কাজ বন্ধ করলে আয় বন্ধ হবে। তাই মাঠে। বাঁকুড়া ২ ব্লকের চাপাতোড়া গ্রামে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
কৃষক সংগঠনগুলির ডাকা বন্ধে মঙ্গলবার বেসরকারি বাসের চাকা গড়াল না দু’জেলাতেই। শহরাঞ্চল ও শিল্পাঞ্চলের জনজীবন অনেকাংশে স্বাভাবিক থাকলেও, দু’জেলার জঙ্গলমহল এলাকায় দোকান-বাজার বন্ধ থাকল। তবে চাষের ভরা মরসুমে রুজি বন্ধের আশঙ্কায় অনেক জায়গাতেই খেতমজুরেরা পুরোদমে কাজে নেমেছিলেন। অন্য দিকে, কিছু জায়গায় বন্ধ সমর্থকদের একাংশের বিরুদ্ধে জোর করে ব্যাঙ্ক, ডাকঘর বন্ধ করানো ও বাজার তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বন্ধ সমর্থকেরা।
জনজীবন
বন্ধের জেরে এ দিন বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা, রানিবাঁধ, সিমলাপাল, রাইপুরে দোকান-বাজার বন্ধ ছিল। বন্ধের প্রভাব ভাল ছিল পুরুলিয়া শহর, বান্দোয়ান, বরাবাজার, পুঞ্চা, বলরামপুর, ঝালদা, বাঘমুণ্ডি ব্লকগুলিতে। ছোটখাটো কিছু দোকান বাদ দিলে, প্রায় সমস্ত দোকানপাটই বন্ধ ছিল।
এ দিন সকালে পুরুলিয়া থেকে ঝাড়খণ্ডগামী কয়েকটি বাস চললেও জেলার মধ্য়ে চলা বেসরকারি বাস বন্ধ ছিল। পুরুলিয়া জেলা বাসমালিক সমিতি সূত্রের খবর, ৪৮টি রুটে চারশোর কিছু বেশি বাস চলে। এ দিন প্রায় কোনও বাসই রাস্তায় নামেনি। তবে অটো-ট্রেকারের মতো কিছু ছোট গাড়ি চলাচল করেছে। বাঁকুড়া শহরের গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডে সার দিয়ে বেসরকারি বাস দাঁড়িয়ে ছিল। তবে যাত্রীদের তেমন দেখা মেলেনি বাসস্ট্যান্ডে। বাস মালিকেরা জানাচ্ছেন, বেশ কিছু বাস রানিগঞ্জে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় গিয়েছিল। তবে ঝামেলার আশঙ্কাতেই বাস চালানো হয়নি এ দিন।
শিল্পাঞ্চল
পুরুলিয়ার জেলার শিল্পাঞ্চল নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ি, রঘুনাথপুর থেকে বাঁকুড়া জেলার শিল্পাঞ্চল বড়জোড়া, গঙ্গাজলঘাটি, মেজিয়া প্রভৃতি এলাকায় বন্ধের প্রভাব পড়েনি। বাঁকুড়া জেলার শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের কর্মকর্তারা। রেল শহর আদ্রাও ছিল স্বাভাবিক।
পথে সমর্থকেরা
বাঁকুড়া শহরে এ দিন সকাল থেকে বন্ধের সমর্থনে মিছিল করে বাম গণসংগঠনগুলি। শহরের কেরানিবাঁধ এলাকায় সাময়িক পথ অবরোধও করা হয়। তবে তেমন প্রভাব দেখা যায়নি শহরের বাজার-হাটে।
পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম, এসইউসি, বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলি এবং কংগ্রেস কর্মীরা পথে নেমেছিলেন।
হুড়ার লালপুরে এসইউসির সংগঠন সারা ভারত কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের পুরুলিয়ার সম্পাদক সীতারাম মাহাতোর নেতৃত্বে দীর্ঘক্ষণ জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। পুরুলিয়া শহরে মিছিল করে সিপিএম। ছিলেন দলের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়।
ভোর থেকে বান্দোয়ান ও বরাবাজারে দফায় দফায় মিছিল করে সিপিএম। বান্দোয়ানে মিছিলে ছিলেন দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রথু সিংহ, প্রাক্তন বিধায়ক সুশান্ত বেসরা প্রমুখ। বরাবাজারে বন্ধের সমর্থনে বাইক মিছিল করেছে সিপিএম।
ঝালদায় সকাল থেকেই সিপিএম ও এসইউসি কর্মীরা পৃথক ভাবে দফায় দফায় মিছিল করায় দোকানপাট মোটের উপরে বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঝালদা শহরে মোটরসাইকেল মিছিল করে কংগ্রেস। মিছিল শেষে ঝালদা ১ ব্লক অফিসের সামনে পিকেটিং করেন কংগ্রেস কর্মীরা। তবে ঝালদার সাপ্তাহিক গবাদি পশুর হাট ও পুরসভা নিয়ন্ত্রিত আনাজ বাজার খোলা ছিল।
‘জবরদস্তি’
কিছু জায়গায় বন্ধ করতে জোর খাটানোর অভিযোগ ওঠে। বাঁকুড়া শহরের মাচানতলা পেট্রোলপাম্প মোড় লাগোয়া একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে জমায়েত করে ভিতরে কর্মীদের ঢুকতে বাধা দেন বামকর্মীরা। ওই ব্যাঙ্ক খোলা যায়নি। বিষ্ণুপুরে এ দিন বেশ কিছু দোকানপাট বন্ধ ছিল। আবার চকবাজার, মাধবগঞ্জের আনাজের বাজারে খোলা ছিল। তবে বহু কৃষক বিষ্ণুপুরের বাজারে আনাজ নিয়ে এলেও বন্ধ সমর্থকদের জোরাজোরিতে তাঁরা বসতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন।
বিষ্ণুপুর লাগোয়া জন্তা গ্রামের চাষি তপন বাউল, মধুবনের চাষি সুশান্ত পালদের আক্ষেপ, “রোজকার মতো বাজারে আনাজ বিক্রি করতে এসেছিলাম। কিন্তু কিছু বন্ধ সমর্থক আমাদের হুমকি দিয়ে তুলে দেন। বন্ধের নামে জোর করে গরিব চাষিদের ক্ষতির মুখে ফেলা বন্ধ করা হোক।”
যদিও বিষ্ণুপুর শহরের কৃষকসভার নেতা অনিল পণ্ডিতের দাবি, “কোথাও জোর করে বন্ধ করানো হয়নি।”
বান্দোয়ানে বঙ্গীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ও ডাকঘর খুলেছিল। অভিযোগ, সিপিএমের কর্মীরা গিয়ে কিছুটা জোর করেই ব্যাঙ্ক ও ডাকঘর বন্ধ করে দেন। তবে সিপিএমের মিছিল চলে যাওয়ার পরেই ব্যাঙ্ক ও ডাকঘর ফের খুলে যায়। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব জোর খাটানোর অভিযোগ মানেননি।
কৃষিক্ষেত্র
কোথাও এখন ধান কাটা চলছে। কোথাও জলদি আলুর জমিতে জল দেওয়ার ব্যস্ততা। তাই দু’জেলার অনেক জায়গাতেই এ দিন চাষিদের পুরোদমে মাঠে দেখা গিয়েছে। তাঁদের অনেকের দাবি, নতুন কৃষি আইনের প্রতিবাদে তাঁরা আন্দোলনের কথা শুনলেও ওই আইনে কী বলা হয়েছে, তা নিয়ে তাঁদের অনেকেরই ধারণা নেই।
এ দিন বিষ্ণুপুর লাগোয়া প্রকাশ গ্রাম, বাগড়া গ্রাম, বসন্তপুরের মতো বিভিন্ন গ্রামের কৃষি জমিতে পুরদমে খেত মজুরদের চাষের কাজ করতে দেখা গিয়েছে। পাত্রসায়রের খেতমজুর শেখ মহরম মাঠে ধান কাটার কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, “বন্ধ করলে পেট চলবে কী করে? এমনিতেই মেশিনে ধান কাটা হচ্ছে। তাতে আমার মতো দিনমজুরদের পেটে টান পড়ছে। বন্ধ করতে আমি বসে থাকলে, অন্য কেউ সে কাজ করে দেবেন।”
নেতা-উবাচ
তবে বন্ধে ভাল সাড়া পড়েছে বলে দাবি করেছেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। পুরুলিয়ার সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় থেকে জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো দাবি, বলেন, ‘‘পুরুলিয়ায় স্বতঃস্ফূর্ত ও সর্বাত্মক বন্ধ হয়েছে।” একই দাবি করেছেন সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী।
তবে বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘সামনেই নির্বাচন। তাই তৃণমূল এখন বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে পরোক্ষ সমর্থন জোগাতে শুরু করেছে। বন্ধেও সেটাই হয়েছে। মানুষ অবশ্য সাড়া দেননি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy