জমায়েত: থানা ঘেরাও গ্রামবাসীর। বৃহস্পতিবার মল্লারপুরে। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য তথা প্রাক্তন প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে বুধবারের পরে বৃহস্পতিবারও তেতে রইল মল্লারপুর থানার কোট গ্রাম।
এ দিন সকালে মল্লারপুর থানায় বিক্ষোভ দেখান কোট গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ঝিকড্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সায়রা বিবি এবং তাঁর স্বামীকে পুলিশ গ্রেফতার করছে না। অথচ দুর্নীতির প্রতিবাদ করা গ্রামের এক নিরীহ যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, সায়রার শ্বশুরবাড়িতে বোমা মজুতের অভিযোগও করেছেন গ্রামবাসীরা। তল্লাশি চালিয়ে ওই বাড়ি থেকে বুধবার সন্ধ্যায় ৪০টি তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্গাপুর থেকে বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড এসে দমকলের সাহায্যে বোমাগুলি নষ্ট করেছে।
সায়রা ও তাঁর স্বামী নাসিমুদ্দিন শেখের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের দাবিতে বুধবার সকালে গ্রামের বসিন্দাদের একাংশ ব্লক অফিসে ধর্নায় বসার জন্য গ্রামের ক্লাবের সামনে জড়ো হন। অভিযোগ, নাসিমুদ্দিন বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসে বোমাবাজি শুরু করেন। খবর পেয়ে গ্রামে পুলিশ পৌঁছলে পুলিশের সামনেও বোমাবাজি হয়। সায়রা ও নাসিমুদ্দিনকে গ্রেফতার এবং ধৃত যুবককে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতেই বৃহস্পতিবার থানায় বিক্ষোভ হয়। পুলিশি তদন্তের আশ্বাস পাওয়ার পরে গ্রামবাসীরা থানা থেকে চলে যান।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কোট গ্রাম থেকে পঞ্চায়েত সদস্য সায়রার শ্বশুর, এলাকার পুরনো তৃণমূল নেতা জাকির হোসেন, তাঁর বড় ছেলে গিয়াসউদ্দিন শেখ-সহ ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে সাত জনই সায়রা-শিবিরের লোক। তাঁদের বিরুদ্ধে বোমাবাজি, বোমা মজুত করা, হামলার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। এ ছাড়াও আব্দুল বারি নামে কোট গ্রামের এক যুবককে পুলিশ ধরেছে। সেই গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতেই এ দিন থানায় যান বাসিন্দারা।
এ দিন ধৃত ৮ জনকে রামপুরহাট আদালতে তোলা হলে চার জনকে পুলিশ হেফাজত এবং বাকি চার জনকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। ধৃতদের ৪ জুলাই আবার আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, নাসিমউদ্দিন ও সায়রা বিবি পলাতক। তাঁদের খোঁজ চলছে।
কোট গ্রামের বাসিন্দা সানোয়ার শেখ, সালাম শেখদের বক্তব্য, গ্রামবাসীর তরফে সায়রা ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে বিডিও-র কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে ওই দু’জনকেও গ্রেফতার করা উচিত ছিল পুলিশের। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘বুধবার বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে গ্রামবাসীদের উপর বোমাবাজি করিয়েছে নাসিমুদ্দিন। নিজের বাড়িতে বোমা মজুত রেখেছে। অথচ তাকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। এর প্রতিবাদ জানাতেই আমরা থানায় এসেছিলাম।’’
সায়রাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে ময়ূরেশ্বরের বিধায়ক তথা ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অভিজিৎ রায় বলেন, ‘‘পুলিশ পুরোটা তদন্ত করছে। দোষ প্রমাণিত হলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’’
রামপুরহাট ১ ব্লকের খরুণ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধেও এ দিন একশো দিন প্রকল্পে পুকুর কাটা, নিকাশি নালা নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় রামপুরহাটে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে খরুণ পঞ্চায়েত এলাকায় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ করেন। রামকৃষ্ণবাবুর দাবি, তাঁর দলের কর্মীরা চলতি জানুয়ারিতে তথ্য জানার অধিকার আইনে জানতে পারেন খরুণ পঞ্চায়েতে বিডিও এবং মহকুমাশাসকের সই জাল করে টেন্ডার ডাকা হত। এ ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে পাকা নিকাশি নালার উপরে মাটির কাজ দেখানো হয়েছে। আবার কিছু নিকাশি নালা তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ করে থাকলেও খরুণ পঞ্চায়েতও সেগুলি তৈরি করেছে বলে দেখানো হয়েছে।
একশো দিন কাজের প্রকল্পে একই পুকুর একাধিকবার কাটা হয়েছে বলেও বিজেপি-র অভিযোগ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শীঘ্রই মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) এবং বিডিও-র (রামপুরহাট ১) তদন্তের দাবি জানানো হবে বলে রামকৃষ্ণবাবু জানান।
খরুণ পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান তৃণমূলের নমিতা দাস অবশ্য দাবি করেন, ‘‘যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা। স্রেফ রাজনীতি করার জন্য বিজেপি এই সমস্ত অভিযোগ করছে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy