‘হাঁসুলি বাঁক’ খ্যাত কুঁয়ে নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
সিউড়ি শহরে রাজ্যের মন্ত্রী থাকাকালীনই শহরের অদূরে বালিঘাট নিয়ে বিবাদে খুনের ঘটনা ঘটেছে। খোদ শাসক দলের পঞ্চায়েত সদস্যকে গাড়ি চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। এ বার প্রশাসনের নজরদারির অভাবে বালি এবং মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত হাঁসুলি বাঁক ভৌগোলিক বৈচিত্র্য হারাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল। ক্ষুব্ধ জেলার সাহিত্যপ্রেমী মানুষজন। হতাশ সাহিত্যিকের পরিবারের সদস্যরা।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লাভপুরের কাদিপুরের কাছে কুঁয়ে নদী আদিবাসী মহিলাদের হাঁসুলি হারের মত বাঁক নিয়েছে। সে জন্য জায়গাটি হাঁসুলি বাক নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা এবং ভৌগোলিক বৈচিত্র্যকে উপজীব্য করে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা করেন তাঁর কালজয়ী উপন্যাস ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’। সেই সুবাদে প্রায় সারা বছরই জেলায় আসা পর্যটকেরা হাঁসুলি বাঁক পরিদর্শনে আসেন। আসেন সাহিত্যের গবেষকেরাও।
এলাকায় পর্যটন সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে বীরভূমের ভূমিপুত্র তারাশঙ্করের ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সৌন্দর্যায়নের জন্য সেখানে একগুচ্ছ প্রকল্প নিয়েছে প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, নজরমিনার, রাত্রিবাসের কটেজ, ক্যাফেটেরিয়া-সহ নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনেরই নজরদারির অভাবে মাফিয়ারা অবাধে হাঁসুলি বাঁকের গর্ভ থেকে বালি এবং মাটি পাচার করে চলেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেশ কিছু ইটভাটাও গজিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ।
তারাশঙ্করের ভ্রাতুষ্পুত্র চিত্র পরিচালক পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলার সাংস্কৃতিক কর্মী উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়রা বলছেন, ‘‘হাঁসুলি বাঁককে ঘিরে প্রশাসনের পরিকল্পনায় আমরা খুশি। কিন্তু যে হারে বালি ও মাটি পাচার হচ্ছে তাতে হাঁসুলি বাঁক অচিরেই তার ভৌগোলিক বৈচিত্র্য হারাবে।’’ বিডিও সন্তু দাসের দাবি, ‘‘নজরদারির অভাবের কথা ঠিক নয়। নিয়মিত নজরদারির পাশাপাশি সরেজমিনে তদন্তও করা হয়েছে। কিন্তু বালি কিম্বা মাটি পাচারের প্রমাণ মেলেনি।’’
হাঁসুলি বাঁক এক সময় আম , জাম, বেল-সহ নানা গাছগাছালিতে ভরা ছিল। সেইসময় হাঁসুলি বাঁকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই ছিল অন্য রকম। বালি এবং মাটি পাচারের পাশাপাশি নির্বিচারের কেটে ফেলা হয়েছে সে সব গাছ। তাই সেই চিরন্তন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও হারাতে বসেছে হাঁসুলি বাঁক। তৃণমূল সরকার ২০১১ সালে রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের মানচিত্র আলাদা স্থান করে নেয় লাভপুর তথা হাঁসুলি বাঁক। প্রশাসনিক কর্তারা দফায় দফায় হাঁসুলি বাঁকে এসেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেখানে উল্লেখযোগ্য কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এলাকার বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ বলছেন, ‘‘হাঁসুলি বাঁকের সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি ভৌগোলিক বৈচিত্র্য রক্ষার্থে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।’’
বাইরে থেকে যেসব পর্যটকরা জেলায় আসেন তাঁদের পর্যটন তালিকায় লাভপুরের নাম থাকে। ফুল্লরা মন্দির, তারাশঙ্করের জন্মভিটে, ধাত্রীদেবতার পাশাপাশি হাঁসুলি বাঁক দেখতে যান তাঁরা। তারাশঙ্করের বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবের হাঁসুলি বাঁককে মেলানোর চেষ্টা করেন সাহিত্য অনুরাগী অসংখ্য পর্যটক। তারাশঙ্করপ্রেমীদের দাবি, ‘‘তা মেলাতে গিয়ে পর্যটকদের হতাশ হতে হয়। অবিলম্বে হাঁসুলি বাঁককে রক্ষার্থে প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। নাহলে পর্যটকদের মনে বিরূপ ধারণা জন্মাবে।’’ বিডিওর আশ্বাস, ‘‘হাঁসুলি বাঁকের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য রক্ষার ব্যাপারে প্রশাসন সজাগ রয়েছে। সৌন্দর্যায়নের জন্য একগুচ্ছ প্রস্তাব পর্যটন দফতরে পাঠানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy