Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Suri

সাধুর ঝুলন্ত দেহ, তপ্ত পুরন্দরপুর

মৃতের ভাই জীবন মণ্ডল মন্দির কমিটির সম্পাদক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি ঘটনার সিবিআই তদন্তও দাবি করেন।

সাধুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পর পরিস্থিতি সামলাতে পৌঁছেছে পুলিশ। রবিবার পুরন্দরপুরের বেহিরা কালীতলায়। নিজস্ব চিত্র

সাধুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পর পরিস্থিতি সামলাতে পৌঁছেছে পুলিশ। রবিবার পুরন্দরপুরের বেহিরা কালীতলায়। নিজস্ব চিত্র প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:১২
Share: Save:

এক সাধুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল সিউড়ির পুরন্দরপুরে। রবিবার সকালে সিউড়ি ২ ব্লকের পুরন্দরপুর পঞ্চায়েতের বেহিরা কালীতলা এলাকায় কালীমন্দিরের অদূরে একটি বেলগাছ থেকে ভুবন বাবা ওরফে ভুবন মণ্ডলের ঝুলন্ত দেহ মেলে। তার পরেই বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। মন্দির চত্বরের বাসিন্দা এক মহিলা সাধু, আলপনা সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখনও কেউ আটক বা গ্রেফতার হয়নি।

মৃতের ভাই জীবন মণ্ডল মন্দির কমিটির সম্পাদক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি ঘটনার সিবিআই তদন্তও দাবি করেন। স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়ার পরেই কল্যাণ এলাকা থেকে চলে যান। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ভুবন বাবার কোনও ঝামেলা ছিল না। ঘটনার কথা জানতে পেরেই আমি যাই। আমরা একই গুরুর শিষ্য। যদি আমার নামে কোনও অভিযোগ ওঠে, আমি পুলিশকে সব রকম সহযোগিতা করব।’’ পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা রুজু করেছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তেও পাঠানো হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় দশ বছর ধরে কালীমন্দিরের পিছনেই একটি আশ্রম করে থাকতেন ভুবন। দুবরাজপুর সংলগ্ন পাঁচড়ায় তাঁর পৈতৃক বাড়ি। মন্দির কমিটির সঙ্গে তাঁর বনিবনা ছিল না বলেই স্থানীয় সূত্রে দাবি। একাধিক ঘটনায় তিনি মন্দির কমিটির বিরুদ্ধে যাওয়ায় তাঁকে কমিটির লোকেরা মারধরও করেছেন বলেও তাঁর ভক্তদের দাবি। অভিযোগ অস্বীকার করে মন্দির কমিটির দাবি, ভুবন নানা অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্থানীয়দের দাবি, বছরখানেক আগে একটি ঝামেলার পরেই মন্দির ছেড়ে চলে যান ভুবন। রবিবার ভোরেই তিনি ফিরে আসেন বেহিরাতে। সকালেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।

খবর চাউর হতেই কয়েকশো মানুষ জড়ো হন মৃতদেহের কাছে। খবর দেওয়া হয় সিউড়ি থানার পুলিশকেও। মৃত্যুর খবর পেয়ে আসেন কল্যাণ-সহ মন্দির কমিটির সদস্যরাও। কমিটির সদস্য তথা পুরন্দরপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অশ্বিনী মণ্ডলও পৌঁছন। উত্তেজিত জনতার রোষের মুখে পড়েন সকলেই। ইট, লাঠি ছোড়া হয়। মন্দির চত্বরে থাকা ওই মহিলা সাধুর উপরও চড়াও হয়ে তাঁকে মারধর করে ক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, মন্দির কমিটির মদতেই ওই মহিলা সাধুকে আনা হয়েছিল। পুলিশ ওই মহিলা সাধুকে উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। তার আগে তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ওই সাধুর এক দিন মাত্র দেখা হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে আমার কোনও ঝামেলা নেই। এ দিন সকালে কী হয়েছিল, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’’

উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গোটা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে যে বা যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। তার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পুলিশের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মৃতদেহের ব্যাগ থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে। সূত্রের দাবি, যেখানে লেখা মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় এবং মন্দিরের আশেপাশেই সমাধিস্থ করার কথাও লেখা রয়েছে।

ভুবনের পরিজনদের উপস্থিতিতে গাছ থেকে দেহ নামিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। পুলিশ সূত্রে দাবি, জোরদার প্রমাণ না পেয়েই কাউকে গ্রেফতারের পথে যেতে চায় না পুলিশ। সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে। সেটিকেও আমরা যাচাইয়ের জন্য পাঠিয়েছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Suri Saint Hanging Body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE