Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

পাট্টা পেয়েও হল না বাড়ি

সোমবারই সারেঙ্গা ব্লক অফিসের সামনে গিয়ে অনশনে বসেছিলেন কিছু বাসিন্দা। তার পরে বিষয়টি নিয়ে নাড়াচড়া শুরু হয়েছে।

থমকে: পড়ে রয়েছে পাথর-কুচি। ছবি: শুভেন্দু তন্তুবায়

থমকে: পড়ে রয়েছে পাথর-কুচি। ছবি: শুভেন্দু তন্তুবায়

সুশীল মাহালি 
সারেঙ্গা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৪
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চ থেকে মিলেছিল পাট্টার কাগজ। সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য প্রথম কিস্তির টাকাও জমা পড়ে গিয়েছিল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এসে গিয়েছিল ইমারতি দ্রব্যও। কিন্তু সাত বছরে একটিও ইট গাঁথা যায়নি। ঝুপড়িতেই দিন কাটছে বাঁকুড়ার সারেঙ্গার বাগালপাড়ার নমিতা দুলে, শিখা দুলে, গায়ত্রী লোহারদের। তাঁদের দাবি, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আবেদন করেও বাড়ি তোলা যায়নি। অভিযোগ, স্থানীয় কিছু মানুষের বাধাতেই বাড়ি তৈরি করা যাচ্ছে না। কিন্তু এত বছরেও কেন সমস্যা মেটানো যায়নি? এই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস মঙ্গলবার বলেন, ‘‘ওই জায়গাতে বাড়ি তৈরি নিয়ে কারও সমস্যা রয়েছে কি না তা জানতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে। ওই সময়সীমার মধ্যে কেউ আপত্তি না জানালে আমরা কাজ শুরু করব। তখন কেউ বাধা দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

শুধু নমিতাদেবী, শিখাদেবী বা গায়ত্রীদেবীরাই নন, বাগালপাড়ায় কংসাবতী সেচ ক্যানালের পাড়ে বসবাসকারী ৫৬টি পরিবারের জন্য রাজ্য সরকারের ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’ প্রকল্পে পাট্টা দিয়ে বাড়ি তৈরির জন্য প্রথম দফার ২৪ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছিল। নমিতাদেবী, শিখাদেবী জানাচ্ছেন, ওন্দায় মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় প্রশাসনের তরফে বাস ভাড়া করে তাঁদের নিয়ে গিয়ে হাতে পাট্টার কাগজ তুলে দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের আক্ষেপ, “সারা জীবনটাই কেটে গেল ঝুপড়ি ঘরে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে পাট্টা পাওয়ার পরে দুর্দিন ঘুচবে বলে স্বপ্ন দেখেছিলাম। বছরের পের বছর ঘুরে গেল, কিন্তু বাড়ি আর তৈরি হল না! ”

কোথায় সমস্যা? জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাগালপাড়ার ওই পরিবারগুলিকে ছোট সারেঙ্গায় মিশন ময়দান সংলগ্ন খাস জমিতে বাড়ি তৈরি করার জন্য পাট্টা দেওয়া হয়েছিল। সে বাবদ টাকা বরাদ্দ হওয়ার পরেই সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির তরফে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে বাড়ি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। উপভোক্তারা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দেন। সেই টাকা নিয়ে বাড়ি তৈরির জন্য বালি, পাথর নামানোও হয়ে গিয়েছিল। অভিযোগ, তারপরেই স্থানীয় বাসিন্দারা ওই খাস জমিতে বসতি গড়ে তোলার বিরোধিতা করে কাজ আটকে দেন।

কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজ করলে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চাননি। ওই খাস জমি ঝোপঝাড়ে ভরা। ইতিউতি ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে নোংরা। স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে শৌচকর্ম সারেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দার বক্তব্য, ওই এলাকায় বসতি গড়ে উঠলে শৌচকর্মে অসুবিধা হবে। কিন্তু নির্মল বাংলা প্রকল্পে তো শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এখানে কি হয়নি? জবাব মেলেনি।

সোমবারই সারেঙ্গা ব্লক অফিসের সামনে গিয়ে অনশনে বসেছিলেন কিছু বাসিন্দা। তার পরে বিষয়টি নিয়ে নাড়াচড়া শুরু হয়েছে। প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরাও। বিজেপির সারেঙ্গা ১ মণ্ডল সভাপতি বিষ্ণুপদ গড়াইয়ের দাবি, “মানুষকে পাট্টার কিছু কাগজ ধরিয়ে দিয়েই প্রশাসন দায় সারতে পারে না। দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে ওই মানুষগুলিকে তাঁদের অধিকার পাইয়ে দেওয়া হোক।”

কেন সমস্যা মেটানো যাচ্ছে না? সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমানে ওই ব্লকের তৃণমূল সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে ওই মানুষগুলি পাট্টা পেয়েছিলেন। তাঁদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য আমরা একাধিক বার সেখানকার স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। এমনকি, সেখানে সাধারণ শৌচাগার তৈরিও করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও ভাবেই তাঁদের মত করাতে পারিনি।” মহকুমা শাসক (খাতড়া) রাজু মিশ্র জানাচ্ছেন, দু’পক্ষকে নিয়ে একাধিকবার আলোচনায় বসা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। এই পরিস্থিতিতে গোটা বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের ভরসায় দিন কাটাচ্ছেন বাগালপাড়ার ক্যানাল পাড়ের ৫৬টি পরিবার।

অন্য বিষয়গুলি:

Sarenga House Construction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy