সমাগম: কালীপুজোর রাতে তারাপীঠ মন্দির চত্বরে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
করোনা পরিস্থিতি যে কালীপুজোয় প্রভাব ফেলেছে তা শনিবার সন্ধ্যায় সিউড়ি শহরের রাস্তাঘাটে ঘুরেই বোঝা গেল।
সন্ধ্যা ছ'টা নাগাদ সিউড়ির রবীন্দ্রপল্লি এলাকায় গিয়ে দেখা গেল যে রাস্তা দিয়ে কিছু সংখ্যাক দর্শনার্থী মণ্ডপ উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন। তাঁদের সকলের মুখে মাস্ক। তবে কাউকে বাজি পোড়াতে বা ফাটাতে দেখা যায় নি। অন্যান্য বছর কালীপুজোর সন্ধ্যায় ওই এলাকায় শিশু এবং কিশোর কিশোরীদের তারাবাতি, তুবড়ি বা রসবাতি ফাটাতে দেখা যেত। কিন্তু এ বছর সেসব কিছুই ছিল না। তবে কিছু বাজির শব্দ শোনা গিয়েছে। তবে কোন এলাকা থেকে কে বা কারা বাজি ফাটাচ্ছিল সেটা বোঝা যায় নি।
একই চিত্র দেখা গেল বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। সেখানেও সেই অর্থে কাওকে বাজি পোড়াতে বা ফাটাতে দেখা যায়নি৷ রাস্তায় বেশকিছু সংখ্যক পথচারী ছিলেন। তাঁরা কেউ মণ্ডপ দর্শনের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন কিম্বা নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বাসস্ট্যান্ডের পর বড়বাগান এলাকায় গিয়েও একই চিত্র দেখা গেল। সেখানকার এলাকাবাসী ছাদে মোমবাতি এবং প্রদীপ জ্বালাতেই ব্যস্ত ছিলেন। স্থানীয়দের দাবি, অন্যান্য বছর বাড়ির ছাদেই নানান ধরনের আতশবাজি ফাটিয়ে থাকেন এলাকার মানুষজন। কিন্তু এবছর কেবল তাঁদের ফানুস ওড়াতে দেখা গিয়েছে।
সিউড়ি টিনবাজার সংলগ্ন এলাকায় এসে দেখা গেল এক শিশুকে রসবাতি হাতে রাস্তায় দেখা যায়। তাছাড়া ওই এলাকা থেকে অল্পবিস্তর বাজির শব্দও শোনা যায়। তবে শব্দবাজি কারা ফাটাচ্ছে সেটা বোঝা যায়নি। অন্যান্য বছর কালীপুজোর সকাল থেকেই বাজি পোড়ানো শুরু হয়ে যায়। তাছাড়া সন্ধ্যার পর থেকে ব্যাপক মাত্রায় বাজি পোড়ানো হয়। বাদ থাকে না শব্দবাজিও। তবে এই বছর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে, সন্ধ্যার পর থেকে কিছুটা বাজির শব্দ শোনা গিয়েছে।
হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে বাজি পোড়ানো আটকাতে পুলিশ সমস্ত রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে মত জেলা পুলিশের কর্তাদের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজি পোড়ানো রুখতে গত কয়েকদিন ধরেই জেলার প্রত্যেক থানার পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়েছে এবং প্রচুর পরিমানে বাজি উদ্ধার করা হয়েছে। তাছাড়া বাজি কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। জেলা পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, বাজি সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর জন্য ইতিমধ্যেই হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। তাছাড়া জেলা পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বাজি সংক্রান্ত অভিযোগও জানানো যাবে।
জেলাবাসীর অনেকের দাবি, পুলিশের ধরপাকড় অনেকটাই সফল হয়েছে। কারণ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা সদর সিউড়ি বা বোলপুর-রামপুরহাটের মতো শহরে অন্যবারের মতো ঘনঘন বাজির শব্দ বা প্রকাশ্যে বাজি পোড়ানোর দৃশ্য দেখা যায় নি। সিউড়ি শহরের দু-এক জায়গায় অবশ্য বাজির শব্দ শোনা গিয়েছে। তবে ব্যাপকভাবে বাজি পোড়ানো বা ফাটানো হয়নি বলে জানাচ্ছেন করেছেন সিউড়ি শহরের বাসিন্দারা। জেলাবাসীর অনেকেই বলছেন, অন্য বছর কালীপুজোর দু’দিন আগে থেকেই বাজি পোড়ানো শুরু হয়ে যায়। কেবল আতসবাজি নয়, শব্দবাজিও ফাটানো হয়। এ বছর সেসব নেই বললেই চলে।
সিউড়ির মতো দুবরাজপুর এবং রামপুরহাটেও নামমাত্র শব্দবাজির ফাটানোর শব্দ পাওয়া গিয়েছে। এ দিন সকাল থেকে রামপুরহাটে কোনও বাজি পোড়ানোর দৃশ্য বা ফাটানোর শব্দ শোনা না গেলেও সন্ধ্যার দিকে সামান্য মাত্রায় শব্দ শোনা যায়। বোলপুরে বাজির শব্দ খুব একটা শোনা যায়নি। প্রকাশ্যে বাজি পোড়াতে দেখাও যায় নি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজি পোড়ানো বা ফাটানো রুখতে রামপুরহাট থানার পক্ষ থেকে একটি দল গঠন করা হয়েছে। ওই দল শহরজুড়ে বাজির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজি সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে পৌঁছয়নি। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরেই জেলা জুড়ে অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ বলা সম্ভব নয়, তবে প্রচুর পরিমাণে বাজি উদ্ধার হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাজির কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকা ১০ থেকে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ লুকিয়ে বাজি বিক্রি করা বা পোড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ এই বিষয়ে তৎপর রয়েছে। হেল্পলাইনে যদি কেউ অভিযোগ জানায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy