Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Nanur

কেষ্টর প্রশ্রয়েই  কি বাড়বাড়ন্ত ‘খান সাহেবের’

তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক তো বটেই, এলাকাবাসীর কাছেও ‘খান সাহেব’ বলে পরিচিত কেরিম। জন্মলগ্ন থেকেই তৃণমূলে রয়েছেন কেরিম।

আব্দুল কেরিম খান।

আব্দুল কেরিম খান।

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ ০৯:১৮
Share: Save:

বছর দশেক আগেও মাটির বাড়িতে ছিল নিতান্তই সাদামাটা জীবনযাপন। এখন বিলাসবহুল দোতলাবাড়ি। তিন জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘোরেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সৌজন্যেই কেরিম খানের এমন চোখ ধাঁধানো সমৃদ্ধি আর রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি বলে গুঞ্জন এলাকায়। বীরভূমে এসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে সেই কেরিম খানকেই সরানোর নির্দেশ দেওয়ায় জেলা জুড়েই তা নিয়ে চর্চা চলছে।

তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক তো বটেই, এলাকাবাসীর কাছেও ‘খান সাহেব’ বলে পরিচিত কেরিম। জন্মলগ্ন থেকেই তৃণমূলে রয়েছেন কেরিম। ২০০০ সালের সূচপুর গণহত্যা মামলার অভিযোগপত্রের লেখক ছিলেন তিনি। সেই সময় নিরাপত্তার জন্য ওই মামলার সাক্ষীদের সঙ্গে তিনিও মাঝেমধ্যে অনুব্রত মণ্ডলের (কেষ্ট) বোলপুরের বাড়ি বা দলীয় দফতরে রাত্রিবাস করেছেন। তখন থেকেই অনুব্রতর সুনজরে পড়েন কেরিম। অনুব্রত ইচ্ছানুযায়ী থুপসড়া অঞ্চল কমিটির সভাপতি মনোনীত হন তিনি। ২০০৩ সালে থুপসড়া পঞ্চায়েত এলাকা থেকে নানুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও নির্বাচিত হন।

তৃণমূল সূত্রে খবর, ২০১৩ সাল থেকে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন কেরিম। সেই সঙ্গে নানুরের থুপসড়া, নওয়ানগর- কড্ডা এবং জলুন্দি পঞ্চায়েত দেখভালের দায়িত্বেও রয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের কাজের টেন্ডারে কমিশন, অজয়ের বালির ঘাটের তোলার ভাগ যেত তাঁর কাছে। কেরিম অবশ্য সে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিরোধীদের দাবি, সাঁতরা, বাসাপাড়া, বোলপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় নামে বেনামে একাধিক বাড়ি, শতাধিক বিঘে জমি, একাধিক ট্রাক্টর, ধান কাটার যন্ত্র রয়েছে কেরিমে। দুটি বিএড কলেজও রয়েছে বলে দাবি। গরুপাচার মামলায় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাঁর সাঁতরা গ্রামের বাড়িতে হানা দিয়েছে। একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।

তৃণমূল সূত্রে দাবি, কেরিমের বাড়বাড়ন্তে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভবিক্ষোভ থাকলেও অনুব্রত মণ্ডলের ‘আস্থাভাজন’ তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পাননি। অভিযোগ অস্বীকার করে কেরিম বলেন, ‘‘যা করেছি সৎ ভাবে ঋণ নিয়ে করেছি। আমাদের পরিবারে তিন জন চাকরি করে। আমার কী আছে না আছে তা যারা অভিযোগ তুলছেন তাঁরাই বলতে পারবেন। আমি সংবাদমাধ্যমে সেই পরিসংখ্যান দেব না। দল চাইলে দেব।’’

অনুব্রত মণ্ডল জেলে যাওয়ার পর অবশ্য চিত্রটা বদলাতে থাকে। বিশেষ করে কাজল শেখের কোর কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির পর কেরিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সামনে আসতে দেখা যায়। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সামনে রেখে বাসাপাড়া এলাকায় প্রায় ৩২ বিঘে জমি জলের দামে ও গায়ের জোরে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একাধিকবার সরব হন জমিহারারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত অভিযোগও জানান তাঁরা। কেরিম অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেন, বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করায় তারা মানুষকে ভুল বুঝিয়ে অভিযোগ করিয়েছে।

তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানেও পৌঁছয় কেরিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ। নবজোয়ার কর্মসূচিতে এসে শুক্রবার তিনি কোর কমিটির বৈঠকে কেরিমকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে জেলা নেতারা অভিষেককে বুঝিয়ে নরম করেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। কেরিম নিজে বলেন, ‘‘কোর কমিটির বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে আমার জানা নেই। আমি কোনও দুর্নীতি করিনি।’’

বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বোলপুর) সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল তো বখরার জন্য কেরিম খানের মতো অনেককে আশ্রয় এবং প্রশয় দিয়ে এসেছেন। সেইজন্য আজ তাঁকে তিহাড় জেলে বাস করতে হচ্ছে।’’

তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির মুখপাত্র তথা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলেছেন তা সংবাদমাধ্যমে বলার বিষয় নয়। তবে দলের বদনাম হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য কেরিম খানকে সতর্ক করা হবে। তা অমান্য করলে কোর কমিটির আলোচনা সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা হবে।’’a

অন্য বিষয়গুলি:

Nanur Anubrata Mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy