Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
RG Kar Hospital Incident

আলাদা গেট নেই, প্রবেশ ‘অবাঞ্ছিতদের’

আরজি করের ঘটনায় যথেষ্ট আতঙ্কিত চিকিৎসকমহল তথা রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীরা। রাতে কর্তব্যরত অবস্থায় জেলার তিন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কতটা নিরাপদ? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের চত্বরে জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ, রবিবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের চত্বরে জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ, রবিবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম Sourced by the ABP

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
রামপুরহাট  শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৪ ০৯:২৫
Share: Save:

দিনটা ছিল ২০২১ সালের ৯ জুন। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডিউটি শেষে ফেরার পথে এক নার্সকে জাতীয় সড়ক পেরিয়ে হাসপাতালের সামনের রাস্তার একটি গলিতে এক বাইক আরোহী যুবক শ্লীলতাহানি করে। ঘটনায় ওই নার্স মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালের এমএসভিপি পলাশ দাস রামপুরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এক যুবক আরও দু’জন নার্সকে উত্ত্যক্ত করেছে। ঘটনায় নলহাটির এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। হাসপাতালের নার্সরা তার পরে হাসপাতাল চত্বরে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর আবেদন জানালে বাড়ানো হয় নজরদারি। পর্যাপ্ত আলো ও নজর ক্যামেরা বসানো হয়।

এর পরে পেরিয়ে গিয়েছে তিন বছর। ইতিমধ্যে হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার ও মেডিক্যাল পড়ুয়াদের হাসপাতাল চত্বরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। হাসপাতালের নতুন ভবন ও নতুন নার্সিং কোয়ার্টার নির্মাণ হয়েছে। কোয়ার্টারের নিরাপত্তার জন্য কর্মী নিযুক্ত হয়েছেন। তবু, কোয়ার্টার থেকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, পুরনো ভবন, সংক্রামক বিভাগে ডিউটিতে যাতায়াতে অনেক নার্স এখনও বেশ ভয় পান। এখনও হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়ায় থাকা নার্সরা তাঁদের রাতের ডিউটি-তে যান বা বাড়ি ফেরেন ভয় নিয়ে।

রামপুরহাট হাসপাতালের নার্সিং কর্মীদের একটি সংগঠনের সভাপতি ঝর্ণা দাস বলেন, “নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও কাজের জায়গায় খুন হতে হল তরুণী চিকিৎসককে। শুধু এই ঘটনা নয়, এই তো সেদিন রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নার্সিং স্টাফ থেকে চিকিৎসকদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তা হলে নিরাপত্তা কোথায়?”

হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্য কর্মীরা জানান, হাসপাতালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী নেই। কোয়ার্টার থেকে হাসপাতালে রাতের ডিউটিতে আসার পথে নিরাপত্তাকর্মী থাকেন না। অনেক জায়গায় সিসিটিভি-ও নেই। থাকলেও সেগুলি খারাপ। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেও পর্যাপ্ত সিসিটিভি নেই।

রামপুরহাট হাসপাতালের এক সিনিয়র রেসিডেন্ট মহিলা চিকিৎসকের প্রশ্ন, হাসপাতালে তাঁরা ২৪ ঘণ্টা, ৩৬ ঘণ্টা, কখনও ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ডিউটি করেন। যদি হাসপাতাল কাজের জায়গায় নিরাপত্তা না-দিতে পারে, তা হলে কাজ করবেন কী করে?’ তাঁর দাবি, ‘‘১৩ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত আছি। এই হাসপাতালে একন রোগী মৃত্যুর ঘটনায় ‘ওই মহিলা ডাক্তারকে ধর্ষণ করে দে’, পুরুষ চিকিৎসকদের খুন করে দে’ বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তা হলে আমরা কর্মস্থলে নিরাপদ কি?”

হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, রাতে অন কল ডিউটিতে আসা চিকিৎসকদের জন্য কোনও আলাদা ঘর নেই, অনেক বিভাগে মহিলা চিকিৎসকদের জন্য আলাদা বসার বা বিশ্রামের জায়গা নেই। এমনকি, মহিলাদের পৃথক শৌচালয় নেই। যা আছে তা অপরিষ্কার। ফলে মহিলাদের কোয়ার্টারে ফিরে যেতে হয়, পরে ফের কাজে যোগ দিতে হয়। হাসপাতালের ভিতরে রোগীর আত্মীয় ছাড়াও অবাঞ্ছিত লোকের প্রবেশের ক্ষেত্রে যে নিরাপত্তা থাকা দরকার, তা নেই। হাসপাতালের প্রতি ওয়ার্ডে আলাদা কোলাপসিব্‌ল গেট না থাকায় সুবিধা হয় হামলাকারীদের।

রামপুরহাট মেডিক্যালের অধ্যক্ষ করবী বড়াল বলেন, “জেলা হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত হয়েছে। আগে যে ভবন ছিল, সেখানে মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রে আরও অনেক ভবন ও নতুন পরিকাঠামো দরকার। ধীরে ধীরে তা গড়ে উঠছে। তবে, স্বাস্থ্য ভবন থেকে হাসপাতালের ভিতরে যেখানে প্রয়োজন সেখানে নজর ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ এসেছে।এমএসভিপি-র সঙ্গে কথা বলে সেগুলি বসানো হবে।” এমএসভিপি বলেন, “নিরাপত্তা বাড়ানোয় জোর দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে পরিকাঠামো বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্য ভবনে প্রস্তাব দেওয়া আছে।” (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Rampurhat Medical college Rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy