Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Jhalda Municipality

বারবার ফিরছে অতীত, উন্নয়ন হচ্ছে কোথায়

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঝালদা পুরভবন চত্বরে পুলিশ বাহিনী।

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঝালদা পুরভবন চত্বরে পুলিশ বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝালদা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩৫
Share: Save:

মাত্র ১২টি ওয়ার্ডের ছোট্ট পুরসভা। কিন্তু তার ক্ষমতা দখলকে ঘিরে বার বার যেন অতীতেরই পুনরাবৃত্তি দেখছে ঝালদা।

বুধবারের তলবিসভায় পুরপ্রধান শীলা এবং তাঁর অনুগামী চার পুরপ্রতিনিধিও গরহাজির রইলেন। যেমনটা ঘটেছিল, ২০২২ সালের নভেম্বরে। তৎকালীন পুরপ্রধান তৃণমূলের সুরেশ আগরওয়ালকে পদ থেকে সরাতে কংগ্রেসের পাঁচ এবং দু’জন নির্দল পুরপ্রতিনিধি যে দিন তলবিসভা ডেকেছিলেন, সেদিন পুরভবনের ছায়া মাড়াননি সুরেশ ও তাঁর অনুগামীরা। পরে অনাস্থাকারীদের তরফে ডাকা সভাকে তিনি মান্যতা দিতে চাননি। সরকারের তরফেও সভার মান্যতা না মেলায় শুরু হয় আইনি লড়াই। হাই কোর্ট ঘুরে জল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। শেষে হাই কোর্টের নির্দেশেই পদ থেকে সরতে হয় সুরেশকে। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে পুরপ্রধান হয়েছিলেন নির্দলের শীলা।

ঝালদা পুরসভার ইতিহাস জানাচ্ছে, এই ‘ট্র্যাডিশন’ অনেকদিন ধরেই চলছে।২০১৬তে এই সুরেশের বিরুদ্ধেই বিরোধীদের এককাট্টা করে অনাস্থাতে শামিল হয়েছিলেন দলের একাধিক পুরপ্রতিনিধি। যাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তৃণমূলেরই প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার। সে বার তলবিসভার দিনে পুরভবনের গেটে তালা ঝুলতে দেখে শেষে বারান্দায় বসে সভা করেছিলেন বিক্ষুব্ধেরা। সে সবার সেই সভাকে অবশ্য মান্যতা দিতে চাননি সুরেশ। জল হাই কোর্টে গড়ায়। শেষে হাই কোর্টের নির্দেশেই পদ ছাড়তে হয় সুরেশকে। এ বারেও কি পরিস্থিতি সেদিকেই এগোবে? প্রশ্ন অনেকের।

ঝালদার ক্ষমতা ধরে রাখতে শাসকদল তৃণমূল গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘গাজোয়ারি’ করছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। বিরক্ত বাসিন্দাদেরও একাংশ। তাঁদের দাবি, একের পর এক জটিলতায় ঝালদায় পুরপরিষেবার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, সাফাই, জল সরবরাহের মতো রোজকার কাজ কোনও রকমে চললেও শহরের চিরস্থায়ী সমস্যা মেটানোর মতো বড় উদ্যোগ কোথায়? সুবর্ণরেখা জল প্রকল্প, বাসস্ট্যান্ড কিংবা বাইপাস তৈরি অথবা নিকাশির মতো সমস্যাগুলি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

পুরভবন জানাচ্ছে, অতীতে বরাবর ঝালদা পুরসভা বাম কিংবা কংগ্রেসের দখলে থাকত। রাজ্যে পালাবদলের পরেও ২০১৫ সালের পুরভোটে এখানে একটিও আসন পায়নি তৃণমূল। তবে ২০১৬ সালে কংগ্রেস, বাম এবং নির্দল পুরপ্রতিনিধিরা তৃণমূলে যোগ দেন। অনাস্থা এনে পুরপ্রধান হন নির্দল থেকে আসা সুরেশ। রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, এর পর থেকেই অনাস্থা নিয়ে ‘খেলা’ শুরু হয়েছে ঝালদা পুরসভায়।

তবে গত এক বছর ধরে যা ঘটছে তা দেখে অনেকের প্রশ্ন, বার বার ধাক্কা খাওয়ার পরেও ঝালদার ক্ষমতা পেতে কেন এতটা মরিয়া মনোভাব তৃণমূলের? রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন নির্দেশে হাই কোর্টকে কেন বার বার হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে? তা নিয়েও চর্চার শেষ নেই শহরে। নিছকই কি ক্ষমতা দখলের লড়াই? নাকি এর পিছনে দলেরই নেতৃত্বের একাংশের ‘অহংবোধ’ কাজ করছে? চর্চা রয়েছে তা নিয়েও।

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য কোনওটাই মানতে নারাজ। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘ঝালদার বিষয়টি দলের তরফে গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে।’’

তাঁর আরও দাবি, সুবর্ণরেখা জল প্রকল্প থেকে শুরু করে ঝালদার মানুষের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে কয়েকটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার বদ্ধপরিকর। বিরোধীদেরও ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করার সময় এসে গিয়েছে।

পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, ‘‘ঝালদার ক্ষমতা পেতে শাসকদল কেন এতটা মরিয়া, আজও স্পষ্ট হল না। তাদের গাজোয়ারি মনোভাবেই ঝালদার উপযুক্ত উন্নয়ন হচ্ছে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jhalda Municipality TMC Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy