সোমবার মন্দির দর্শনে ভক্তেরা এলেও মেলা না হওয়ায় আক্ষেপ। নিজস্ব চিত্র
প্রশাসনিক অনুমতি না মেলায় এ বারে হচ্ছে না তিনশো বছরের বেশি প্রাচীন রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেড়ো গ্রামের খেলাইচণ্ডী মেলা। মেলা না হওয়ায় হতাশ বেড়ো-সহ আশপাশের গ্রামগুলির বাসিন্দাদের একাংশ জানান, করোনার সংক্রমণে এক বছর মেলা বন্ধ ছিল। তা সকলে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু এ বারে তা মানা যাচ্ছে না। প্রশাসন সূত্রের খবর, মেলা আয়োজনের জন্য তিনটি কমিটি আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু কোনও এক পক্ষকে মেলা করার অনুমতি দেওয়া হলে মেলা ঘিরে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, এই মর্মে রঘুনাথপুর থানার তরফে রিপোর্ট পাওয়ার পরে মেলা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেড়ো গ্রামের চণ্ডীমন্দিরের সেবাইতরা তিনশো বছরের কিছু আগে শুরু করেন মেলা। লাঠি খেলা ছিল মেলার অন্যতম আকর্ষণ। তাই থেকে কালক্রমে মেলার নাম হয় খেলাইচণ্ডীর মেলা। মন্দিরের আগের সেবাইত শ্রীনিবাস আচার্য স্থানীয় এক ব্যক্তিকে মেলা পরিচালনার লিজ় দিয়েছিলেন। ২০১৫ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি ও স্থানীয় চণ্ডীমন্দির উন্নয়ন কমিটি মেলা পরিচালনা করেন। লিজ়ের মেয়াদ শেষে মেলা পরিচালনা করছিল খেলাইচণ্ডী মাতা মেলা কমিটি। মন্দিরের সেবাইত দুয়ারাকানাথ আচার্য কমিটির সভাপতি।
তবে এ বারে খেলাইচণ্ডী মাতার মেলা কমিটি ছাড়াও পশ্চিম বেড়ো চণ্ডীমন্দির উন্নয়ন কমিটি ও পঞ্চগ্রামীণ খেলাইচণ্ডী মেলা কমিটি মেলা আয়োজনের দায়িত্ব চেয়ে প্রশাসনে আবেদন জানায়। সূত্রের খবর, মধ্যস্থতা করতে উদ্যোগী হয়ে পরপর দু’টি সভা ডাকেন রঘুনাথপুরের এসডিও। সেখানে মেলা কমিটিগুলি থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করে একটি কমিটি তৈরি করে সেই কমিটি মেলা পরিচালনা করুক বলে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সব পক্ষ তাতে সম্মত হয়নি। তাই শেষমেষ কোনও পক্ষকেই মেলা করার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন।
এ দিকে, মেলা না হওয়ায় হতাশ বেড়ো পঞ্চায়েত-সহ রঘুনাথপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ অংশের লোকজন। স্থানীয়েরা জানান, পয়লা মাঘ শুরু হওয়া আট দিনের মেলায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হত। কলকাতা, কৃষ্ণনগর, পাঁচমুড়া, শুশুনিয়া থেকে লোহা, কাঠ, পিতল, অ্যালুমনিয়াম,মাটির তৈরি নানা সামগ্রীর দোকান বসত। অন্তত শ’তিনেক দোকান হত মেলায়। গৃহস্থালির নানা সরঞ্জাম থেকে চাষের যন্ত্র, সবই পাওয়া যেত। স্থানীয় শিমূলকুঁদি গ্রামের বাসুদেব মান্ডি বলেন,”চাষের সরঞ্জাম কিনতে বেড়োর মেলার জন্য বছরভর অপেক্ষা করতাম সকলে। মেলা না হওয়ায় হতাশ সকলেই।” মেলা ঘিরে স্থানীয়দের এই ক’দিনে ভাল রোজগার হত। সে সুযোগ এ বার হল না বলে আক্ষেপ বাগিচা গ্রামের রঘুনাথ মাজি, জয়দেব মাজিদের। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা কেশব আচার্য বলেন, “সেই ছোট থেকে মেলা দেখে আসছেন এলাকার প্রবীণ থেকে শুরু করে নতুন প্রজন্ম। মেলা হচ্ছে না, এই কথাই কষ্ট দিচ্ছে সকলকে।” মেলা না হলেও এ দিন রীতি মেনে চণ্ডীমন্দিরের পাশে মাটি ফেলার আয়োজন করা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy