মাটির বাড়ি ভেঙ্গে আবাস যোজনার বাড়ি শুরু হয়েছে। এখন পুকুরের পাড়ে ত্রিপলই ভরসা । বিষ্ণুপুরের বৈষ্ণবপাড়ায় । ছবিঃ অভিজিৎ অধিকারী ।
হাড়ে রীতিমতো কাঁপুনি ধরিয়ে রাতে পারদ নেমেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। দু’পাটি দাঁতের ঠোকাঠুকি দেখে হিমশীতল রাতে পলিথিনের ছাউনির নীচে বসে নীলা ক্ষেত্রপাল প্রশ্নটা করেন নিজেকেই— ‘‘এ ভাবে আর কত দিন কাটাতে হবে?’
বিষ্ণুপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বৈষ্ণবপাড়ার বাসিন্দা নীলা ক্ষেত্রপাল তাঁদের মধ্যে এক জন, যাঁরা সরকারি আবাস প্রকল্পে পাকা বাড়ি পাওয়ার আশায় নিজেদের মাটির বাড়ি ভেঙেছিলেন। কেন্দ্র-রাজ্য দ্বৈরথে আটকে রয়েছে আবাস যোজনার বরাদ্দ। ন’মাস আগে বিষ্ণুপুর পুর-এলাকায় আবাস যোজনার কাজ শুরু হলেও শেষ হয়নি। বরাদ্দ টাকা না আসায় বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। সে প্রসঙ্গ উঠলেই এখন ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন উপভোক্তাদের তালিকায় থাকা গরিব মানুষজন। নীলার পরিবারের কর্তা অশ্বিনী ক্ষেত্রপাল বলেন, “আম ও ছালা, দুই-ই গিয়েছে আমাদের। আমাদের নাম উপভোক্তাদের তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে ভেবেছিলাম, মাথায় একটা পাকা ছাদ হবে। পাকা বাড়িতে বাস করব। কিন্তু শুরুতেই কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন ভরসা পলিথিন। বাঁশের খুটিতে পলিথিন চাপিয়ে ছোটছোট নাতি-নাতনিদের নিয়ে পুকুর পাড়ে রাত কাটাচ্ছি। দিন মজুরিতে সংসার চলে। বাড়ি করবো কী করে? মাটির বাড়িও গেল, পাকা বাড়িও পেলাম না।”
পুরপ্রধান গৌতম গোস্বামী বলেন, “২০২২-র ডিসেম্বরে শুরু হয় আবাস যোজনার পঞ্চম পর্যায়ের কাজ। এই পর্যায়ে ১২০০টি বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা শহরে। শেষ হয়েছে মাত্র চারটি। কাজ শুরু হয়েছিল ৭৯১টি বাড়ির। টাকা না আসায় নির্মাণকাজ অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।’’ পুরপ্রধান মানছেন, ‘‘পুর-এলাকার বেশির ভাগ উপভোক্তারই আলাদা জমি নেই। মাটির বাড়ি ভেঙেই আবাস যোজনার বাড়ি তৈরি হচ্ছে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় ছোটছোট শিশুদের নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন উপভোক্তারা।’’ গৌতমের কথাতেই পরিষ্কার, পাকা বাড়ির আশায় মাটির ঘর ভেঙেছিলেন যাঁরা, এখন তাঁদের অবস্থা অনেকটা সেই ‘সুখে থাকতে ভূতের কিল খাওয়ার’ মতো। পুরপ্রধানের দাবি, ওই সব অসহায় মানুষজনকে পুরসভা পলিথিন দিয়েছে। সেগুলি টাঙিয়েই কোনওরকমে বাস করছেন তাঁরা। আর কত দিন তাঁদের এ ভাবে কাটাতে হবে, তার উত্তর পুরপ্রধানের কাছেও নেই। তাঁর কথায়, ‘‘জানি না কবে তাঁরা পাকা বাড়ি পাবেন। অনেকে আবার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার আগেই নির্মাণ সামগ্রীর দোকান থেকে ধারে ইট, রড, সিমেন্ট ও বালি কিনে কাজ এগিয়েছেন। তাঁদের বাড়িতে পাওনাদারদের চাপ বাড়ছে দিনের পর দিন।”
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে আবাস যোজনার প্রথম পর্যায়ের কাজের উপভোক্তা ছিলেন ৫৫৬ জন। বরাদ্দ হয়েছিল ১৯,৪৪,৮৯,০০০ টাকা। সে সব বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের উপভোক্তা ছিলেন ৫৯১ জন। বাড়ি হয়েছে ৫৯০ জনের। বরাদ্দ হয়েছিল ২০,৩০,০৯,০০০ টাকা। একটি বাড়ি নিয়ে বিতর্ক থাকায় পরে সেটির কাজ শুরু হয়। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তৃতীয় পর্যায়ে উপভোক্তার সংখ্যা ছিল ১১৭৫। বাড়ি পেয়েছেন ১০৬৫ জন। বাকি ১১০টি বাড়ির কাজ চলছে। বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩৬,৮৯,৯৯,০০০ টাকা। ২০২১-২২ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ে উপভোক্তার সংখ্যা ৯৭৭ জন। বাড়ি হয়েছে ৪৫৫ জনের। ৩০টি বাড়ির কাজ বিভিন্ন ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে। কাজ চলছে ৪৯৯টি বাড়ির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy