ভোটের দিনে শুনশান বড়মার ঘর, উঠোন। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
তালাবন্ধ সাদা রঙের একতলা বাড়ি। গ্রিলের গেটে তালা ঝুলছে। ভিতরে কাঠের দরজাটিও তালা বন্ধ। ওই ঘরেই থাকতেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা প্রয়াত বীণাপাণি ঠাকুর (বড়মা)।
২০১৯ সালের ৫ মার্চ বড়মার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত যে কোনও ভোটের দিন সকাল থেকে এই বাড়ি গমগম করত রাজনৈতিক দলগুলির নেতা-কর্মীদের ভিড়ে। কোন দল তাঁকে ভোট দেওয়াতে নিয়ে বুথে পৌঁছবে, তা নিয়ে চলত দড়ি টানাটানি। সাত সকালে বড়মাকে নিয়ে কারা পৌঁছল বুথে, সেই বার্তা পৌঁছে যেত মতুয়া সমাজের মানুষের কাছে। রাজনৈতিক দলগুলি মনে করত, ভোটে এর একটা প্রভাব পড়ত মতুয়া ভক্তদের মধ্যে।
বড়মা না থাকায় ভোটে ঠাকুরবাড়ির ছবিটাই আমূল বদলে গিয়েছে। সেই উৎসাহ, টানটান উত্তেজনা, ভক্তদের ভিড়, রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা— সব কিছু থেকেই এ বার দূরে ঠাকুরবাড়ি।
সম্প্রতি মতুয়া ধর্ম মহামেলা চলাচালীন বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী তথা ঠাকুরবাড়ির সদস্য শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এসে বড়মার ঘরের তালা ভেঙে ঘরের দখল নিয়েছেন। তখন থেকেই বড়মার বাড়ি তালা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।
সোমবার সকালে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বড়মার বাড়ি তালা বন্ধ। সব শুনশান। কয়েক জন সংবাদমাধ্যমের কর্মী ছাড়া আর কারও দেখা নেই। ঠাকুরবাড়িতে এ দিন রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থক বা মতুয়া ভক্তদের ভিড় চোখে পড়েনি। ভোটের দিন বড়মা ঘরের সামনে বারান্দায় বসে থাকতেন। নেতানেত্রীরা অনেকে আশীর্বাদ নিতে আসতেন। সেই বারান্দাও এ দিন ছিল ফাঁকা। যাঁকে নিয়ে এত দিনের টানাপড়েন, সেই মানুষটার অনুপস্থিতিতে অনেকটাই যেন জৌলুস হারিয়েছে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ি।
মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ি বহু দিন ধরেই ভোটের রাজনীতিতে আলোচনার বিষয়। ভোটের দিনও ঠাকুরবাড়ির হাল-হকিকতের দিকে নজর থাকে সব মহলের। ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দিন মতুয়াদের বড়মাকে তৃণমূল ‘হাইজ্যাক’ করেছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী শিবিরের মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। তা নিয়ে সকাল থেকে চলে বিস্তর চাপান-উতোর। মতুয়া বাড়ির বড়মা কোন পক্ষে আছেন, তা প্রমাণের জন্য মরিয়া চেষ্টা দেখা গিয়েছিল।
ঠাকুরবাড়ির একটি সূত্র জানাচ্ছে, সে বার ভোটের দিন সকাল থেকেই নিরুদ্দেশ হয়ে যান বড়মা। জানা যায়, ভোরের দিকে নীল-সাদা একটি ট্যাক্সিতে উর্দিধারী কয়েক জন পুলিশকর্মী এসে নিয়ে যান বড়মাকে। সকাল ৮টা নাগাদ বিষয়টি জানাজানি হয়। বড়মার ঘরে এসে তাঁর ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ দেখেন, মা নেই। মঞ্জুলের ছেলেই সুব্রত আবার সে বারের বিজেপি প্রার্থী। মাকে না দেখে চিৎকার শুরু করেন মঞ্জুল। দু’তরফেই লোকজন জড়ো হয়ে যায়। সে বার বড়মাকে নিয়ে যে টানাপড়েন চলেছিল দু’পক্ষের— তা এখনও মনে রেখেছেন মতুয়া ভক্তেরা।
বড়মার নাতি তথা বিজেপি প্রার্থী শান্তনু এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ স্ত্রী সোমাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হেঁটে কাছেই ঠাকুরনগর আরপি বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যান। বড়মার ঘরের দিকে যাননি। শান্তনু পরে বলেন, ‘‘ঠাকুরমা বেঁচে থাকলে ভোট দিতে যাওয়ার আগে আশীর্বাদ নিয়ে বেরোতাম। ওঁর কথা খুব মনে পড়ছে।’’
আরপি বিদ্যালয়ের বুথে দেখা হল বড়মার ছেলে, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘‘মাকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে যেতাম। মায়ের কথা মনে পড়ছে।’’
বড়মার বৌমা তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর সকাল ৮টার সময়ে বাড়ির কাজকর্ম করেছিলেন। বললেন, ‘‘২০১৪ সাল থেকে বড়মাকে আমিই সঙ্গে করে ভোট দেওয়াতে নিয়ে গিয়েছি। সকাল থেকে সেই কথা মনে পড়ছে। মনটা ভাল লাগছে না। পরের দিকে যাব ভোট দিতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy