পুরুলিয়া ১ ব্লকে লাগদা এলাকায় গ্রামসভায় ক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (প্লাস) উপভোক্তাদের নামের তালিকা পাঠের জন্য গ্রামসভার বৈঠককে ঘিরে গোলমালে যুগ্ম বিডিও ও সরকারি কর্মীদের হেনস্থা করার অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে পুরুলিয়া ২ ব্লকের বেলমা পঞ্চায়েত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় দেবেন রজক, দিবাকর মাহাতো, কৈলাসচন্দ্র মাহাতো ও দুঃখভঞ্জন মাহাতোকে। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি কর্মীকে হেনস্থা করার অভিযোগে মামলা রুজু করেছে পুরুলিয়া মফস্সল থানার পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে জেল হেফাজত হয়। বৃহ্স্পতিবারের মতো শুক্রবারও জেলার কয়েকটি জায়গায় ওই তালিকা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলে। তবে এ দিন গ্রামসভা কম থাকায় অশান্তির খবর কম মিলেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পুরুলিয়া ২ ব্লকের বেলমা পঞ্চায়েতের মালথোড় হাইস্কুলে বৃহস্পতিবার গ্রামসভা ছিল। প্রাথমিক সমীক্ষার পরে তালিকায় কারা ঠাঁই পেলেন তা জানতে স্কুলের মাঠে হাজির ছিলেন অনেকে। অভিযোগ, পুরুলিয়া ২ ব্লকের যুগ্ম বিডিও চঞ্চলকুমার মণ্ডল ও পঞ্চায়েতের কর্মীরা সেখানে হাজির হলেও পঞ্চায়েত প্রধান রাজকুমার চক্রবর্তী বা উপপ্রধান সুচিত্রা মাঝি সেখানে যাননি।
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও প্রধান বা উপপ্রধান হাজির না হওয়ায় ক্ষুব্ধ মানুষজনের একাংশ যুগ্ম বিডিও-সহ সরকারি কর্মীদের দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখেন বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ বাহিনী গিয়ে তাঁদের ঘেরাও মুক্ত করেন।
বিডিও (পুরুলিয়া ২) দেবজিৎ রায় বলেন, ‘‘মালথোড় হাইস্কুলের গ্রামসভায় প্রধান বা উপপ্রধান হাজির হননি। কিছু লোকজন যুগ্ম বিডিও-সহ কর্মীদের ঘেরাও করে রাখেন। পুরো ঘটনা নিয়ে যুগ্ম বিডিও আমাকে লিখিত রিপোর্ট দিয়েছেন। ওই রিপোর্ট-সহ পুলিশকে ঘটনাটি জানানো হয়।’’ পঞ্চায়েত প্রধান রাজকুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শরীর অসুস্থ থাকায় আমি গ্রামসভায় যেতে পারিনি। তবে উপপ্রধানকে যেতে বলেছিলাম। কেন যাননি জানা নেই।’’ চেষ্টা করেও উপপুরপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বিডিও জানান, মালথোড়ের গ্রামসভা আজ শনিবার হবে।
এ দিন অবশ্য পুরুলিয়া ১ ব্লকের কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়। বৃহস্পতিবার ডুঁড়কু পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামসভায় আবাস প্লাসের তালিকায় অনেক যোগ্য লোকের নাম নেই বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বাসিন্দারা। সেই অভিযোগে এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা প্রায় ১০টা পর্যন্ত টামনা-আড়শা রাস্তা অবরোধ করেন পাঁড়রামা গ্রামের কিছু বাসিন্দা। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। পরে গ্রামবাসী একই দাবি নিয়ে ব্লক অফিসে বিডিও-র সঙ্গে দেখা করেন।
এ দিন ওই ব্লকেরই লাগদা পঞ্চায়েতের বিস্কুট কারখানা সংলগ্ন মাঠে গ্রামসভার বৈঠকে বিক্ষোভ চলে। কারা তালিকায় থাকলেন তা না জানিয়ে কারা বাদ পড়লেন, সেই নাম পাঠ করার অভিযোগে লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সেখানে উপস্থিত ওই পঞ্চায়েতের বেলকুঁড়ি ও চাকড়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষের দাবি, তাঁদের দুই গ্রাম থেকে যাঁরা এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে আবেদন করেছিলেন, তাঁদের কারও নাম তালিকায় নেই।
বেলকুঁড়ির বাসিন্দা গঙ্গা বাউরির দাবি, ‘‘আমরা সাজ জন একটি মাত্র ঘরে থাকি। অথচ আমার নাম নেই!’’ ওই গ্রামের গান্ধী বাউরিও আবেদন করে তালিকায় নাম না থাকার অভিযোগ তুলেছেন। একই অভিযোগ তুলেছেন চাকড়া গ্রামের সুরেশ মাহাতো, চায়না মাহাতো, রাজেশ মাহাতোরা। লাগদা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ময়ূরবাহন ঘোষালের দাবি, ‘‘তালিকায় থাকা নামই পাঠ করা হয়েছে। কেউ হয়তো ভুল বুঝেছেন।’’ তবে বিডিও (পুরুলিয়া ১) অনিরুদ্ধ ঘোষের দাবি, ‘‘লাগদায় গণ্ডগোলের খবর পাইনি। তবে কারও অভিযোগ থাকলে লিখিত ভাবে ব্লক প্রশাসনকে জানালে তা দেখা হবে।’’
গোলমালের জেরে বৃহস্পতিবার হুড়া ব্লকের রখেড়া-বিশপুরিয়া পঞ্চায়েতের তালিকা পাঠ স্থগিত রাখা হয়। শুক্রবারও ওই সভায় তালিকা পাঠকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ চলছে বলে খবর। বিডিও (হুড়া) ধ্রুবাঙ্কুর ঠাকুর বলেন, ‘‘ওই পঞ্চায়েতে এ দিনও বিক্ষোভ হয়েছে বলে শুনেছি।’’
অন্যদিকে প্রচার না করে গ্রামসভার বৈঠক ডাকার অভিযোগে এবং প্রকৃত দাবিদারদের প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার দাবিতে এ দিন সিপিএমের কাশীপুর পূর্ব এরিয়া কমিটি বিডিওকে স্মারকলিপি দেয়। কাশীপুরের বিডিও-র কাছে বিভিন্ন এলাকার লোকেরা তাঁদের বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে গিয়ে এ দিন তীব্র ক্ষোভ দেখান। পরে বিডিও (কাশীপুর) সুপ্রিম দাস বলেন, ‘‘অভিযোগ থাকলে তাঁরা লিখিত ভাবে জানাতে পারেন। তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ এ দিন মানবাজার ১ ব্লকে সিপিএম ও পুঞ্চা পঞ্চায়েত বিজেপির তরফে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy