কমল চক্রবর্তী। ফাইল চিত্র
চলে গেলেন ‘ভাল পাহাড়’-এর কমল চক্রবর্তী। ‘বৃক্ষনাথ’ নামে পরিচিত কমল শুক্রবার বিকেল সওয়া ৩টে নাগাদ জামশেদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুতে সাহিত্য জগত থেকে বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
একমুখ সাদা দাড়ি। পরনে খাটো ধুতি, খাদির পাঞ্জাবি, কাঁধে ঝোলা। কমল চক্রবর্তী নামটি উচ্চারিত হলে এই ছবিই ভেসে ওঠে। আদতে জামশেদপুরের বাসিন্দা। শৈশব, কৈশোর, স্কুলজীবন থেকে পেশাগত জীবন সবই ইস্পাতনগরীতে। টেলকোর ইঞ্জিনিয়ার পেশা শেষে নাড়া বেঁধেছিলেন পুরুলিয়ার রুখা মাটিতে।
পুরুলিয়া জেলার সব চেয়ে প্রত্যন্ত বলে পরিচিতি বান্দোয়ানের রক্ষ-ধূসর জমির উপরে গড়ে তুলেছেন ছায়া সুনিবিড় ‘ভাল পাহাড়’ নামের আশ্রম।
বান্দোয়ান থেকে কুচিয়াগামী রাস্তার উপরে ডাংরজুড়ি টিলার রুক্ষ প্রান্তরে আড়াই দশকেরও আগে শুরু করেছিলেন সবুজের অভিযান। জমি কিনে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গাছ লাগানোকেই ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। চারা রোপণকে কোনওদিন নিজের কৃতিত্ব হিসেবে জাহির করেননি। বলতেন— ‘‘প্রকৃতির ঋণশোধের দায়িত্ব আমাদের কাঁধে। সেই দায়িত্বটুকুই পালন করছি মাত্র।’’ কেউ ফোন করলে ফোন ধরেই বলতেন, ‘‘জয় বৃক্ষনাথ’’।
তাঁর স্বপ্নের ভালো পাহাড়ে গড়ে তুলেছেন একটি স্কুল। পিছিয়ে পড়া এলাকার ছেলেমেয়েদের কাছে শিক্ষা পৌঁছে দিতে হবে, তাঁদের কর্মঠ হিসেবে একালের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে— এই স্বপ্ন বুকে আঁকড়ে কর্মজীবন শেষে পড়ে থেকেছেন বান্দোয়ানের ভালো পাহাড়ে।
লিটল ম্যাগাজিনের জগৎ তাঁকে চেনে কমলদা হিসেবেই। ‘কৌরব’ নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।
সারা জীবন ধরে পরিবেশের জন্য কাজ করার সুবাদে গত স্বাধীনতা দিবসের দিন আমন্ত্রিত হয়েছিলেন রাজভবনে। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস পুরস্কৃত করেন তাঁকে। পুরস্কৃত হয়েছেন বঙ্গ গৌরব সম্মান সহ অসংখ্য সাহিত্য পুরস্কারে।
গত ২১ অগস্ট দুপুরে ভাল পাহাড় আশ্রমে শৌচাগারে স্নান করতে গিয়ে পড়ে যান। কান থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। আশ্রমিক জয়তী চক্রবর্তী এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘সেদিনই আমরা চিকিৎসকের পরামর্শে জামশেদপুরে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু হাসপাতালের পথেই সংজ্ঞা হারান। আর চেতনা ফেরেনি। ক্রমশ কোমায় চলে যাচ্ছিলেন।’’
সবাই তো ভাঙতে পারে, গড়তে পারে ক’জন, সবাই তো নেশায় ছোটে, মায়ায় বাঁধতে পারে ক’জন... এই বিশ্বাস নিয়েই কর্মজীবনে বান্দোয়ানের ধূসর প্রান্তরে রেখে গেলেন লক্ষ লক্ষ বৃক্ষকে। বৃক্ষনাথ থেকে যাবেন এই সবুজের মাঝেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy