Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
purulia monsoon

টানা বৃষ্টিতে পুরুলিয়ায় চাষে স্বস্তি

পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় চাষযোগ্য জমির অর্ধেকই বাইদ। ৩০ শতাংশ ‘কানালি’ অর্থাৎ সমতল। বাকি ২০ শতাংশ ‘বহাল’ অর্থাৎ, নিচু জমি।

বোরোয়। নিজস্ব চিত্র

বোরোয়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
  পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২০ ০১:৪৬
Share: Save:

ভাদ্রের কালো মেঘে আশার আলো দেখছেন পুরুলিয়ার কৃষকেরা। গত বছর বৃষ্টির অভাবে মার খেয়েছিল আমনের চাষ। চলতি মরসুমে শ্রাবণের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে বৃষ্টির ঘাটতি দেখা দেওয়ায় বাইদ (উঁচু) জমিতে ধান রোয়া নিয়ে চিন্তায় ছিলেন চাষিরা। অবশেষে নিম্নচাপের টানা বৃষ্টি স্বস্তি দিয়েছে তাঁদের।

পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় চাষযোগ্য জমির অর্ধেকই বাইদ। ৩০ শতাংশ ‘কানালি’ অর্থাৎ সমতল। বাকি ২০ শতাংশ ‘বহাল’ অর্থাৎ, নিচু জমি। পুরুলিয়া জেলায় ৩ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। যেহেতু এই জমির অধিকাংশই বৃষ্টি-নির্ভর, তাই ঠিকমতো, বৃষ্টি হলে আমনের মরসুমে কমবেশি ১১ লক্ষ টন ধান উৎপাদন হয়। জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) সুশান্ত দত্ত বলেন, ‘‘গত বছরে বৃষ্টি বেশ কিছুটা কম হওয়ায় আমনের উৎপাদন কিছুটা মার খেয়েছিল। সে বার কমবেশি ন’লক্ষ টন ধান হয়েছিল।’’

পুরুলিয়ার কৃষকেরা সাধারণত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধানের চারা রোয়ার কাজ শুরু করেন। দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকেই রোয়ার কাজে গতি আসে। চলে অগস্টের শেষ পর্যন্ত। চলতি বছরে জুন-জুলাইয়ে ঠিকঠাক বৃষ্টি পাওয়ায় চাষিরা এ বার জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রোয়ার কাজে গতি আনেন।

কিন্তু শ্রাবণের মাঝামাঝির পর থেকে বৃষ্টিতে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় বাইদ জমিতে রোয়ার কাজ থমকে গিয়েছিল।

কোথায় কত

বৃষ্টিপাত

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জুনে পুরুলিয়া জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ ২৫২ মিলিমিটার। সেখানে চলতি মরসুমে ওই মাসে বৃষ্টি হয়েছে ২৫৫ মিলিমিটার। জুলাইয়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৯৮ মিলিমিটার, এ বারে ওই মাসে বৃষ্টি হয়েছে ২৯১ মিলিমিটার। গত বছর জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৩৬ মিলিমিটার ও ১৪৭ মিলিমিটার।

সুশান্তবাবুর কথায়, ‘‘গতবারের ঘাটতি এ বার নেই। চলতি বছরে জুন-জুলাইয়ে ভাল বৃষ্টি হয়েছে। চাষিরা বহাল ও কানালি জমিতে রোয়ার কাজ শেষ করেছেন। বাইদ জমিতেও রোয়ার কাজ চলছে। এই বৃষ্টি বাইদ জমির পক্ষে আশীর্বাদ। ভাল ফলনের জন্য এই বৃষ্টি বহাল ও কানালি জমির পক্ষেও সহায়ক হবে।’’

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, অগস্টে স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ ২৯০ মিলিমিটার। এ বার ২০ অগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২১২ মিলিমিটার। কিন্তু পুরুলিয়া ২, বরাবাজারের মতো কয়েকটি ব্লকে সে ভাবে বৃষ্টি হয়নি। বরাবাজারের হিঁজলা গ্রামের চাষি বলভদ্র মাহাতো বলেন, ‘‘আমার প্রায় সমস্ত জমিই বাইদ। বৃষ্টির অভাবে গত বছর চাষই হয়নি। এ বারেও বৃষ্টির অভাবে এত দিন চাষ করতে পারিনি। শুনেছি, নিম্নচাপের বৃষ্টি আরও কয়েকটা দিন চলবে। এ রকম বৃষ্টি চললে রোয়ার কাজটুকু করতে পারব বলে মনে হচ্ছে।’’

পুরুলিয়া ২ ব্লকের দুমদুমি গ্রামের বাসিন্দা বাবুলাল গড়াইয়েরও জীবিকা কৃষিকাজ ও চায়ের ছোট্ট দোকান। তিনি বলেন, ‘‘করোনা আবহে চায়ের দোকানে বিক্রিবাট্টা একেবারে তলানিতে। গতবার তেমন চাষ হয়নি। এ বার ঋণ নিয়ে উন্নত প্রজাতির ধানের বীজ কিনেছিলাম। কিন্তু বাইদ জমিতে এত দিন ধোন রোয়ার কাজ করতে পারছিলাম না। এই বৃষ্টি আমাদের খুবই কাজে লাগবে।’’

জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি শুক্রবার নিজে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে বেরিয়েছিলাম। নিম্নচাপের বৃষ্টি পেয়ে চাষিরা আনন্দের সঙ্গে মাঠে কাজ করছেন। আশা করি, ধানের ফলন এ বার ভাল হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Monsoon Rain Purulia Paddy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy