Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Jaundice

রাজ্যে ডেঙ্গি আতঙ্কের মাঝে বাঁকুড়ার গ্রামে জন্ডিস-ভীতি, আক্রান্ত দু’শোর বেশি গ্রামবাসী

গ্রাম জুড়ে জন্ডিসের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। গ্রামের নলকূপগুলির জল থেকে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব কি না দেখার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

jaundice

নলকূপের জলে মিলেছে জন্ডিসের নমুনা। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
তালড্যাংরা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৪০
Share: Save:

জেলায় জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মশাবাহিত রোগে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনেরও বেশি মানুষের। এরই মাঝে জন্ডিস আতঙ্কে ভুগছে বাঁকুড়ার তালড্যাংরা। ইতিমধ্যে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ জন্ডিসে ভুগছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। তালড্যাংরা ব্লকের সাতমৌলি গ্রামে জন্ডিস ছাড়াও টাইফয়েডের সংক্রমণও বেড়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর।

স্থানীয় সূত্রে খবর, আড়াই মাস আগে সাতমৌলি গ্রামের গ্রামের এক ব্যাক্তি জন্ডিসে আক্রান্ত হন। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, প্রায় প্রতি দিনই জন্ডিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সব মিলিয়ে দুশোর বেশি মানুষ জন্ডিসে আক্রান্ত।

তালড্যাংরা ব্লকের সাতমৌলির আটটি পাড়া মিলিয়ে হাজার দুয়েক মানুষের বসবাস। গ্রামের মানুষ মূলত পানীয় জল সংগ্রহ করেন একাধিক নলকূপ থেকে। ফি বছর বর্ষার শুরুতে এই গ্রামে জন্ডিসের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, এখন ঘরে ঘরে জ্বরে আক্রান্ত রোগী এবং সবারই উপসর্গ মোটামুটি এক। প্রথমে ধুম জ্বর আসছে। তার পর বার বার বমি হচ্ছে আক্রান্তদের। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করালেই জন্ডিস ধরা পড়ছে। কারও কারও আবার জন্ডিসের সঙ্গে টাইফয়েডও হচ্ছে। বেশ কয়েক জন সুস্থ হয়ে উঠলেও এখনও অনেক রোগী চিকিৎসাধীন। বেশির ভাগই নিজেদের বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করাচ্ছেন।

গ্রাম জুড়ে জন্ডিসের প্রকোপ বাড়তেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। গ্রামের নলকূপগুলোর জল থেকে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব কি না দেখার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বেশ কয়েক’টি পরীক্ষার রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ওই নলকূপগুলির বেশ কয়েক’টির জলে জন্ডিস এবং টাইফয়েডের জীবাণু রয়েছে। আপাতত স্বাস্থ্য দফতর এবং গ্রাম পঞ্চায়েত যৌথ ভাবে ওই নলকূপগুলোর জলশোধনের কাজ শুরু করেছে। তার পরেও অতিরিক্ত সাবধানতার জন্য গ্রামবাসীকে জল ফুটিয়ে পানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বরূপ বাসুলি নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, “জন্ডিস নিয়ে গোটা গ্রাম আতঙ্কে রয়েছে। যাঁরা এখনও আক্রান্ত হননি, তাঁরাও ভয়ে সারা। তা ছাড়া জন্ডিসের চিকিৎসাও তো যথেষ্ট ব্যয়বহুল। তাই গ্রামের অনেকে হাসপাতালে না গিয়ে হাতুড়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন।’’ তাঁর অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টি নিয়ে আগেভাগে সতর্ক হলে এই পরিস্থিতি হত না। গ্রামের অপর এক বাসিন্দা চন্দনা কর্মকার বলেন, “আমাদের বাড়িতে দু’জন জন্ডিসে আক্রান্ত। এক জনকে দু’বার বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেও সুস্থ করা যায়নি। চিকিৎসার জন্য তাঁকে হায়দরাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিবারে আমরা যারা সুস্থ আছি, তাঁরাও যথেষ্ট আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।”

এ নিয়ে তালড্যাংরা ব্লকের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অরিজিৎ মণ্ডল বলেন, “জন্ডিস নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে এখন বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৯ জন। এ ছাড়াও চার জনকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। গ্রামের সমস্ত ব্যবহার্য নলকূপ জীবানুমুক্ত করা হচ্ছে। গ্রামে মেডিক্যাল টিম পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” গ্রামের পঞ্চায়েতের প্রধান অন্তু মণ্ডল বলছেন, “জন্ডিসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা সত্ত্বেও যে ভাবে স্বাস্থ্য দফতর কাজ শুরু করেছে, তাতে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে বলেই মনে করছি। আমরা গ্রামের সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে প্রচার চালাচ্ছি। আশা করি, গ্রামকে দ্রুত জন্ডিসমুক্ত করা সম্ভব হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jaundice bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE