পুঞ্চায় স্যানিটাইজ়ার চ্যানেলের দরজা দিয়ে ঢুকছেন জনপ্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
করোনা-সতর্কতায় উৎসবের মেজাজে যেন ভাটা না পড়ে। আবার উৎসবের আতিশয্যে যেন সতর্কতায় ছেদ না পড়ে। এই দুই ভাবনা মাথায় রেখে মঙ্গলবার পুরুলিয়া জেলা জুড়ে শুরু হল হুল উৎসব। বলরামপুরে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও পুঞ্চায় অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু দু’দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। তবে অনেক জায়গাতেই খেলাধুলা হয়েছে। সেখানে সতর্কতা কতটা মানা হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
পুঞ্চায় বদড়া গ্রামের মাঠে উৎসব চত্বরকে ঘিরে বাঁশের ব্যারিকেড এবং দু’টি দরজায় ‘স্যানিটাইজ়ার চ্যানেল’ ছিল। দেখা গেল মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রতুল বসু, জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ গুরুপদ টুডু থেকে আমজনতা— সবাই ‘স্যানিটাইজ়ার চ্যানেল’ হয়েই উৎসব চত্বরে ঢুকছেন।
সুজয়বাবু জানান, ‘উৎসব চত্বরে যেই আসুন, তাঁকেই ওই স্যানিটাইজ়ার চ্যানেলের গেট দিয়ে ঢুকতে হচ্ছে। দর্শক থেকে শিল্পী— সবাই ‘মাস্ক’ ব্যবহার করছেন কি না, তা-ও নজরে রাখা হচ্ছে। মঞ্চের সামনে দর্শকদের চেয়ারও সাদা রঙের বৃত্তের মধ্যে ছিল। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘পাতা নাচের সময় তো শিল্পীদের হাতে হাত থাকবেই। দূরত্ব বিধি মানতে হলে নাচই হবে না। তবে শিল্পীরা যাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করেন, সে ব্যবস্থা ছিল।’’
জেলার অন্যত্র বিভিন্ন সংগঠনও দিনটি পালন করে। পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সিধো, কানহো ও বীরসার মূর্তিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন রেজিস্ট্রার নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনলাইনে স্বাগত ভাষণ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপককুমার কর। বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাঁওতালি লেখক মহাদেব হাঁসদা, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যোগেন্দ্রনাথ মুর্মু প্রমুখ।
কাশীপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ে অনলাইন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘বীরপূজা’— সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন কলেজের পড়ুয়ারা। অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা ছিলেন সাঁওতালি শিশু সাহিত্যে আকাদেমিপ্রাপ্ত শ্রীকান্ত সোরেন। ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন আইসি সুশীল হাঁসদা, সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রীপতি টুডু প্রমুখ। সারা ভারত জন অধিকার সুরক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে পুরুলিয়া শহর-সহ জেলার বিভিন্ন ব্লকে দিনটি পালন করা হয়।
ভারত জাকাত মাঝি পারগানা জুওয়ান মহলের উদ্যোগে নিতুড়িয়া ব্লকের আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে হুল দিবস পালিত হয়েছে। গোবাগে মূল অনুষ্ঠানটি হয়। সাঁতুড়ি ব্লকের আদিবাসীদের অস্থি বিসর্জন কেন্দ্র তথা ধর্মীয় স্থান বারণী ঘাটেও হুল দিবস পালিত হয়েছে। আদিবাসী অধিকার মঞ্চের গৌরাঙ্গডি অঞ্চল কমিটির উদ্যোগে হুল দিবস পালিত হয়। অনুষ্ঠানে আলোচনা সভার পরে হয়েছে স্থানীয় দুই দলের মধ্যে ফুটবল খেলা।
বান্দোয়ানেও বিভিন্ন সংস্থা ও ক্লাব হুল দিবস পালন করে। প্রবীণ সাহিত্যিক মহাদেব হাঁসদা বলেন, ‘‘সতর্কতা বজায় রেখে এ দিন বান্দোয়ানের বহু গ্রামে হুলদিবস উপলক্ষে আলোচনা, নাচ-গান হয়েছে। হুলদিবস উপলক্ষে বাঘমুণ্ডির রাঙ্গা ফুটবল ময়দানে ১২টি ফুটবল দলের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।’’
বলরামপুরের বনবান্ধা ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হুল উৎসবে আগত সবার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ‘মাস্ক’-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ছ’টি স্বনির্ভর দলের কাছ থেকে দু’হাজার ‘মাস্ক’ কেনা হয়েছিল। শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘সাঁওতাল নায়ক সিধো-কানহোর জীবনী আজও আমাদের উজ্জীবিত করে।’’ জেলা শাসক রাহুল মজুমদার জানান, রাজ্য সরকারের জয় জোহার প্রকল্পে আদিবাসীরা পেনশনের আবেদন জানাতে পারেন। উৎসব প্রাঙ্গণ থেকে তার আবেদনপত্র বিলি করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy