উদ্ধার হওয়া বোমা নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে। ছবি: পাপাই বাগদি।
সাঁইথিয়ার বহড়াপুরের বোমাবাজির ঘটনায় শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এল। এমনই দাবি বিরোধীদের। গ্রামবাসীদের একাংশও এ কথা মেনে নিয়েছেন। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিস।
শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এই এলাকার বহু চর্চিত বিষয়। ব্লক সভাপতি সাবের আলি খানের সঙ্গে জেলা কমিটির সদস্য সাধন মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীর বিবাদ দীর্ঘদিনের। বিরোধ এড়াতে জেলা নেতৃত্ব অলিখিত ভাবে সাঁইথিয়া বিধানসভা এলাকার আওতাধীন ছ’টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সাধনকে হরিশাড়া, দেরিয়াপুর, মাঠপলশা এবং সাবেরকে বনগ্রাম, ফুলুর এবং হাতোড়া পঞ্চায়েত দেখভালের দায়িত্ব দেন। কিন্তু অভিযোগ, এর পরেও উভয় পক্ষই একে অন্যের এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য নানা রকম কৌশল নেয়। এই ক্ষমতা দখলের রাজনীতি নতুন মাত্রা পায় বনগ্রাম পঞ্চায়েতে।
বনগ্রাম পঞ্চায়েতে প্রভাব বিস্তার করতে প্রধান তথা ব্লক কার্যকরী সভাপতি তুষারকান্তি মণ্ডলের সঙ্গে প্রাক্তন যুবসভাপতি তথা বর্তমান অঞ্চল সভাপতি অরবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে টম এবং প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি কুবীর মণ্ডলের চাপা বিরোধ ছিল। এক সময়ে তুষার সাবিরের অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অন্য দিকে, অরবিন্দ এবং কুবীর সাধনের অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অভিযোগ, তখন সাধনের মদতেই তুষারের বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখলের প্রতিবাদে কুবীরেরা সরব হন। পরে কুবীরেরা সাবেরের দিকে ঝোঁকেন। সাধনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তুষারের। এ বারে বেআইনি জমি দখলের ইস্যুতে কুবীরদের মদত যোগানোর অভিযোগ ওঠে সাবেরের বিরুদ্ধে।
২০২০ সালে সাঁইথিয়া হাই স্কুলের কর্মী সম্মেলনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ছবিটি প্রকাশ্যে চলে আসে। ওই সম্মেলনে অনুব্রত মণ্ডলের একটি প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয় মারকোলা বুথের সভাপতি শান্ত মণ্ডলকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ব্লক সভাপতি কখনও তুষারকান্তি মণ্ডল, কখনও টমদার (প্রাক্তন ব্লক যুব সভাপতি তথা অঞ্চল সভাপতি অরবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে থাকেন। তার ফলে ভুল বার্তা যায়। অঞ্চল সভাপতি কুবীর মণ্ডল মিটিং ডাকেন না।’’ দলের প্রতিষ্ঠা দিবস, দুয়ারে সরকার, বঙ্গধ্বনি-সহ নান কর্মসূচিতে দুই গোষ্ঠীর বিভাজন ধরা পড়েছে।
কার্যকরী সভাপতি হওয়ার পর থেকে সাবেরের সঙ্গে তুষারের বিরোধ চরমে ওঠে। দলীয় সূত্রের খবর, দায়িত্ব পাওয়ার পরে ক্ষমতা বিস্তারে তুষার উঠে পড়ে লেগেছেন। বহরাপুর গ্রামেই সাবেরের বাড়ি। তাঁর ভাইপোর স্ত্রী লাইলি বেগম স্থানীয় ফুলুর পঞ্চায়েতের প্রধান। তুষার তাঁদের কিছু না জানিয়েই সাবেরের বিরোধীদের দলে জায়গা করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এতে সাবেরের অনুগামীরা ক্ষুব্ধ হতে শুরু করেন। সোমবার তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে অনেকে মনে করেছেন।
পুলিশ জানায়, উভয়পক্ষের ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে শেখ ফাইজুলের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে। যদিও স্থানীয় সূত্রে খবর, ফাইজুলদের উপরেই আক্রমণ হয়েছিল। শেখ ফাইজুল ওরফে বাবুর পিতা মহম্মদ আনোয়ার ও বৌদি তাজিয়া বিবি বলেন, ‘‘আমরা সাবের আলির বিরুদ্ধে তুষার মণ্ডলের সঙ্গে তৃণমূল করছি বলেই আমাদের উপরে আক্রমণ করা হয়। এখানে সবাই তৃণমূল করে। তার মধ্যে কিছু সাবের লোক আর কিছু তুষারের লোক। আমরা সাবেরের সঙ্গ ছেড়ে তুষারের সঙ্গে থাকি বলেই সাবেরের লোকেরা এই ঘটনা ঘটাল।’’
যদিও সাবের বলেন, ‘‘এটা কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের একটিই দল। এটা আমার গ্রাম। আর সেখানে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই ঘটনা। যার মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করার জন্য রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টা করছেন। তুষারকে, কে কবে কার্যকরী সভাপতি করেছে জানি না। তবে তৃণমূলের ক্ষতি করতে সে বিজেপি , ইনসাফ এবং বিজেপির লোকেদের নিয়ে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’’ অন্য দিকে, তুষার বলেন, ‘‘২০২১ সালের অগস্টে বোলপুর পার্টি অফিসে অনুব্রত মণ্ডল আমাকে ওই দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি সেই দায়িত্বই পালন করছি। নিজের গ্রামের লোকেরা কেন ও সব পার্টিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তা ব্লক সভাপতির ভেবে দেখা দরকার।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘এটা হচ্ছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। নিজেদের লুটের ভাগ নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দিন দিন বাড়বে।’’ যদিও তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির প্রধান তথা জেলা সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘গ্রাম্য বিবাদের কারণেই ওই ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীরা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy