শনিবার বিষনুপুর এ সারাদিন কালো মেঘ আকাশে বেঁধে থাকলো কিন্তু বৃষ্টি নেই। চিন্তা ই কৃষক রা। ছবি শুভ্র মিত্র।
রাজ্যে বর্ষা এলেও ভারী বৃষ্টির দেখা নেই। কোথাও বীজতলা শুকোচ্ছে। কোথাও জল কিনে চাষি বীজতলা বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে কি এ বারও আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না? এই প্রশ্ন ঘুরছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার চাষিদের মধ্যে।
পুরুলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ বলতে মূলত খরিফ মরসুমের আমন চাষ। জেলার অধিকাংশ চাষি রোহিন পরবে বীজ পুণ্যাহ পালন করেন। অর্থাৎ ওই দিনে জমিতে বীজ বপনের সূচনা হয়। চাষিরা জানাচ্ছেন, রোহিন পরবের দিন জমিতে বীজ বপন করা হয়েছে বটে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এখনও চারা সে ভাবে বেরোয়নি। জেলার কিছু এলাকায় খানিকটা বৃষ্টির জল পেয়ে চারা
বেরোলেও পর্যাপ্ত জলের অভাবে বৃদ্ধি আশানুরূপ হয়নি।
পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চারা বৃদ্ধির নিরিখে অর্ধেক বীজতলা তৈরি হয়েছে।
পুরুলিয়া জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা আদিত্য দুয়ারি বলেন, ‘‘বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে ঠিকই। তবে অর্ধেক বীজতলায় চারা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। জেলায় বীজতলার পরিমাণ ৩৪,৮০০ হেক্টর। তার মধ্যে ১৭,৪০০ হেক্টরে চারার বৃদ্ধি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে অবিলম্বে ভারীর বৃষ্টি প্রয়োজন।’’
গত কয়েক বছর ধরেই বর্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় চাষও পিছিয়ে যাচ্ছে। তার ফলে মার খাচ্ছে উৎপাদন। তাই এ বারও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কাশীপুর ব্লকের পাঁড়াশোল গ্রামের চাষি অনিল হাঁসদা। তাঁর কথায়, ‘‘গতবার বীজ ফেলার পরে বৃষ্টি হওয়ায় বীজতলার সমস্যা হয়নি। কিন্তু এরপরে বৃষ্টির অভাবে বেশ খানিকটা জমিতে আর রোয়ার কাজ করতে পারিনি। চারার বয়স বেড়ে যাওয়ায় বাইদ (উঁচু) জমিতে ধানই হয়নি।’’
ওই ধান অর্ধেক বছর তাঁর সংসারে ভাতের সংস্থান করে। বাকি সময় দিনমজুরিই ভরসা। এ বার কী হবে, চিন্তায় অনিলের মতো অনেক চাষিই। আড়শার বামুনডিহা গ্রামের চাষি কৃষ্ণপদ মাহাতো জানান, হাজার তিনেক টাকার ধানবীজ কিনে বীজতলার জন্য জমিতে ছড়িয়েছিলেন। বৃষ্টির অভাবে চারা বেরোয়নি। নতুন করে ফের বীজতলা তৈরি করছেন।
বৃষ্টির মতিগতি দেখে বাঁকুড়া জেলার চাষিদের আশঙ্কা, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ভাল মাত্রায় বৃষ্টি না হলে এ বার ২ লক্ষ হেক্টর জমিতেও বোধহয় আমনের
চাষ করা যাবে না। বাঁকুড়ার জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল ফোন ধরেননি।
তবে কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যে পরিমাণ জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল, জেলায় বীজতলা সে তুলনায় করতে পারেননি চাষিরা। আবার কিছু জায়গায় বীজতলা করা গেলেও শুকিয়ে নষ্ট হয়েছে।
বিষ্ণুপুরের আঁইচবাড়ির ধান চাষি করুণা ঢক বলেন, ‘‘বিঘা প্রতি ধান চাষে সাত হাজার খরচ হত। এ বছর আরও দুই হাজার টাকার বাড়তি সেচ খরচা বিঘা প্রতি যোগ হয়েছে। পাশাপাশি, বীজের দামও কেজি প্রতি পাঁচ থেকে দশ টাকা বেড়ে গিয়েছে। বাড়তি খরচ করেও ফলন কতটা মিলবে, নিশ্চিত নই।’’ একই কথা বিষ্ণুপুরের মড়ার গ্রামের নূর ইসলামেরও।
বাঁকুড়া ১ ব্লকের চাষি নীলমাধব দত্ত, ছাতনার চাষি প্রশান্ত কর্মকারেরা বলেন, “বীজতলা শুকিয়ে গিয়েছে। অনেক টাকার বীজ নষ্ট হল। কৃষি দফতর কোনও যোগাযোগই
রাখেনি। বিকল্প চাষ কিছু করা যায় কি না, তা-ও
বুঝতে পারছি না।” (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy