ফাইল চিত্র।
ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকের চরম ঘাটতি রয়েছে, অভিযোগ সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠনের। পুরুলিয়া জেলার প্রায় অর্ধেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থায়ী চিকিৎসক ছাড়াই চলছে বলে দাবি তাদের। এই পরিস্থিতিতে এই জেলার বাসিন্দাদের বড় অংশ স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য গ্রামীণ চিকিৎসকদের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন বলে চিকিৎসক মহলের একাংশ জানাচ্ছেন। তার ফলেই, পুরুলিয়ার বিভিন্ন ব্লকে গত কয়েক বছরে বেড়েছে গ্রামীণ চিকিৎসকের সংখ্যা। কিন্তু তাঁদের অভিজ্ঞতা বা চিকিৎসা করার প্রথাগত শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকেরই।
জেলার বিভিন্ন ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় উপযুক্ত পরিষেবা মেলে না, এমন অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সপ্তাহে এক বা দু’দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য পরিষেবা মেলে বলে দাবি। এই পরিস্থিতিতে, প্রত্যন্ত এলাকার বহু মানুষের কাছে গ্রামীণ চিকিৎসকেরা ভরসা, তা মানেছেন স্বাস্থ্য-কর্তারাও। পুরুলিয়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কুণালকান্তি দে বলেন, ‘‘গ্রামীণ চিকিৎসকদের দ্বারা কিছু সংখ্যক মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।’’ জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়ার বক্তব্য, ‘‘শুধু পুরুলিয়া নয়, নানা জেলায় চিকিৎসকের কিছু ঘাটতি আছে। যার ফলে, গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দারা প্রাথমিক চিকিৎর জন্য গ্রামীণ চিকিৎসকদের উপরে কিছুটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এই চিকিৎসকদের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই।’’
সূত্রের দাবি, পুরুলিয়ায় গ্রামীণ চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। ছোটখাটো নানা রোগে ওষুধ দেওয়া, স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন দেওয়ার কাজ করেন তাঁরা। গ্রামীণ চিকিৎসকদের অনেকের দাবি, জেলায় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মহকুমা হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বহির্বিভাগে যত রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা হয়, তার চেয়ে বেশি রোগীর চিকিৎসা তাঁরাই করেন। গ্রামীণ চিকিৎসকদের সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র (পিএমপিএআই) রাজ্যের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রঙ্গলাল কুমারের দাবি, ‘‘পুরুলিয়ার ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে ধুঁকছে। বেশ কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধের মুখে। জঙ্গলমহলের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বেহাল হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে, গ্রামীণ চিকিৎসকেরাই গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অন্যতম স্তম্ভ।’’
পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘গ্রামীণ চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। পুরুলিয়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা অনেকাংশে তাঁদের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীদের কখন হাসপাতালে পাঠাতে হবে, সে বিষয়ে অভিজ্ঞতার অভাব থাকে তাঁদের একাংশের মধ্যে। তাঁরা বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েন। তাই কিছু ক্ষেত্রে রোগ জটিল আকার নেয়।’’
যদিও পিএমপিএআই-এর পুরুলিয়ার যুগ্ম সম্পাদক বিকাশ মাহাতোর দাবি, সংগঠনের সদস্যদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার এক বছরের একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা পদ্ধতি ও কোন সময়ে রোগীদের হাসপাতালে পাঠাতে হবে, তা নির্দিষ্ট ভাবে শেখানো হয়। তাঁর দাবি, ‘‘গ্রামীণ চিকিসকদের বড় অংশই অযথা ঝুঁকি না নিয়ে রোগীদের হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।’’ তবে চিকিৎসক মহলের মতে, সরকারি তরফে গ্রামীণ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা প্রয়োজন। একই দাবি অনেক গ্রামীণ চিকিৎসকেরও।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গ্রামীণ চিকিৎসকদের ছ’মাসের প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়েছে। তবে পিএমপিএআই-এর অভিযোগ, ওই প্রশিক্ষণে জেলায় মাত্র পঞ্চাশটি আসন। ফলে, কয়েক হাজার গ্রামীণ চিকিৎসককে প্রশিক্ষিত করতে অনেক সময় লাগবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কুণালকান্তি দে বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশমতো, প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়েছে।’’ জেলায় চিকিৎসকের ঘাটতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy