দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হাত গুটিয়ে নেওয়ায় ভীমগড় ও সিউড়ির আবদারপুরে, লেভেল ক্রসিং এড়িয়ে রোড ওভারব্রিজ গড়ার কাজে বেশ কিছুটা বিলম্ব হতে চলেছে। অন্তত জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (এনএইচএআই) তরফে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, জমি অধিগ্রহণেই অনেকটা সময় পেরিয়েছে। দায়িত্ব পেয়েও প্রায় দু’বছর কাজে হাত দেওয়া যায়নি। এই কারণ দেখিয়ে বীরভূমের দু’টি লেভেল ক্রসিংয়ের উপরে প্রস্তাবিত দু’টি রোড ওভারব্রিজ (আরওবি) তৈরির কাজ থেকে সরে দাঁড়াতে চাইছে বরাত পাওয়া সংস্থা।
পূর্ব রেলের অণ্ডাল-সাঁইথিয়া শাখার মধ্যেই রয়েছে বীরভূমের ভীমগড় ও সিউড়ি স্টেশনের আগে আবদারপুর লেভেল ক্রসিং। রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের গতিপথ আটকে থাকা ওই দু’টি লেভেল ক্রসিংয়ের জন্য প্রতিদিনই যানজট হয়। সেই সমস্যা মেটাতেই বছর তিনেক আগে দু’টি আরওবি-র অনমোদন দেয় এনএইচএআই। সূত্রের খবর, আরওবি গড়ার বরাত পাওয়া সেই সংস্থা কাজ করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
জাতীয় সড়কের ডিভিশন ১২-র এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নিশিকান্ত সিংহ বলছেন, ‘‘বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা জানিয়েছে, দু’বছর প্রকল্প পিছিয়ে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে। তাই তারা কাজ করবে না। আমরা কথাবার্তা চালাচ্ছি। ঠিকাদার সংস্থা রাজি না হলে, নতুন সংস্থাকে বরাত দেব।’’ কিন্তু, তাতে যে আরওবি গড়া বিলম্ব হবে, সেটা মানছেন নিশিকান্তবাবু।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনে যতবার ওই শাখায় প্যাসেঞ্জার, লোকাল, দূরপাল্লার ট্রেন কিংবা মালগাড়ি পারাপার করে, লেভেল ক্রসিংয়ের দু’দিকে ততবারই তৈরি হয় যানজট। বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে বীরভূম, উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে যাওয়ার জন্য প্রচুর সংখ্যক যানবাহন রানিগঞ্জ মোড় হয়ে সোজা ভীমগড় ও সিউড়ির আবদারপুর হয়ে যায়। সবচেয়ে করুণ অবস্থা আবদারপুর রেলগেটের। কেননা, জাতীয় সড়কের যানবাহনের সঙ্গেই এখান দিয়ে চলাচল করে বীরভূমের পাথর শিল্পাঞ্চল থেকে পাথর ও বালি বোঝাই ভারী লরি-ট্রাক-ডাম্পার। কোনও কারণে ভারী যান বিকল হয়ে গেলে রেলগেটে মারাত্মক অভস্থা হয়। গাড়ি তো বটেই, ট্রেনও দাঁড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়াও, পানাগড়-মোরগ্রাম ১৪ নম্বর রাজ্য সড়ক দুবরাজপুরে
এসে জাতীয় সড়কে মিলিত হওয়ায় এই রাস্তায় উপরে যানবাহনের চাপ খুব বেশি। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে বেরিয়ে ওই দু’টি রোড ওভারব্রিজ হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মাস কয়েক পরে সিউড়িতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন এবং পূর্ত দফতরের তৎকালীন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ইন্দিবর পাণ্ডের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, দু’টি আরওবি-র জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ঠিকাদার সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়। তার পরে তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কাজে হাত পড়েনি।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ পরোক্ষে জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হওয়াকেই দায়ী করলেও বীরভূম প্রশাসন এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের
কর্তারা এ কথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, দ্রুততার সঙ্গে এ কাজ করা হয়েছে। অধিগৃহীত জমির মালিকদের চিহ্নিত করে ক্ষতিপূরণের পরিমাণও ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও কাজ না এগোলে জেলা প্রশাসন কী করবে? ভীমগড়ে আরওবি-র জন্য ৯১২ জন জমিদাতার কাছে থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি ৫৮ লক্ষ ৫৫হাজার ১৩৭ টাকা। অন্যদিকে, আবদারপুর লেভেল ক্রসিং এড়িয়ে আরওবি করার জন্য জমি অধিগৃহীত হয়েছে ৩৫৯ জনের কাছ থেকে। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ৪ কোটি ৪১ লক্ষ ৬৭ হাজার ১৬৯ টাকা। জতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলেও তা শেষ হয়েছে কিছু দিন আগেই। প্রশ্ন উঠছে, এই ঠিকাদার সংস্থাকে বাতিল করে কাজে হাত দিতে এবং সে কাজ শেষ করতে আরও কত সময় লাগবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy