Advertisement
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Shiksha Ratna Award 2024

স্কুলের উন্নয়নের কান্ডারি কাঞ্চন এ বার ‘শিক্ষারত্ন’ 

স্থানীয় চৌহাট্টা গ্রামের বাসিন্দা কাঞ্চন ১৯৯৯ সালে প্রথম সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন শাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০০৭ সালে মজুমদারডাঙা স্কুলে বদলি হয়ে আসেন।

কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়।

কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

অর্ঘ্য ঘোষ
লাভপুর শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৪ ০৯:২৭
Share: Save:

এ বছর শিক্ষারত্ন পুরস্কার পেতে চলেছেন লাভপুরের মজুমদারডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কুলের সামগ্রিক উন্নয়নের কান্ডারি হিসেবে এই পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।

স্থানীয় চৌহাট্টা গ্রামের বাসিন্দা কাঞ্চন ১৯৯৯ সালে প্রথম সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন শাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০০৭ সালে মজুমদারডাঙা স্কুলে বদলি হয়ে আসেন। ২০১৩ সাল থেকে এই স্কুলে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন, এখন তিনি প্রধান শিক্ষক। স্কুল এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আদিবাসী অধ্যুষিত ওই স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের বেশির ভাগই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। এক সময় স্কুলছুটের সংখ্যা ছিল উদ্বেগজনক। স্কুলের পরিকাঠামোও ছিল তথৈবচ। স্কুলে যোগ দেওয়ার পরে স্কুলের হতাশার চিত্র বদলাতে শুরু করে কাঞ্চনের হাতে।

ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার বাড়াতে তাদের বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তার কথা বোঝান এই শিক্ষক। নিছক পাঠদানের ক্ষেত্র করে না রেখে স্কুলটিকে ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষণের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন তিনি। প্রতি মাসে ছাত্রছাত্রীদের জন্মদিন পালন, ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ফুটবল দল গঠন, সাউন্ড সিস্টেম-সহ ইউটিউবের মাধ্যমে পড়াশোনার পাশাপাশি গান শোনা, ফোনে ছোটদের উপযোগী সিনেমা দেখা, দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশ-সহ লুপ্তপ্রায় লোকক্রীড়ার প্রচলন করেন কাঞ্চন।

পরিকাঠামোগত উন্নয়নও ঘটে তাঁর হাতে। ফ্যান আলো-যুক্ত তিন কক্ষের স্কুলের ভবন, মিডডে মিল খাওয়ার ঘরের ছাউনি, পানীয় জলের সাবমার্সিবল পাম্প— সবই হয় ধীরে ধীরে। আগে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২৫-৩০ জন। গড় উপস্থিতি ছিল ৪০ শতাংশ। এখন পড়ুয়ার সংখ্যা হয়েছে ৬০ জন। গড় উপস্থিতি ৯০ শতাংশ। আগে স্কুলছুটের হার ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। এখন স্কুলছুট নেই বললেই চলে। বিজয় হেমব্রম, তারো হেমব্রম, কালী হেমব্রম, রেখা পাত্রধাররা জানিয়েছেন, আগে তাঁরা শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতেন না। তাই ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে অত আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু ওই শিক্ষক বাড়িতে গিয়ে পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে যান। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সোমনাথ মার্ডি, অমৃতা কিসকু, চতুর্থ শ্রেণির দেবীমণি হেমব্রম, রাজীব মুর্মুরা জানায়, এখন তারা আর স্কুল কামাই করে না। ছুটি থাকলেই বরং মন খারাপ হয় তাদের।

সহকারী শিক্ষক সুজন সরেন বলেন, “প্রধান শিক্ষক স্কুল অন্ত প্রাণ। নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে আসেন ও যান। ঘড়ির পরিবর্তে তাঁর যাওয়া-আসা দেখে গ্রামবাসীরা সময় নির্ধারণ করেন।”

ইতিপূর্বে মুম্বইয়ের এমভিএল এ ট্রাস্ট থেকে রাষ্ট্রীয় শিক্ষারতন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারে পেতে চলেছেন শিক্ষারত্ন পুরস্কার। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর কলকাতার বিশ্ববাংলায় তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। কাঞ্চনের কথায়, “ওই পুরস্কার আমি বাবা প্রয়াত গৌরীশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে উৎসর্গ করতে চাই। প্রাপ্ত টাকা স্কুলের উন্নতির কাজে লাগাব।”

জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাইমারি) শুকলাল হাঁসদা বলেন, “প্রাইমারি শিক্ষকদের মধ্যে জেলায় কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাচ্ছেন। ওঁর জন্য আমরা গর্বিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Award Labpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE