Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

দিন বদলের গল্প শোনাতে

রবিবার পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েদের নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালা করে জেলা প্রশাসন।

প্রত্যয়ী: পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে কর্মশালায়। ছবি: সুজিত মাহাতো

প্রত্যয়ী: পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে কর্মশালায়। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০০:৩০
Share: Save:

তখন সে নবম শ্রেণি। সদ্য শাড়ি পড়ে স্কুলে যাওয়া শুরু হয়েছে। এমন একটা সময়ে বাবা-মা ঠিক করে বসলেন, মেয়েকে এ বারে পাত্রস্থ করবেন। মেয়ের তখন সমস্ত চিন্তা মাধ্যমিক নিয়ে। বিয়েতে কোনও ভাবে রাজি নয় সে। আবার বাবা-মা নিজেদের গোঁ ধরে বসে। শুধু বান্ধবীদের এক বার বলেছিল সেই কথা। আর তাতেই হয়েছিল শেষ রক্ষা।

রবিবার পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েদের নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালা করে জেলা প্রশাসন। সেখানেই কিশোরী মেয়েদের নানা লড়াইয়ের কথা শুনলেন আধিকারিকেরা। মঞ্চে তখন বসে জেলাশাসক রাহুল মজুমদার, জেলা সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। মানবাজার ২ ব্লকের বারি হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মল্লিকা পাল বলে চলেছে তার অভিজ্ঞতা। স্কুলে তখন সদ্য কন্যাশ্রী ক্লাব গড়া হয়েছে। অভিভাবকেরা যখন বিয়ে দেবেন বলে পণ করেছেন, মল্লিকা ফোন করেছিল সহপাঠীদের। সেই মেয়েরাই সটান চলে যায় বিডিওর কাছে। অভিভাবকদের বুঝিয়ে রোখা হয় বিয়ে। মল্লিকা বলে, ‘‘আমি লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।’’

ঋতুস্রাবের সময়ে বান্ধবীদের জড়তা চোখে পড়ত পুরুলিয়ার শান্তময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির মহিমা গঙ্গোপাধ্যায়ের। কী ভাবে তাদের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতন করেছিল সে, মঞ্চে বলছিল সেই সমস্ত কথা। মহিমা বলে, ‘‘কথা বলে জানতে পারি, ওরা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। কেন ব্যবহার করা দরকার, সেটা বুঝিয়ে বলি।’’

কিন্তু কোথায় পাবে, দাম কত— এই সমস্ত সাতপাঁচ ভাবনায় গুরুত্ব বোঝার পরেও স্বচ্ছন্দ হতে পারছিল না অনেকে। মহিমা তাদের টিফিনের টাকা থেকে সামান্য কিছুটা চেয়ে নেয়। নিজেই কিনে আনে স্বনির্ভর দলের তৈরি করা স্যানিটারি ন্যাপকিন। ‘প্রত্যুষা’ কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্য মহিমা বলে, ‘‘এখন আর কারও কোনও জড়তা নেই। জিজ্ঞাসাও নেই। আশি জন মেয়ের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে উঠেছে।’’

ঝালদার উড়ান কন্যাশ্রী ক্লাবের বিউটি রায় শুনিয়েছে আত্মরক্ষার পাঠ নেওয়ার উপকারিতা। তার কথায়, ‘‘আমাদের তো পড়তে যেতে হয়। সন্ধ্যা গড়িয়ে ফিরতে ফিরতে সেই রাত্রি। বাড়ির লোকজনও চিন্তায় থাকে।’’ সে জানায়, স্কুলের এক দিদিকে পড়ে ফেরার পথে একটি ছেলে রাস্তায় বিরক্ত করত। এক দিন আটকেওছিল। কিন্তু মেয়েটির আত্মরক্ষার পাঠ নেওয়া ছিল। ছেলেটিকে কাবু করে ফেলে। তার পরে সবাই মিলে যায় পুলিশের কাছে।

ঝালদা ২ ব্লকের বারবেন্দ্যা গ্রামের শিখা কুমারের কথায়, ‘‘আমাদের এলাকায় কিছুদিন আগেও একটা বয়সের পরে বেশির ভাগ মেয়ে স্কুলে যেত না। কন্যাশ্রী ক্লাব সেই ছবিটা পাল্টে দিচ্ছে।’’ এমনই ভাবে বরাবাজারের শাঁখারি গ্রামের সুমিত্রা মর্মুর তিরন্দাজি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেওয়ার গল্প উঠে এসেছে মঞ্চে।

চারপাশ বদলে দিতে বদ্ধপরিকর এই সমস্ত মেয়েরা একে একে উঠেছে এ দিনের মঞ্চে, আর বৃষ্টির মতো অঝোর হাততালিতে ভেসে গিয়েছে রবীন্দ্রভবন।

অন্য বিষয়গুলি:

Workshop Teenage Marriage Kanyashree Girls
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy