বাইরে ও ভিতরে: পাত্রসায়র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র
রাস্তা বা ঝোপে না ফেলে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ সদ্যোজাতকে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় রেখে গেলে তাদের বাঁচানো যাবে। সেই ভাবনা থেকেই প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি বিশেষ জায়গা (পালনা) তৈরির সুপারিশ করেছিল ‘সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি’ বা সংক্ষেপে ‘কারা’। বাস্তব বলছে, বছর ঘুরলেও ‘পালনা’ তৈরি হয়নি জেলার বহু হাসপাতালে। এমনকি, ক’টি হাসপাতালে ‘পালনা’ তৈরি হয়েছে, তা-ও জানাতে পারেননি জেলার কোনও স্বাস্থ্য আধিকারিক।
বাঁকুড়া ‘চাইল্ড লাইন’ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে তিনটি, ২০১৫ সালে সাতটি, ২০১৬ সালে পাঁচটি, ২০১৭ সালে একটি, ২০১৮ সালে তিনটি এবং ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ছয়টি সদ্যোজাত শিশুকে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল বলেন, “রানিবাঁধে একটি জঙ্গলে এক সদ্যোজাতকে পাথর চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। ওন্দায় এক সদ্যোজাতকে উদ্ধার করা হয় গাছের পাতার স্তূপ থেকে।” এই পরিসংখ্যান দেখে আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন, সদ্যোজাতকে ফেলে দেওয়ার প্রবণতা কমানো যায়নি।
‘কারা’র সুপারিশ মেনে বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস অনেক আগেই জেলায় সমস্ত সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পালনা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বাঁকুড়া স্বাস্থ্যজেলার অন্তর্গত ক’টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিত্যক্ত সদ্যোজাত শিশু রাখার বিশেষ জায়গা করা হয়েছে, তা স্বাস্থ্য-কর্তারা জানাতে পারেননি। বাঁকুড়া জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “জেলার সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই পালনা গড়ার নির্দেশ দিয়েছি। কতগুলি কেন্দ্রে গড়া হয়েছে তা খোঁজ নেব।” বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলার কর্তাদের দাবি, পাত্রসায়র-সহ পাঁচ-ছ’টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু রেখে যাওয়ার বিশেষ জায়গা গড়া হয়েছে। সম্প্রতি পাত্রসায়র ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেই জায়গা থেকেই এক সদ্যোজাতকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটি বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।
বাঁকুড়া মেডিক্যালেও ‘পালনা’ হয়নি। হাসপাতাল সুপার গৌতমনারায়ণ সরকারের বক্তব্য, “লোকচক্ষুর আড়ালে কোনও বিশেষ জায়গায় পালনা গড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই রকম জায়গা চিহ্নিত করা যায়নি।” জেলাশাসক বলেন, “এখনও যেখানে পালনা গড়া হয়নি, সেখানে আগামী এক মাসের মধ্যেই সেই কাজ করে ফেলার নির্দেশ দেব।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে জেলার সরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম, মন্দির, মসজিদ লাগোয়া এলাকায় ‘পালনা’ গড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ‘পালনা’য় লাগানো থাকবে ‘সেন্সর’। সেখানে সদ্যোজাত শিশু রেখে গেলে স্বাস্থ্যকর্মীরা তা জানতে পারবেন। জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রান্তিক ঘোষ বলেন, ‘‘শিশু ফেলে যাওয়ার ঘটনা কাম্য নয়। শিশুর লালন-পালনে অক্ষম হলে বা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কোনও শিশুর জন্ম হলে অভিভাবকেরা নিজের নাম পরিচয় গোপন রেখেই সদ্যোজাতকে সরাসরি শিশুকল্যাণ কমিটির কাছে দিয়ে যেতে পারেন।” তাঁর সংযোজন, “সেটা করতে না পারলেও অন্তত একটি সুরক্ষিত জায়গায় শিশুটিকে রেখে যাওয়া উচিত। তাতে ওই সদ্যোজাতের জীবন রক্ষা পাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy