Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Job oriented Couses

কলেজ বিমুখ অনেকে, ভিড় কারিগরি শিক্ষায়

উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণেরা কোথায় ভর্তি হচ্ছেন বা ভর্তি না হলে কেন হচ্ছেন না, সেই খোঁজ নিয়ে স্কুলগুলিকে রিপোর্ট দিতে বলেছিল শিক্ষা দফতর।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল, তারাশঙ্কর গুপ্ত
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ ০৮:০১
Share: Save:

শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ বেকার যুবকদের বড় ধাক্কা দিয়েছে। সরকারি অফিসেও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা কমছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি না হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের অনেকেই কারিগরি শিক্ষা বা কর্মমুখী পাঠ্যক্রমে ঝুঁকছেন। শিক্ষা দফতরের নির্দেশে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের মধ্যে সমীক্ষা করতে গিয়ে এমনই তথ্য মিলছে দু’জেলায়।

উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণেরা কোথায় ভর্তি হচ্ছেন বা ভর্তি না হলে কেন হচ্ছেন না, সেই খোঁজ নিয়ে স্কুলগুলিকে রিপোর্ট দিতে বলেছিল শিক্ষা দফতর। কম শিক্ষকের স্কুলগুলি একাদশের রেজিস্ট্রেশনের মধ্যে তড়িঘড়ি ওই তথ্য জোগাড়ে কার্যত নাকানিচোবানি খেয়েছে। এর প্রতিবাদও জানিয়েছে এবিটিএ।

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, আর্থিক সমস্যায় উচ্চ মাধ্যমিকের পরে অনেকেই সংসারের হাল ধরতে বাইরে কাজে চলে যান। মেয়েদের অনেকের বিয়ে হয়ে যায়। আর লক্ষ্যণীয়, গত বছর থেকে সাধারণ ডিগ্রি কলেজের পরিবর্তে পেশামুখী পড়াশোনার প্রবণতা বাড়ছে। বিষ্ণুপুর মহকুমার একটি কলেজের অধ্যক্ষ জানান, তাঁদের প্রথম বর্ষের জন্য এক হাজারের বেশি আসন রয়েছে। এখনও পর্যন্ত পোর্টালে তিনশোর কিছু বেশি পড়ুয়া তাঁদের কলেজ প্রথম পছন্দ হিসেবে আবেদন করেছেন।

সমীক্ষায় আর কী মিলেছে?

সোনামুখী বি জে হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন চোংরে বলেন, ‘‘বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায় ঝোঁক বেশি। এবার যারা ‘নিট’ বা ‘জয়েন্ট এন্ট্রান্সে’ পাননি, তাঁদের কেউ কেউ আগামী বছরের প্রস্তুতির জন্য শুধু কোচিং নিতে চাইছেন। পলিটেকনিক, বিবিএ পড়ার আগ্রহও বেশি। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা নার্সিং এবং আইটিআই করতে চান। ডিগ্রি কলেজে পড়ার ঝোঁক কমেছে।’’ বড়জোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বামদেব মুখোপাধ্যায়ও জানান, কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার দিকেই ঝোঁক বেশি। বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জীবনানন্দ মুখোপাধ্যায়ের অনুমান, তাঁদের স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণদের প্রায় ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী কারিগরি শিক্ষায় যাবেন। রঘুনাথপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস দত্তের মতে, ছাত্রীরা যদিও বা কলেজে ভর্তি হচ্ছেন, ছাত্রদের মধ্যে সেই প্রবণতা তুলনায় কম।

ফলে, ডিগ্রি কলেজগুলিতে যেখানে আসন ফাঁকা থাকার আশঙ্কা, সেখানে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে আবেদনের পাহাড় জমছে। কারিগরি শিক্ষা দফতরের একটি সূত্রের দাবি, পুরুলিয়ার পাঁচটি সরকারি আইটিআইতে মোট আসন প্রায় ৬০০। সেখানে ভর্তির আবেদন পড়েছে ১২ হাজারের কাছাকাছি। তাঁদের সিংহ ভাগই উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ।

‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রের্স’ সংগঠনের পুরুলিয়ার জেলা সম্পাদক অভিষেক মিশ্র বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের সাধারণ স্নাতক স্তরে ভর্তি হওয়ার বদলে কারিগরি শিক্ষাক্ষেত্রে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ ক্রমশই বাড়ছে।” এবিটিএ-র পুরুলিয়া জেলা সহ-সভাপতি প্রণবকুমার নিয়োগীর দাবি, উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পড়ুয়া কলেজে স্নাতকে ভর্তি হচ্ছেন। বাকি ২০ শতাংশ ঝুঁকছেন কারিগরি শিক্ষার দিকে। পড়ে থাকা ৩০ শতাংশ কোনও কলেজেই ভর্তি হচ্ছেন না। প্রণবের মতে, ‘‘ওই ৩০ শতাংশের মধ্যে বড় অংশই দিনমজুরের কাজ শুরু করেছেন।’’ রঘুনাথপুর মহকুমার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দাবি, ফোনে কয়েকজন পড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনেছেন, তাঁরা কাজের সন্ধানে চেন্নাই গিয়েছেন।

তবে উদ্বেগের হল উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের একাংশ স্কুল থেকে এখনও ‘মার্কশিট’ ও ‘স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট’ নেননি। এবিটিএ-র পুরুলিয়ার সহ-সভাপতি প্রণবকুমারের দাবি, ওই সংখ্যাটা কমবেশি ২০ শতাংশ।

সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ভর্তিতে অনীহা কেন? পাত্রসায়রের ছাত্র সৌমদীপ দাসের মতে, ‘‘স্কুল-কলেজে সে ভাবে চাকরি কোথায়? তাই আমার মতো অনেকেই একটা বছর সময় নিয়ে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’’

বাঁকুড়ার গৃহশিক্ষক তথা কোরিয়ার গাইড অর্ক মুখোপাধ্যায়ও মানছেন, কারিগরি শিক্ষাই এখন বড় ভরসা।

অন্য বিষয়গুলি:

purulia bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy