(বাঁ দিকে) সুরেন্দ্রনাথ সরকার, (ডান দিকে) রবীন্দ্রনাথের শুভেচ্ছা-পত্র। ছবি: পরিবারের সংগ্রহ থেকে
স্বাধীনতা অন্দোলনের ইতিহাস হাতড়ালে এমন অনেকের নাম পাওয়া যাবে, যাঁরা আজ সে ভাবে চর্চায় না থাকলেও, নিজেদের সবটুকু দিয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এমনকি, স্বাধীনতার পরেও সমাজ সংস্কারে জড়িয়ে থেকেছেন। তেমনই এক জন খয়রাশোলের সুরেন্দ্রনাথ সরকার। যাঁর হয়ে মামলা লড়ার জন্য কলকাতার আইনজীবী পরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বীরভূমে পাঠিয়ে ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।
বাংলার ১৩০০ সালে খয়রাশোলে জন্ম সুরেন্দ্রনাথের। জন্মের পরেই বাবাকে হারান। অত্যন্ত কষ্টে বড় হন। ছাত্রাবস্থা থেকেই স্বদেশি আন্দোলনের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ও রাখিবন্ধন উৎসবে উপবাস করা দিয়ে শুরু। কিশোর সুরেনের দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার পিছনে অণুঘটকের কাজ করেছিল দুবরাজপুরের এক সভায় কংগ্রেস নেতা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা।
নাকড়াকোন্দা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকে। কাজ শুরু করেন বিহার ও বীরভূম জুড়ে। ১৯১৩ সালে বিহারের (তৎকালীন) কোলিয়ারিতে কাজ করার সময়ে শ্রমিক অন্দোলনে জড়িয়ে পড়া, ১৯২৬ সালে জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক পদে আসীন হওয়া থেকে ১৯৪৩-৪৪ সালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জেলা বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া— দীর্ঘ তার কর্মকাণ্ড। আইন অমান্য, সত্যাগ্রহ, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সংক্রিয় অংশগ্রহণ করে একাধিক বার জেল খাটা— সবই হয়েছে তাঁর জীবনে। স্বাধীনতার পরে গ্রামে মেয়েদের স্কুলের জন্য জমি দান থেকে গ্রন্থাগার গড়ে দেওয়া— বহু অবদান তাঁর। গান্ধীজির সঙ্গে সাক্ষাতের পড়ে খদ্দর ছাড়া আজীবন তিনি অন্য কিছু পরেননি।
তাঁর লেখা বই ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, সুরেন্দ্রনাথকে দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ উসকে দিয়েছিল সিজুয়া কোলিয়ারিতে স্টেনো-টাইপিস্ট হিসেবে কাজ করার সময়ে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। তাঁরই এক সহকর্মীকে মারধর করেছিলেন কেস নামে এক ব্রিটিশ। বদলা নিতে সুরেন্দ্রনাথ-সহ পাঁচ বন্ধু রাতে ইউরোপীয় ক্লাব থেকে ফেরার পথে ওই সাহেবকে মারধর করেন। মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় বেশ কয়েক মাস জেল খাটতে হয় তাঁদের। শেষ পর্যন্ত পাটনা হাই কোর্টে রেহাই মেলে। ওই ঘটনা সুরেন্দ্রনাথের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাঁকে সম্পাদক করে সূচনা হয় ‘নিখিল ভারত কোলিয়ারি শ্রমিক সংগঠন’-এর।
১৯৩৯ সালে শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তাঁর সঙ্গী ছিলেন খয়রাশোলের সুরেন্দ্রনাথ। তবে এর আগের ১৯৩৭ সালেই দলীয় সভায় সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান তিনি। তাঁর বইয়ে সুরেন্দ্রনাথ সে কথা উল্লেখ করেছেন। সিউড়ির টিনবাজারে ১৯৪৩ ‘নবশক্তি ইনসিওরেন্স কোম্পানি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন সুরেন্দ্রনাথ। উদ্দেশ্য ছিল বিমা কোম্পানির আড়ালে স্বদেশি কাজ করা। কিন্তু সেটি কিছু দিনের মধ্যে ব্রিটিশ পুলিশের নজরে আসে। এক বিমা গ্রাহককে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করানো হয়েছিল। মামলা থেকে উদ্ধার পেতে সুভাষচন্দ্রের দ্বারস্থ হন তিনি। সুভাষচন্দ্রের উদ্যোগে কলকাতা থেকে আইনজীবী পরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এসে মামলা লড়েন। সুরেন্দ্রনাথ মামলা জিতে ছিলেন।
সুরেন্দনাথকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। ১৯৮৭ সালে প্রয়াত এই সংগ্রামীর বাড়ির দেওয়ালে সেই চিঠি আজও উজ্জ্বল। পাশেই সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে তাঁর ছবিও। বাবার কর্মকাণ্ডের স্মৃতি, আর নানা ছবির কোলাজ নিয়ে ‘আজ়াদি কা অমৃত মহোৎসব’ কেটে যাবে সুরেন্দ্রনাথের অশীতিপর মেজ ছেলে সাম্যসাধক সরকার, সেজ ছেলে মৈত্রীসাধক সরকার-সহ পরিবারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy