয়নের কাজ করেছেন তাই তাঁকে আমরা পুনরায় প্রার্থী হিসাবে চাই।’’ তবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগেই এমন দাবি কেন? ওই কর্মীদের জবাব, ‘‘শুনেছি দিদিকে অন্য ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হবে তাই আমরা ছুটে এসেছি।’’ ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অবশ্য বলেন, ‘‘আমি ওঁদের আসতে বলিনি। ওঁরা নিজেরাই এসেছেন। ওঁদের দাবি এলাকায় কাজ হয়েছে তাই আমাকে পুনরায় চাইছেন।’’ গত পুরভোটে বিজেপির প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন মণিদীপা মুখোপাধ্যায়। পরে তিনি তৃণমূলে যোগদান করেন। এই বছর সংরক্ষণ তালিকায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডটি সাধারণ হয়েছে।
প্রায় একই সময়ে শহরেরই ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও এ দিন বিক্ষোভ জানান বাসিন্দারা। ওই ওয়ার্ডটি এ বার সাধারণ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তাই গতবারের কাউন্সিলর মৃন্ময় মুখোপাধ্যায় এ বার নিজে দাঁড়াতে পারবেন না। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের দাবি, তিনি ‘প্রভাব খাটিয়ে’ তাঁর স্ত্রীকে ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী করতে পারেন। এ দিন জনা তিরিশ পুরুষ ও মহিলা তৃণমূলের পার্টি অফিসের সামনে উপস্থিত হন। তাঁদের মধ্যে আগত ফরিদা বিবি, বিদ্যুৎচন্দ্র দাস, মির্জা ইফতিকার হোসেন বলেন, ‘‘মৃন্ময় মুখোপাধ্যায় আমাদের এলাকায় কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করেননি। তিনি সংরক্ষণের জন্য এ বার দাঁড়াতে পারবেন না। কিন্তু আমরা চাই তিনি যাতে তাঁর মনোনীত কোনও মহিলা প্রার্থীকে ওই ওয়ার্ডে টিকিট না দেন। সেই দাবিই জানাতে এসেছি।’’ মৃন্ময় বলেন, ‘‘আমি কাজ করিনি এটা হাস্যকর কথা। এর থেকে বেশি কিছু বলতে চাই না। তবে দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত।’’ গত পুরভোটে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে পরে তৃণমূলে যোগদান করেন মৃন্ময়।
তৃণমূল সূত্রে খবর, টিকিট পাওয়া নিয়ে কোন্দল এড়াতেই জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন পুরভোটের টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ্ব ভাবমূর্তিই বিচার করা হবে। কোনও ধরাধরি বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়েছিলেন খোদ দলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ। সেই সঙ্গে ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরের দলের রিপোর্টও টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে বিচার্য হবে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। এই পরিস্থিতিতে কোনও নেতাই হাল ছাড়তে রাজি নন বলে জানাচ্ছেন দলেরই নীচুতলার কর্মীদের একাংশ।
এ দিনের দুই ঘটনা প্রসঙ্গে পুরভোটের জন্য গঠিত তৃণমূলের সিউড়ি কমিটির চেয়ারম্যান বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কাকে প্রার্থী করলে ভাল হবে, কে কেমন কাজ করছে, মানুষ কাকে গ্রহণ করছেন তা নিয়ে আমাদের পর্যালোচনা চলছে। এর পরে জেলা থেকে রাজ্যের কাছে নাম পাঠানো হবে। এখন প্রার্থী নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ওঁরা ওঁদের দাবি আমাদের কাছে জানিয়েছেন। আমরাও ওঁদের বক্তব্য শুনেছি। তবে আমরা কোনও আশ্বাস দিইনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy